আরজি কর দুর্নীতি মামলায় সন্দীপ সহ পাঁচ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জগঠন
দৈনিক স্টেটসম্যান | ১৪ জুলাই ২০২৫
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে আর্থিক দুর্নীতির মামলায় প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ সহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে আলিপুর সিবিআই আদালতে চার্জ গঠন হল। সিবিআইয়ের দায়ের করা মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪২০ (প্রতারণা), ৪০৯ (বিশ্বাসভঙ্গ), ৪৬৭ ও ৪৬৮ (জালিয়াতি) ধারার পাশাপাশি দুর্নীতি দমন আইনের ৭ নম্বর ধারাতেও চার্জ গঠন করা হয়েছে। বিচারপর্ব শুরু হবে আগামী ২২ জুলাই থেকে।
কলকাতা হারকোর্টের নির্দেশে এই মামলার তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। তাদের জমা দেওয়া চার্জশিটে সন্দীপ ঘোষ ছাড়াও অভিযুক্ত হিসেবে নাম রয়েছে আফসর আলি, বিপ্লব সিংহ, সুমন হাজরা এবং আশিস পাণ্ডের। পাঁচ অভিযুক্তই বর্তমানে জেলবন্দি। তদন্তে উঠে এসেছে, আরজি কর হাসপাতালে দীর্ঘ তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনা ও টেন্ডার বরাদ্দে একাধিক আর্থিক অনিয়ম হয়েছে।
আদালত সূত্রে খবর, আগামী ২২ জুলাই প্রথম সাক্ষী হিসেবে তলব করা হয়েছে দুর্নীতির অভিযোগকারী দেবল ঘোষকে। প্রসঙ্গত, অভয়া কাণ্ডের পর আর জি কর কাণ্ডের সময় সন্দীপের বিরুদ্ধে দেদার দুর্নীতির অভিযোগে সরব হন আর জি করের প্রাক্তন ডেপুটি সুপার আখতার আলি। পরবর্তীতে তদন্ত শুরু করে সিবিআই। তবে ইডি তদন্তও চেয়েছিলেন তিনি। তবে এই ঘটনার অনেক আগেই আর জি করে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে মামলা দায়ের করেছিলেন দেবল ঘোষ। অভয়া কাণ্ডের পর সেই মামলার তদন্ত শুরু করে সিবিআই।
হাসপাতালের প্রাক্তন ডেপুটি সুপারের অভিযোগ, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ‘ঘনিষ্ঠ’দেরকে টেন্ডার পাইয়ে দিতে একাধিকবার নিয়মভঙ্গ করেছেন। সেই তালিকায় সন্দীপ ঘোষের নামই সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ২৯ নভেম্বর সিবিআই আলিপুর আদালতে এই মামলার চার্জশিট জমা দেয়। প্রথম গ্রেপ্তার হন প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ, যাকে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পর সিবিআই হেফাজতে নেয়। পরে গ্রেপ্তার করা হয় আফসর, বিপ্লব ও সুমনকে। আশিস পাণ্ডে ছিলেন এই মামলার পঞ্চম এবং শেষ গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তি।
এদিকে, আরজি কর হাসপাতালের সেমিনার হল থেকে গত বছর ৯ আগস্ট এক চিকিৎসক-পড়ুয়ার মৃতদেহ উদ্ধারের পর নতুন করে চাঞ্চল্য ছড়ায়। সেই ঘটনায় ধর্ষণ এবং খুনের অভিযোগে গ্রেপ্তার হন সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়। তাঁকে পরে নিম্ন আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে। সেই মামলায় তথ্য প্রমাণ লোপাটের অভিযোগে সিবিআই প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং তৎকালীন টালা থানার ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকে হেফাজতে নেয়। পরে তাঁরা জামিনে মুক্তি পান, তবে দুর্নীতির মামলায় সন্দীপ ঘোষ এখনও জেলবন্দি। এই মামলার বিচার শুরুর আগেই ফের একবার আলোচনার কেন্দ্রে আরজি কর হাসপাতালের প্রশাসনিক অনিয়ম ও দুর্নীতির ইতিহাস।