মাত্র এক দিন সময়! আজও দুঃখ যায়নি ' অপারেশন সিঁদুর'-এর বীর সৈনিক শুভজিতের, কী তাঁর দুঃখ? ...
আজকাল | ১৫ জুলাই ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: 'অপারেশন সিঁদুর'চলাকালীন পাকিস্তানকে 'দুরমুশ' করে দেওয়ার জন্য মাত্র একদিন সুযোগ পাওয়ার দুঃখ আজও যায়নি সীমন্ত সুরক্ষা বাহিনী বা বিএসএফের ১২৫ ব্যাটেলিয়ানের কনস্টেবল তথা বহরমপুর শহরের কাশিমবাজার এলাকার বাসিন্দা শুভজিৎ রায়ের। জম্মু-কাশ্মীরে পহেলগাঁওয়ে বৈসারন উপত্যকায় নিরীহ পর্যটকদের উপর পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী হামলার জবাব দেওয়ার জন্য এবছরের মে মাসে ভারতীয় সেনাবাহিনী 'অপারেশন সিঁদুর' নামে পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী কাঠামো ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য অভিযান শুরু করে।
৭ মে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে হামলা চালিয়ে ভারতীয় বিমান বাহিনীর সদস্যরা নিরাপদে ফিরে আসেন। এর পরের দিন থেকেই ভারত-পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর গোলাগুলির লড়াই শুরু হয়। ভারতীয় সেনাবাহিনীর পরাক্রমশালী সেই হামলায় পাকিস্তানের একাধিক কাঠামো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
অপারেশন সিঁদুরে দেশের হয়ে পাকিস্তানি সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে লড়াই করার জন্য সোমবার মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে বিএসএফ জওয়ান শুভজিৎ রায়কে বিশেষ সম্বর্ধনা জানানো হয়। এদিনের সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুর্শিদাবাদের জেলা শাসক রাজর্ষি মিত্র-সহ প্রশাসনের অন্য সমস্ত শীর্ষ আধিকারিকরা।
আরও পড়ুন: ‘বাবা-মা ঘুমোচ্ছে, এই সুযোগ’, একরত্তি মুহূর্তে ফোন নিয়েই যা করে বসল, ঘুম ভেঙে হার্ট অ্যাটাকের যোগাড়
জম্মুর সাম্বা এলাকায় পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এবং সেদেশের সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াই করার অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে বহরমপুরের শুভজিৎ রায় বলেন,' পহেলগাঁওতে সন্ত্রাসবাদী হামলার পরেই আমরা আন্দাজ করেছিলাম বড় কিছু ঘটনা ঘটতে চলেছে। আমাদের কমান্ডিং অফিসাররা যেকোনও পরিস্থিতির জন্য আমাদের তৈরি থাকতে বলেছিলেন। অফিসারদের নির্দেশ মতো আমরা ৮-১০ জন পহেলগাঁওতে হামলার পর থেকেই সমস্ত অস্ত্র-বারুদ গাড়িতে রেখে তৈরি হয়েছিলাম।' ভারতীয় সেনাবাহিনীর তরকে অপারেশন সিঁদুরে অংশগ্রহণ করার অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে গিয়ে শুভজিৎ বলেন,'৮-৯ তারিখের মধ্যবর্তী রাতে আমাদের কমান্ডিং অফিসার দ্রুত তৈরি হয়ে সাম্বা ফ্রন্টে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেন। যুদ্ধক্ষেত্রে আমরা বারবার নিজেদের অবস্থান বদলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর উপর মর্টার দিয়ে হামলা করছিলাম। তবে