• হিন্দমোটরকে ঘিরে আশার আলো, মেট্রো কোচ ফ্যাক্টরির জন্য জমির অনুমোদন মন্ত্রিসভায়
    এই সময় | ১৫ জুলাই ২০২৫
  • প্রদীপ চক্রবর্তী

    মেট্রো রেল ও বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের কোচ তৈরির জন্য হুগলির হিন্দমোটর কারখানার প্রায় ৪০ একর জমি টিটাগড় রেল সিস্টেম লিমিটেডকে (টিটাগড় ওয়াগন) দেওয়ার সিদ্ধান্ত অনেক আগেই নিয়েছিল রাজ্য সরকার।

    সোমবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে তাতে সরকারি সিলমোহর পড়ল। নবান্ন সূত্রের খবর, হুগলি জেলার উত্তরপাড়ার কোতরং ও ভদ্রকালী মৌজায় হিন্দুস্তান মোটর কারখানার অব্যবহৃত জমিতে এই ওয়াগন তৈরির কারখানা গড়ে উঠবে।

    ৯৯ বছরের লিজের ভিত্তিতে এই জমি তুলে দেওয়া হচ্ছে বেসরকারি সংস্থাটিকে। এই প্রকল্পে প্রায় ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে তারা। রেলের কোচ তৈরি ছাড়াও ট্রেনের ফার্মিং, টেস্টিং, কমিশনিংয়ের জন্য আলাদা আলাদা ইউনিট থাকবে।

    কোচ পরীক্ষার জন্য টেস্ট ট্র্যাকও বানানো হবে। হিন্দমোটর ছাড়াও পশ্চিম বর্ধমান জেলার রানিগঞ্জের মঙ্গলপুর ও ভক্তারনগর মৌজায় আরও একটি শিল্পপার্ক তৈরির জন্য ২০৫ একরের কিছু বেশি জমি অনুমোদন করা হয়েছে রাজ্যে মন্ত্রিসভার বৈঠকে।

    ২০২২ সালের জুলাই মাসে হিন্দমোটরের টিটাগড় ওয়াগন কারখানার ২৫ বছর পূর্তিতে এক অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, হিন্দমোটরে প্রায় ৭০০ একর জমিতে নতুন ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাব তৈরি করা হবে। এটাকে তারই প্রথম ধাপ হিসেবে মনে করা হচ্ছে।

    এক সময় হিন্দুস্তান মোটর কারখানায় অ্যাম্বাসাডর, ট্রেকার, বেডফোর্ড, কন্টেসার এবং ছোট বাস তৈরি হতো। ফরাসি বহুজাতিক সংস্থা প্যাজিয়োর হাতে অ্যাম্বাসাডরকে বিক্রি করে দেওয়ার পর থেকেই কারখানার অবনতি ঘটতে থাকে।

    ২০১৪ সালে পুরোপুরি তালা পড়ে যায় হিন্দুস্থান মোটর কারখানায়। অ্যাম্বাসাডর গাড়ি উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলেও পরবর্তীতে কারখানার একটা অংশে টিটাগড় ওয়াগন কোম্পানি রেলের কোচ তৈরির কাজ শুরু করে।

    সম্প্রতি এই কোম্পানি মেট্টো রেল এবং ইএমইউ ট্রেনের এসি কোচ তৈরির বরাত পায়। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ প্রায় ১১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এর জন্য কারখানা সম্প্রসারণের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। কিন্তু তার জন্য আশপাশে জমি পাওয়া যাচ্ছিল না।

    এর মধ্যেই ২০২২ সালে হিন্দুস্তা‍ন মোটরের জমি অধিগ্রহণ করে রাজ্য সরকার। তা থেকেই প্রায় ৪০ একর জমি টিটাগড় ওয়াগনকে লিজ দিচ্ছে রাজ্য ভূমি দপ্তর। এ দিন সেই জমির দখল নেয় টিটাগড় ওয়াগন কর্তৃপক্ষ।

    সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষীও নিয়োগ করা হয়েছে। এতে নতুন করে আশার আলো দেখতে শুরু করেছেন এলাকার মানুষ।

    বিজেপি নেতা পঙ্কজ রায় বলেন, ‘হিন্দুস্তান মোটরের প্রায় ২৫০ শ্রমিক এখনও পিএফ–গ্র্যাচুইটি পায়নি। তাঁদের কথা ভাবেনি সরকার।’ সিপিএম নেতা আভাস গোস্বামী বলেন, শিল্পের জমিতে শিল্প চাই। যাঁরা কোম্পানিতে পে রোলে আছেন, তাঁদের কাজের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতে হবে।’

    হিন্দমোটরের তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের নেতা উত্তম চক্রবর্তী বলেন, ‘হিন্দমোটর কারখানা শিল্পের জন্য সরকারের থেকে জমি লিজ নিয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘ সময় কারখানা বন্ধ করে জমি ফেলে রেখেছিল।

    কারখানার ভিতরের যন্ত্রাংশ রাতের অন্ধকারে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়। এখন রাজ্য সরকারের সহায়তায় টিটাগড় ওয়াগন নতুন করে কাজ শুরু করবে। আমরা সরকার ও টিটাগড় ওয়াগনকে সব ধরনের সহযোগিতা করব।’

  • Link to this news (এই সময়)