বাংলাদেশি সন্দেহে ওড়িশা পুলিশ আটক করেছিল চুঁচুড়ার সুকান্তনগরের বাসিন্দা, পরিযায়ী শ্রমিক দেবাশিস দাসকে। শুক্রবার তিনি বাড়ি ফেরেন। ঘটনার জেরে আতঙ্কিত ওই যুবক বলছেন, আর ভিন্ রাজ্যে কাজ করতে যাবেন না। রবিবার সকালে তাঁকে নিয়ে মিছিল করে তৃণমূল। মিছিল থেকে বিজেপির বিরুদ্ধে বাঙালি বিদ্বেষের অভিযোগ তোলা হয়। সন্ধ্যায় তাঁর বাড়িতে যান সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের ছ’জনের প্রতিনিধি দল।
দেবাশিস বলেন, ‘‘এই শেষ। আর বাইরের রাজ্যে কাজে যাব না।’’ কী করে চলবে? তাঁর জবাব, ‘‘অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থার (অফিস-কাছারির ফায়ার অ্যালার্ম সিস্টেম) টেকনিশিয়ান হয়ে উঠেছি। নিজের রাজ্যেই কোনও ভাবে চালিয়ে নেব।’’
দেবাশিস জানান, তাঁর সঙ্গে আরও চার জন পরিযায়ী শ্রমিককে আটক করেছিল ওড়িশা পুলিশ। তার মধ্যে সুকান্তনগরে তাঁর প্রতিবেশী দীপক বিশ্বাসও ছিলেন। বছর একুশের ওই যুবকের আজ, সোমবার ফেরার কথা।
কী হয়েছিল?
দেবাশিস জানান, গত মাসে ঠিকাদার সংস্থার মাধ্যমে তিনি ও দীপক-সহ পাঁচ জন পশ্চিমবঙ্গ থেকে কাজে যান ওড়িশার ঝাড়সুকদায়। তাঁরা একটি ঘরে ভাড়া থাকতেন। গত মঙ্গলবার সকালে পুলিশ এসে তাঁদের থানায় নিয়ে যায়। জিজ্ঞাসাবাদ করে। দেবাশিসের অভিযোগ, আধার কার্ড, ভোটার কার্ড দেখালেও হেনস্থা থামেনি। বাবা-মায়ের জন্ম কোথায় জানতে চাওয়ার পাশাপাশি বাড়ির কাগজপত্রও চাওয়া হয়। দেবাশিসের কথায়, ‘‘পাসপোর্ট দেখানোয় প্রশ্ন কমে। কিন্তু কাউকে দেড়, কাউকে দু’দিনের বেশি আটকে রাখা হয়। আমাকে বুধবার রাতে ছাড়া হয়।’’
রবিবার সকালে পিপুলপাতিতে জড়ো হন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। দেবাশিসের গলায় মালা পরিয়ে দেন স্থানীয় বিধায়ক বিধায়ক অসিত মজুমদার। বুকে প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে হাসপাতাল রোড ধরে ঘড়ির মোড় পর্যন্ত মিছিল হয়। অসিতের মন্তব্য, ‘‘বাংলায় রাজনৈতিক ভাবে লড়াই করতে পারছে না বিজেপি। তাই বিজেপিশাসিত রাজ্যে বাঙালিদের উপরে নানা ভাবে নিপীড়ন করা হচ্ছে। বিজেপির এই জাতি-বিদ্বেষের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চলবে।’’ শনিবার সন্ধ্যায় দেবাশিসের বাড়িতে যান তিনি।
রাজ্য বিজেপি নেতা স্বপন পাল দেবাশিসের প্রতিবেশী। বিষয়টিতে তিনি তৃণমূলের রাজনীতি দেখছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘দেবাশিসের উপরে কী হয়েছে, জানি না। তবে, এমন কিছু ঘটে থাকলে তার দায় এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর। কারণ, তৃণমূলের আমলেই পশ্চিমবঙ্গে কাজের সঙ্কট বেশি হয়েছে। আবার, বহু বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ করেছেন।’’ রাজনীতি নিয়ে মন্তব্য করেননি দেবাশিস।
লিবারেশনের নেতা সুদর্শন বসু বলেন, ‘‘কোনও রাজনীতি নয়। এক জন জাতিবিদ্বেষের শিকার হয়েছেন। তাঁর পাশে থাকার আশ্বাস দিতে গিয়েছিলাম।’’