• গেটে ‘ফাঁকি’ দিয়ে প্রবেশ কী করে, প্রশ্ন
    আনন্দবাজার | ১৪ জুলাই ২০২৫
  • নিয়মের কড়াকড়ির অভাব নেই। আবার নিয়ম ভাঙার কিছু রাস্তাও তৈরি হয়েছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গেই। আইআইএম কলকাতার শিক্ষাঙ্গনের হস্টেলে এমবিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রের ঘরে এক তরুণীকে যৌন নিগ্রহের অভিযোগের হাত ধরে দেশের একেবারে প্রথম সারির বিজ়নেস স্কুলে বহিরাগতদের ঢোকার ব্যবস্থাটাই এ বার প্রশ্নের মুখে পড়ছে। মূল ফটকে সই না-করিয়েই এক মহিলাকে নিয়ে জনৈক ছাত্র আইআইএম ক্যাম্পাসে ঢোকেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে, শিক্ষাঙ্গনের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ফাঁক নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠছে।

    আইআইএমের শিক্ষার্থীরা সকলেই প্রাপ্তবয়স্ক। অনেক বেশি বয়সের, বিবাহিত লোকজনও কিছু কিছু শিক্ষাক্রমের পাঠ নিয়ে থাকেন। তাই সাধারণ কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মবিধির সঙ্গে আইআইএমের রীতিনীতির কিছু ফারাক আছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, পাঁচটি হস্টেলেই আবাসিকেরা অনেকটা ব্যক্তিগত নিভৃত পরিসর পান। নিজের মতো থাকেন। এমবিএ শিক্ষাক্রম থেকে শুরু করে পিএইচডি-রত পড়ুয়া বা কিছুটা অভিজ্ঞ কর্পোরেট আধিকারিকদের জন্যও আলাদা আলাদা নানা ধরনের কোর্স রয়েছে আইআইএমে। কয়েকটি হস্টেলে গবেষক বা ইতিমধ্যে চাকরিরত কর্পোরেট আধিকারিকদের জন্য সপরিবার থাকারও বন্দোবস্ত আছে। এ ছাড়াও ভিন্‌ রাজ্য বা দূর থেকে আসা শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে তাঁদের আত্মীয়-পরিজনের থাকার জন্য আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে শিক্ষাঙ্গনের ভিতরে। এর জন্য আগাম অনুমতি নিতে হয়।

    কোনও ছাত্রছাত্রীর ঘনিষ্ঠ আত্মীয় থেকে বন্ধুবান্ধব বাইরে থেকে আইআইএমের ক্যাম্পাসে ঢুকলে বা কোনও শিক্ষার্থী দু’দিন শিক্ষাঙ্গনের বাইরে কাটাতে চাইলেই কিন্তু কিছু নির্দিষ্ট বিধি মেনে চলতে হয়। নিয়মমাফিক সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীকে তাঁর ‘অতিথি’ বা গেস্টের প্রবেশাধিকারের জন্য কয়েকটি জায়গায় ইমেল করতে হয়। একটি ইমেল যাবে প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা আধিকারিকের কাছে। আর একটি সেই শিক্ষার্থীর কোর্স বা প্রোগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকের কাছে। কোনও ছাত্রছাত্রীর আত্মীয় বা বন্ধু— যাঁর ক্যাম্পাসে ঢোকার অনুমতি চাওয়া হল, তাঁকে নিজস্ব পরিচয়পত্র নিয়ে আসতে হবে। গেটে ইমেলের নথি মিলিয়ে দেখা হবে। এর পরে সংশ্লিষ্ট ছাত্র এবং তাঁর সাক্ষাৎপ্রার্থী সই করে ঢুকবেন, এটাই দস্তুর। অনুমতি ছাড়া এমন কোনও অতিথি কিন্তু ক্যাম্পাসে থাকতে পারবেন না। হস্টেলেও অতিথিদের রাত্রিযাপনের অধিকার নেই। তবে ক্যাম্পাস এবং হস্টেলে পরিণত বয়সের শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত পরিসরের সীমানাটুকুর সকলেই মর্যাদা দেন।

    অবশ্য ক্যাম্পাসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে পরিচিত কিছু সূত্র বলছেন, কিছু ক্ষেত্রে ফটকে অভ্যাগতকে সই না-করিয়েই ভিতরে ঢোকার নজিরও রয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, সাম্প্রতিক অভিযোগটির ক্ষেত্রে অভিযুক্ত তাঁকে কাউন্সেলিং করাতে এক জন আসছেন বলে ইমেল করেছিলেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখার অবকাশ আছে বলে অনেকেরই অভিমত। আইআইএমের এক প্রাক্তনী আবার বলছেন, “কিছু ক্ষেত্রে আমরা ৪৮ ঘণ্টার বেশি বা গোটা সপ্তাহান্ত বাইরে থাকব বলে বেরিয়ে গেলেও ক্যাম্পাসে সবটা জানাতাম না। হয়তো কিছু ক্ষণের জন্য বেরোচ্ছি বলে শুক্রবার গেটে সই করে বেরোলাম। ফিরলাম সোমবার ক্লাসের আগে। দু’দিন বাদে ফিরলে সই করার খাতা আলাদা। কিন্তু একটু ম্যানেজ করে অন্য খাতাটিতে পুরনো তারিখেও কেউ কেউ সই করতেন। আমরা অনেকে এটুকু নির্দোষ ছাড় বলেই দেখতাম।” ভিতরে কাউকে নিয়ে ঢোকার সময়েও নিয়ম ভাঙার কিছু বিক্ষিপ্ত নমুনা কখনও সামনে এসেছে বলে সূত্রের খবর। কিন্তু নিয়ম ভাঙা আর নিয়ম ভেঙে গুরুতর অপরাধ ঘটানোয় দুস্তর ফারাক রয়েছে।

    আবার সাধারণত দেখেশুনে বাইরের কাউকে ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হলেও এক বার আইআইএমের ফটকটুকু পেরোলে কে কোথায় গেলেন, তা নিয়ে কেউ বড় একটা মাথা ঘামান না। হস্টেলেও আলাদা করে কে কোথায় ঢুকছে, সেই নজরদারি সাধারণত প্রয়োজনীয় বলে মনে করা হয় না। রাতের দিকেও বিভিন্ন হস্টেলের মধ্যে চলাফেরায় বিশেষ কড়াকড়ি নেই। শুধু রাত ১১টার পরে ক্যাম্পাসের মেন গেট বন্ধ হয়। তখন অ্যাপে খাবার সরবরাহকারী কেউ এলেও সংশ্লিষ্ট ছাত্র বা ছাত্রী গেটে এসে খাবার নিয়ে যান। তবে কোনও পড়ুয়া সন্ধ্যায় বা সকালে বেরিয়ে বেশি রাতে ফিরলেও গেটে সমস্যা হয় না। আইআইএমের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র মনে করেন, “কোনও ভাবে নিয়ম ভেঙে অপরাধের একটি ঘটনা ঘটলেও ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক মর্যাদাপূর্ণ পরিবেশ এবং শিক্ষার্থীদের প্রতি পারস্পরিক সম্মান লঙ্ঘন হতে দেওয়া যায় না।”
  • Link to this news (আনন্দবাজার)