বাঙালি হেনস্থার প্রতিবাদে মিছিল, মমতার সঙ্গে থাকবেন অভিষেকও
দৈনিক স্টেটসম্যান | ১৫ জুলাই ২০২৫
বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাঙালি শ্রমিকদের হেনস্থার অভিযোগ উঠছে লাগাতার। এবার আর সমাজমাধ্যমে অথবা সাংবাদিক বৈঠক করে প্রতিবাদ নয়, আগামীকাল, বুধবার রাজপথে নামবেন খোদ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে থাকবেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ও। মঙ্গলবারে তৃণমূলের এই মহামিছিলে নেতৃত্ব দেবেন খোদ দলনেত্রী মমতা। বেলা ১টায় কলেজ স্কোয়ার থেকে শুরু হয়ে এই মিছিলটি শেষ হবে ডোরিনা ক্রসিংয়ে। এই মিছিলে হাওড়া, ভাঙড়, দমদম ও সল্টলেকের তৃণমূলের নেতাকর্মী-সমর্থকরা শামিল হবেন বলেই জানিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।
এখানেই শেষ নয়, ওই দিন দুপুর দু’টো থেকে জেলায় জেলায় প্রতিবাদ কর্মসূচিও হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। রবিবার সাংবাদিক বৈঠক করে ভিনরাজ্যে বাঙালি হেনস্থা নিয়ে একরাশ ক্ষোভ উগরে দিয়ে চন্দ্রিমা বলেছিলেন, ‘আমরা অবাক, এ কোন দেশ! বিজেপি শাসিত যে কোনও রাজ্যে গেলেই, বাঙালিদের হেনস্থা করা হচ্ছে। বাংলার অস্মিতাকে অপমান করা হচ্ছে প্রতি মুহূর্তে! আর এই অপরাধমূলক কাজে মদত দিচ্ছে কেন্দ্র সরকার। বাংলার মানুষ আতঙ্কিত, বাঙালি হলেই বিদ্যুৎ, জলের লাইন কেটে দিচ্ছে। পরিচয়পত্র থাকলেও কোনও লাভ হচ্ছে না। সেই সঙ্গে এনআরসি আতঙ্ক! আমরা এই অত্যাচারকে ধিক্কার জানাই। মুখ্যমন্ত্রী আগেও প্রতিবাদ করেছেন। এবারও প্রতিবাদ করবেন।’
প্রসঙ্গত, অভিষেকও যে মহামিছিলে যোগ দেবেন তা ঘোষণা করেননি চন্দ্রিমা। অর্থাৎ অভিষেকের অংশগ্রহণের বিষয়টি পূর্বপরিকল্পিত ছিল না। রাতারাতি বদলে যায় সূচি। সোমবার দলের তরফে জানানো হয়েছে, দলনেত্রী মমতার সঙ্গে মহামিছিলে রাজপথে পা মেলাবেন অভিষেকও। পাশাপাশি দিল্লিতেও প্রতিবাদ কর্মসূচি হবে বলে তৃণমূল কংগ্রেস সূত্রে জানা গিয়েছে। বারংবার কেন্দ্র এবং সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের চিঠি দেওয়ার পরেও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বিজেপি সরকার। উল্টে যাঁরা এই অপরাধ করছেন, তাঁদের মদত দিচ্ছে বিজেপি-শাসিত সরকার। মন্ত্রীর অভিযোগ, কোচবিহার থেকে এক মহিলা অসমে বিয়ে করে গিয়ে এনআরসি থেকে বাদ পড়েছেন। বাধ্য হয়ে ফিরে তাকে আসতে হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ওঁর দাম্পত্য জীবনকে অপমান করা হল। এটা এক ধরনের জাতিবিদ্বেষ। আমরা এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’ সম্প্রতি অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা আদমশুমারির প্রসঙ্গে মন্তব্য করেন, যাঁরা নিজেদের মাতৃভাষা বাংলা বলছেন, তাঁরা নাকি ‘বিদেশি’। তাঁর এই মন্তব্য নিয়ে ইতিমধ্যেই দেশ জুড়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে প্রতিবাদে নেতৃত্ব দিতে আগামী মঙ্গলবার কলকাতার রাস্তায় নামছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। মিছিল থেকে বার্তা দেওয়া হবে— বাংলা ও বাঙালিকে অপমান করলে রাস্তায় নেমে জবাব দেবে তৃণমূল।
বাংলাভাষী হলেই বাংলাদেশি বলে দাগিয়ে ওড়িশা-সহ বিভিন্ন রাজ্যে বাঙালিদের আটক করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে পাল্টা সরব হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বিষয়ে একটি বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তুলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে অন্য রাজ্যের প্রায় দেড় কোটি মানুষ বসবাস করেন। এখানেই তাঁদের রুজিরুটি। তাঁদের কখনও হেনস্থা হতে হয় না। কিন্তু বাংলার ২২ লক্ষ মানুষ ভিন্রাজ্যে কেন হেনস্থার শিকার হচ্ছেন?