যেন সিনেমার দৃশ্য! ইউনিফর্ম পরে রাস্তার মাঝেই চলছে লাথালাথি, চুল ধরে টানাটানি, মাটিতে ফেলে ধুমাধুম ঘুঁষি, হাততালি দিলেন বাকিরা...
আজকাল | ১৫ জুলাই ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: ঠিক যেন সিরিয়াল বা সিনেমার দৃশ্য। রাস্তায় ভর্তি লোক। তার মাঝেই একদল ছাত্রী স্কুলের পোশাকে পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে হাতাহাতিতে ব্যস্ত। একজন আরেকজনের চুল ধরে টানছে, আবার কেউ বা প্রতিদ্বন্দ্বীর দিকে সপাটে লাথি ছুঁড়ছে। মাঝে মাঝে তাদের মুখ থেকে যে ধরনের কথা উচ্চারিত হচ্ছে তাতে কিছুতেই মনে হবে না এরা কিছুক্ষণ আগে একসঙ্গে এক ক্লাসে বসে লেখাপড়া করছিল। বরং ভুল হতে পারে এইভেবে যে এরা বোধহয় পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে শত্রুতা করে আসছে। ঘটনাটি ঘটেছে উত্তরবঙ্গের ধূপগুড়ি ব্লকের ঝাড় আলতা ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের ডাউকিমারিতে।
জানা গিয়েছে, স্কুলে বেঞ্চে বসা নিয়ে স্থানীয় একটি স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রীদের মধ্যে যে বচসা হয়েছিল তারই করুণ পরিণতি এই হাতাহাতি। ঘটনাটি ঘটেছে গত সপ্তাহের শনিবার বিকেলে। ওইদিন অন্যান্য দিনের মতো ছাত্রীরা স্কুলে আসে এবং ক্লাসরুমের বেঞ্চিতে বসে। এরপরেই লেগে যায় গোলমাল। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বেঞ্চির জায়গা নিয়ে গোলমাল বাঁধে। ওইদিন যে আগে আসে সে তার পছন্দের জায়গা দখল করে। আবার সেই জায়গায় যে আগেরদিন বসেছিল সে পরেরদিন এসে যখন বসতে যায় তখন আগে থেকে বসে থাকা ছাত্রী তাকে বাঁধা দিতে যায়। এরপর ক্লাস শুরু হয়ে গেলে সাময়িক থামলেও ভিতরে ভিতরে একজন অপরজনের প্রতি গর্জাতে থাকে। কিন্তু সমাধানের জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষকে কেউ কিছু জানায়নি।
আরও পড়ুন: কুঁড়ে ঘরে সারাক্ষণ ফোঁস ফোঁস শব্দ, মাটি খুঁড়তেই একে একে যা বেরিয়ে এল, এখন আতঙ্কে গৃহবন্দি গ্রামবাসীরা
বিস্ফোরণটা হয় বাইরে এসে। বিবাদমান জনা দশেক ছাত্রী এরপর স্কুলের বাইরে বেরিয়ে প্রকাশ্য রাস্তায় প্রথমে অল্প এবং এরপর তুমুল বচসায় জড়িয়ে পড়ে। বচসা গড়ায় হাতাহাতিতে। এরপর রাস্তার মাঝেই একজন আরেকজনের উপর চড়াও হয়। কিল, চড় ও লাথি চালাচালির সঙ্গে একজন আরেকজনের চুল ধরে টানতে থাকে। টানের চোটে কেউ কেউ রাস্তাতেই শুয়ে পড়ে। সঙ্গে অবশ্যই ছিল নানারকম ভাষার ব্যবহার। পিচের রাস্তায় শুইয়ে এক ছাত্রী আরেক ছাত্রীকে বলছে ভুল স্বীকার করতে। নিচে পড়ে থাকা সেই ছাত্রী আবার চেষ্টা করছে চুল ছাড়িয়ে উঠে এসে প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রীকে পেড়ে ফেলার। এই দৃশ্য দেখে থমকে যান এলাকার বাসিন্দারা।
তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ আবার এগিয়ে আসেন বিবাদ মিটিয়ে শান্ত করতে। কিন্তু কেউই বিনা যুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বীকে ছাড়তে রাজি হয়নি। ফলে বাসিন্দাদের সুপরামর্শ তাদের কানে ঢোকেনি। 'মজা' দেখতে রীতিমতো ভিড় জমে যায় আশেপাশে। নিচু ক্লাসের ছাত্রীরা উঁচু ক্লাসের ছাত্রীদের এহেন আচরণে রীতিমতো অবাক হয়ে যায়। জানা গিয়েছে, বেশ কিছুক্ষণ এই 'যুদ্ধ' চলার পর অবশেষে ছাত্রীরা ক্লান্ত হয়ে থেমে যায়। ঘটনার ছবি মোবাইলে তুলে নেন কেউ কেউ।
বিষয়টি জানাজানি হলে খোঁজ নিয়ে অস্বস্তিতে পড়ে যান স্কুল কর্তৃপক্ষ। স্কুলের বাইরে হলেও ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা তাঁদের স্কুলেরই ছাত্রী। প্রথমদিকে স্কুলের কেউ কেউ বলতে থাকেন, বিবাদমান পড়ুয়ারা তাঁদের স্কুলের নয়। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে হৈচৈ হওয়ার পর তাঁরা স্বীকার করেন এরা তাঁদের স্কুলেরই ছাত্রী। প্রধানশিক্ষক রামকৃষ্ণ রায় জানান, জায়গায় বসা নিয়ে ঝামেলা এবং তার থেকে বাইরে গিয়ে মারামারি হয়েছে। স্কুলের ভিতরে হলে স্কুল কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব নিতে পারতেন। কিন্তু সেটা হয়নি। সোমবার অভিযুক্ত ছাত্রীদের অভিভাবকদের ডেকে পাঠিয়ে আটজন ছাত্রীকে সাময়িক সাসপেন্ড করা হয়েছে বলে প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন।