• ‘ছেলে পুলিসকে খবর দিচ্ছে বলতেই ফোন কেটে দিল সিবিআই অফিসার’, টার্গেট প্রবীণরা, আবাসনে সচেতনতা সভা বারাকপুর কমিশনারেটের
    বর্তমান | ১৫ জুলাই ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বরানগর: ‘আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে কয়েক কোটি টাকা অবৈধভাবে লেনদেনের অভিযোগ। মানি লন্ডারিংয়ের মামলা হয়েছে। দিল্লির ইডি অফিস থেকে বলছি।’ কলটি শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবার ফোন। এবার একজন সিবিআই অফিসার। মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিল বৃদ্ধের। আবার বেজে উঠল মোবাইল। এবার নিজে ধরতে সাহস পেলেন না। ছেলেকে দিলেন। ছেলে কিছু একটা আন্দাজ করে বললেন ‘ ঠিক আছে আমরা পুলিসে যোগাযোগ করছি।’ এরপর এরকম ফোন আর আসেনি। এই অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন অবসরপ্রাপ্ত এক ইঞ্জিনিয়ার। 

    এবার বলতে উঠলেন বর্ষীয়ান এক সরকারি কর্মী। বললেন, ‘একদিন একটি ফোন এল। বলল সরকারি জায়গায় টাকা বিনিয়োগ করলে সুদ কম পাবেন। বলে নামকরা একটি বেসরকারি সংস্থার নাম উল্লেখ করল। শেয়ার কিনলে মোটা টাকা রিটার্নের লোভ দেখিয়ে একটি অ্যাকাউন্টে পাঠাতে বলল টাকা। বলে ব্যক্তিগত একটি অ্যাকাউন্ট নম্বর দিল। বুঝলাম কিছু একটা গন্ডগোল আছে। নম্বরটি ব্লক করে দিলাম।’ দু’জনের কথা শোনার পর পুলিস আধিকারিক বললেন, ‘জোর বাঁচা বেঁচেছেন। কান ঘেঁষে বেরিয়ে গিয়েছে বিপদ। এই সচেতনতা বোধেরই প্রয়োজন সবথেকে বেশি।’

    বারাকপুর কমিশনারেট সাইবার প্রতারণার বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে আবাসনগুলিতে শিবির করছে। একটি আবাসনের দুই প্রবীণ তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন রবিবার। সেখানে বারাকপুর সাইবার থানার ইন্সপেক্টর দেবাংশু বসাক ও অন্যান্য পুলিস আধিকারিকরা মানুষের অভিজ্ঞতার কথা শুনেছেন। পাশাপাশি জালিয়াতির নয়া ধরণগুলি নিয়ে আলোচনা করেছেন। শোনার পর স্তম্ভিত বর্ষীয়ান নাগরিকরা। 

    পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, গত দু’সপ্তাহে তিনটি পৃথক ঘটনায় কমিশনারেট এলাকা থেকে প্রায় চার কোটি টাকা জালিয়াতি হয়েছে। বেলঘরিয়া থানা এলাকার এক অবসরপ্রাপ্ত সরকারি ইঞ্জিনিয়ারকে ডিজিটাল অ্যারেস্টের ভয় দেখিয়ে এক কোটি ৫৫ লক্ষ টাকা প্রতারণা করা হয়েছে। এর পাশাপাশি দমদম থানা এলাকার এক অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ক আধিকারিক দম্পতিকেও ডিজিটাল অ্যারেস্টের ভয় দেখিয়ে প্রায় এক কোটি প্রতারণা করা হয়েছে। এছাড়া দমদম থানা এলাকার নাগেরবাজারে নামী একটি সংস্থায় বিনিয়োগের টোপ দিয়ে এক ব্যক্তির কাছ থেকে এক কোটি ৩০ লক্ষ টাকা প্রতারণা করা হয়েছে। 

    পুলিসের বক্তব্য, প্রতারকদের টার্গেট মূলত অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী ও ব্যবসায়ীরা। তাঁদের অধিকাংশ আবাসনে থাকেন। ছেলেমেয়ে থাকেন বিদেশে বা অনত্র। প্রবীণ মানুষদের মেলামেশার পরিসর ছোট। ডিজিটাল প্রতারণা সম্পর্কে ধারণা কম। তাঁদের সচেতন করতে কমিশনারেট লিফলেট বিলি, মাইকিং, ব্যানার টাঙিয়ে প্রচার করছে। পাশাপাশি বড় আবাসনগুলিতে সচেতনতা বৃদ্ধির শিবির করার পরিকল্পনা নিয়েছে। আবাসন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছে পুলিস। পাশাপাশি কমিশনারেট জানিয়েছে, কোনও আবাসন চাইলে থানা বা সাইবার থানায় সরাসরি গিয়ে বা মেল করে শিবির করার আবেদন জানাতে পরে। তখন আলোচনা সভার উদ্যোগ নেওয়া হবে। বারাকপুরের ডিসি (ডিডি) ও সাইবার থানার আধিকারিক চারু শর্মা বলেন, ‘সাইবার অপরাধ ঠেকাতে আবাসন সহ সমাজের সর্বস্তরে সচেতনতা ও জন জাগরণের সমস্তরকম পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’ পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, সাইবার প্রতারকরা দেশে ও বিদেশে জালিয়াতির টাকা পাচার করছে। তদন্তে উঠে এসেছে, দুবাই, কম্বোডিয়া, তাইওয়ান, মায়ানমার, ভিয়েতনামের মতো দেশে জালিয়াতির টাকা উইথড্র করছে প্রতারকরা।
  • Link to this news (বর্তমান)