সংগ্রাম মুখার্জি: ১৯৯৯ সালের কথা। সেবার টিএফএ থেকে ইস্ট বেঙ্গলে নাম লেখাই। তখন কলকাতা লিগের সে কী উন্মাদনা। সকাল থেকেই ক্লাবের বাইরে টিকিটের জন্য সমর্থকদের লাইন। রীতিমতো গমগম করত ময়দান। আর ফুটবলারদের মধ্যেও বাড়তি আবেগ কাজ করত। শুধু বড় ম্যাচ নয়, ছোট ম্যাচও তখন হাল্কাভাবে নেওয়ার উপায় ছিল না। কারণ, কোনও ছোট টিমের বিরুদ্ধে হারলে বা ড্র করলে সমর্থকদের রোষের মুখে পড়তে হতো। ২০০০ সালের একটা ম্যাচের কথা খুব মনে পড়ছে। এক ছোট টিমের সঙ্গে ড্র করে ইস্ট বেঙ্গল। আর তাতে অনুরাগীদের কী রাগ! রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত ক্লাব তাঁবুতে আটকে আমরা। কিন্তু এখন সেই উন্মাদনা কোথায়? কলকাতা লিগ রীতিমতো জৌলুসহীন, যা দেখে খুবই কষ্ট হয়। চলতি লিগে নজর রাখুন। ম্যাচ জিততে খাবি খাচ্ছে কলকাতার তিন প্রধান। এই গয়ংগচ্ছ ভাব মোটেও ফুটবলের ভালো বিজ্ঞাপন নয়।
মোবাইলের যুগে এমনিতেই তরুণ প্রজন্ম মাঠে কম যায়। তারপর এখন কলকাতা লিগের বেশিরভাগ ম্যাচ জেলাতে হয়। তাই গ্যালারি ভরে না। কলকাতা লিগের উত্তেজনা হারানোর এটা অন্যতম কারণ। তারপর আবার বড় টিমগুলো সিনিয়র প্লেয়ারদের খেলায় না। এতে জুনিয়ররা সুযোগ পাচ্ছে ঠিকই। কিন্তু সমর্থকদের আকর্ষণ কমছে। আমার মতে, অন্তত পাঁচ জন সিনিয়র প্লেয়ারকে ঘরোয়া লিগে খেলানো উচিত। কলকাতা লিগের জৌলুস ফেরাতে বড় টিমগুলিকে বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে। মোদ্দা কথা, আগের ফরম্যাটে লিগ ফিরলেই খুশি হব। এই প্রতিযোগিতা একটা সময় ভারতীয় ফুটবলের সাপ্লাই লাইন ছিল। কত বড় বড় ফুটবলার ময়দান থেকে উঠে এসেছে। তাই এই লিগকে বাঁচাতেই হবে।
আর একটা ব্যাপার আমি উল্লেখ করতে চাই, এজেন্টরাজও কিন্তু ভারতীয় ফুটবলের ক্ষতি করছে। কোনও প্লেয়ার কলকাতা লিগে ভালো খেলেও বড় দল পাচ্ছে না। কারণ, তার এজেন্ট নেই। ফলে ক’দিন পর তার ঠিকানা খেপের মাঠ। এভাবেও অনেক প্রতিভা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এজেন্টরাজ শেষ না হলে সমস্যা আরও বাড়বে। এখন ভূমিপুত্র খেলানোর ব্যাপারে কড়াকড়ি করা হয়, যা নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ। কিন্তু তাদের রক্ষাও তো করতে হবে। তিন মাসের ঘরোয়া লিগের পর তাদের খবর কে রাখে? আর ইউথ ডেভেলপমেন্ট নিয়ে সবাই কথা বলে। কিন্তু আপশোস, তা নিয়ে কাজ আর হয় না। যুব ফুটবলাররা উঠে না আসলে ভূমিপুত্র খেলানোর উদ্দেশ্যই নষ্ট হয়ে যাবে। এই ব্যাপারে জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন। তবেই কলকাতা ফুটবলের প্রসার ঘটবে।