বিজেপিশাসিত একাধিক রাজ্যে বাংলাভাষী শ্রমিকদের উপর ‘আক্রমণের’ ঘটনা প্রকাশ্যে এনে গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই সরব তৃণমূল। বুধবার এ নিয়ে পথে নামতে চলেছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার শাসকদলের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হল, কলকাতার ওই মিছিলে মমতার সঙ্গে থাকবেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
কলজে স্কোয়্যার থেকে শুরু হয়ে মিছিল পৌঁছবে ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিংয়ে। মিছিল শেষে বক্তৃতাও করার কথা মমতার। বলতে পারেন অভিষেকও। আগামী সোমবার (২১ জুলাই) তৃণমূলের বার্ষিক সমাবেশ। তার পাঁচ দিন আগে বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাভাষীদের বাংলাদেশি বলে দাগিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে মমতা এবং অভিষেকের রাস্তায় নামা ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই মনে করছেন অনেকে। রাজনৈতিক মহলের অনেকের বক্তব্য, এই বিষয়ে ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকেও মমতা-অভিষেক রাজনৈতিক কথা বলতে পারতেন। কিন্তু কাছাকাছি সময়ে বার্ষিক সভা থাকলেও মমতা এই ঘটনাকে পৃথক ভাবেই দেখতে এবং দেখাতে চাইছেন বলে অভিমত অনেকের। যার সঙ্গে জুড়ে রয়েছে গত কয়েকটি নির্বাচনে তৃণমূলের নেওয়া ‘বাঙালি অস্মিতার লাইন’।
২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে ‘বাংলা ও বাঙালি’ ছিল তৃণমূলের অন্যতম মূল স্লোগান। যার নেপথ্যে কাজ করেছিল পরামর্শদাতা সংস্থা আইপ্যাকের সমীক্ষা থেকে উঠে আসা নির্যাস এবং পরামর্শ। মূল স্লোগান ছিল— ‘বাংলা নিজের মেয়েকে চায়’। সমান্তরাল ভাবে বিজেপি নেতাদের ‘বহিরাগত’, ‘বাংলা-বিরোধী’ বলে আখ্যান তৈরি করেছিল জোড়াফুল শিবির। সেই স্লোগান তৈরির সঙ্গে পুরোদস্তুর জুড়ে ছিলেন অভিষেকও। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটেও তৃণমূলের স্লোগান ছিল—‘জনগণের গর্জন, বাংলা বিরোধীদের বিসর্জন’। সেখানেও অভিষেকের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। সেই সূত্রেই মনে করা হচ্ছে, মমতা এবং অভিষেকের একসঙ্গে রাস্তায় নামা আসলে ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের ভাষ্য তৈরির নান্দীমুখ ঘটাতে চলেছে।
এ বছর ২১ জুলাইয়ের প্রাক্কালে মমতা-অভিষেকের যুগলবন্দির ছবিকে আরও একটি দিক থেকে ব্যাখ্যা করছেন তৃণমূলের অনেকে। তা হল, এক বছর আগে ২১ জুলাইয়ের বার্ষিক সভার আগে জল্পনা তৈরি হয়েছিল মঞ্চে অভিষেকের থাকা, না-থাকা নিয়ে। সেই পর্বে শাসকদলের মধ্যে সর্বাধিক আলোচ্য বিষয় ছিল সর্বোচ্চ নেতৃত্বের ভিতরের ‘দূরত্ব’। যদিও বিদেশ থেকে চোখের চিকিৎসা করিয়ে ২০ জুলাই কলকাতায় ফিরে বার্ষিক সভায় যোগ দিয়েছিলেন অভিষেক। তার পরেও অবশ্য ‘দূরত্ব’ জল্পনা জিইয়েই ছিল। তবে বিধানসভা ভোটের যখন এক বছরও বাকি নেই, তখন সর্বোচ্চ নেতৃত্বের ‘ঐক্য’কে দলের অভ্যন্তরীণ সমীকরণের জন্যও ‘উল্লেখযোগ্য’ বলে মনে করছেন প্রথম সারির নেতাদের অনেকেই।
মমতা এবং অভিষেক শেষ বার যৌথ ভাবে মিছিলে হেঁটেছেন গত বছর ৭ মার্চ। নারী দিবসের প্রাক্কালে সেই মিছিল হয়েছিল মৌলালি থেকে ডোরিনা ক্রসিং পর্যন্ত। ১৬ মাস পর ফের একসঙ্গে মিছিলে হাঁটতে চলেছেন মমতা এবং অভিষেক।