তার আগে থেকেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বিনা প্ররোচনায় আমাদের দিকে ক্রমাগত গুলি বর্ষন করে চলেছিল।' শুভজিৎ বলেন, 'ভারতীয় সেনাবাহিনীও পাকিস্তানের গোলাগুলির যোগ্য জবাব দিচ্ছিল। সেই সময় সাম্বা এলাকায় একটি পয়েন্ট থেকে পাকিস্তানিদের গোলাগুলি খুব বেশি চলছিল। সিনিয়র অফিসাররা পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদীদের ওই অংশের যথাযথ অবস্থান আমাদের বলে দেওয়ার পরই আমরা সেখানে ঘাতক একটি হামলা চালাই। পরের দিন জানতে পারি আমাদের হামলায় ৭-৮ জন পাকিস্তানি সন্ত্রাসবাদী মারা গিয়েছে। আমাদের মুখোমুখি হতে না পেরে ওই সেক্টরে পাকিস্তানি রেঞ্জার্সদের যে জওয়ানরা ছিল তারা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। গত ২০ দিন আগে আমি ছুটিতে বাড়ি এসেছি। শুনেছি এখনও পাক রেঞ্জার্সরা ওই পোস্টে ফিরে যেতে পারেনি। সেটির এতই খারাপ অবস্থা আমরা করে দিয়েছি।' ভারতীয় সীমান্ত বাহিনীর কনস্টেবল শুভজিত বলেন, 'পাকিস্তানিদের গোলাগুলিতে ভারতের কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি চেয়েছিলাম আরও দু-তিন দিন এই যুদ্ধ চলুক। তাহলে পাকিস্তানকে আমরা আরও 'বরবাদ' করে দিতাম। একদিনের যুদ্ধে আমরা পাকিস্তানের যা ক্ষয়ক্ষতি করেছি তা পূরণ করতে তাদের বহুবছর সময় লাগবে।'
জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে 'অপারেশন সিঁদুর' চলাকালীন সময়ে যে সমস্ত ভারতীয় জওয়ান পরাক্রমের সঙ্গে পাকিস্তানের মোকাবিলা করেছে তাদের একটি তালিকা বিভিন্ন জেলা প্রশাসনকে পাঠানো হয়েছে। সেই তালিকা থেকে এদিন বহরমপুরের বাসিন্দা শুভজিৎকে তাঁর বীরত্বের জন্য প্রশাসনের তরফ থেকে সম্বর্ধনা জানানো হয়। অনুষ্ঠানে শুভজিৎ নিজের স্ত্রী ও ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে জেলা প্রশাসনিক ভবনে এসেছিলেন।
শুভজিতের স্ত্রী রিয়া রায় বলেন,' আমার স্বামীর বীরত্বে আমি অত্যন্ত গর্বিত। যুদ্ধ যখন শুরু হয়েছিল একটু ভয় পেয়েছিলাম। কিন্তু শুভজিৎ আমাকে বারবার শক্ত থাকতে বলেছিল। তবে 'অপারেশন সিঁদুর' চলাকালীন সময়ে শুভজিৎ বারবারই আমাকে বলত ভারতীয় সেনাবাহিনীর ক্ষতি করা কারও পক্ষে সম্ভব নয়।'
প্রসঙ্গত, এই সংঘর্ষে ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর একাধিক ঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়। ধংস হয়ে যায় বিমানবন্দরের রানওয়ে ও অন্যান্য কাঠামো। উপগ্রহ চিত্র মারফত যা বিশ্বের সামনে তুলে ধরে ভারতীয় সেনাবাহিনী। বিমানবাহিনীর পাশাপাশি এই সংঘর্ষে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বিএসএফ। পাকিস্তানের দিক থেকে আসা গোলাগুলির জবাবে বিএসএফ পাল্টা জবাব দেয়। বিএসএফের হামলায় গুড়িয়ে যায় পাকিস্তানের সেনাছাউনি। তৈরি ছিল নৌবাহিনীও। সঙ্কেত পেলেই তারা শুরু করত হামলা। করাচি বন্দরে এমন অবস্থা হয় যে পাকিস্তানের যুদ্ধজাহাজগুলি ভারতীয় নৌবাহিনীর ভয়ে বন্দরের আরও বেশি ভিতরে ঢুকে যায়।