• সন্তানের জন্য মানত করেছিলেন, পূরণের পর বুকে হেঁটে ২০০০ কিলোমিটার পথ পার হতে যাত্রা শুরু বাবার...
    আজকাল | ১৫ জুলাই ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'দেবতার গ্রাস' কবিতায় পুণ্যের মোহে কোলের সন্তান রাখালকে নিয়ে বিধবা মোক্ষদা পাড়ি দিয়েছিলেন সাগরে। সেটা ছিল পুণ্যার্জনের জন্য এক দীর্ঘ যাত্রা।

    উত্তর ২৪ পরগণার বাদুড়িয়ার শম্ভু কাহারও সন্তান পাওয়ার পর কেদারনাথের পথে এক 'কঠিন' যাত্রা শুরু করেছেন। দন্ডী কেটে তিনি পৌঁছবেন কেদারনাথে। তাঁর এই সঙ্কল্প সফল হবে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান আছেন কেউ কেউ।‌ কিন্তু প্রতিবেশীরা প্রণাম ঠুকে তাঁর মঙ্গল কামনা করেছেন। 

    শম্ভু বাদুড়িয়া এলাকার কেওট শাহ উমাপুরের বাসিন্দা। তাঁর বিয়ে হয়েছে ১০ বছর।‌ কিন্তু সন্তান আসেনি ঘরে। দু'দুবার তাঁর স্ত্রীর গর্ভস্থ সন্তান মারা গিয়েছে।

    দিনমজুরের কাজ করা শম্ভু জানান, তিনি মহাদেবের ভক্ত। বাড়িতে প্রতিদিন পুজো করেন। এরপর একদিন মহাদেবের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে মানত করেন স্ত্রীর কোলে সন্তান এলে তিনি দন্ডী কেটে কেদারনাথে মহাদেবের থানে ফুল দিয়ে আসবেন।

    অবশেষে স্ত্রীর কোলে এসেছে সন্তান। তার বয়স এখন তিন বছর। শম্ভু তাঁর মানত পূর্ণ করার সিদ্ধান্ত নিলেন। গত বৃহস্পতিবার নিজের গ্রাম উমাপুর থেকে দন্ডী কাটতে কাটতে যাত্রা শুরু করেছেন। পথ নেহাত কম নয়।

    প্রায় ২০০০ কিলোমিটার। দণ্ডী কেটে বেশি পথ এগোনো যায় না। গত চার দিনে তিনি মাত্র ১৬ কিলোমিটার পথ পার হতে পেরেছেন। হাবড়ার নকপুল গ্রামে পৌঁছে দেখেন, সেখানে একটি মহাদেবের মন্দির রয়েছে। পুজোর ঘণ্টা বাজছে। শম্ভু সেখানে পূজো দিলেন।

    এরকম কঠিন মানত কেন করলেন? শম্ভুর কথায়, 'বিয়ে হয়েছে ১০ বছর। পরপর দুটি সন্তান স্ত্রীর গর্ভেই মারা যায়। আমি ছোটবেলা থেকেই মহাদেবের ভক্ত। তাঁর কাছে মানত করেছিলাম যদি বাবা ডাক শুনতে পাই তাহলে দন্ডী কেটে কেদারনাথ পৌঁছে মহাদেবের থানে ফুল দিয়ে আসব। আমার ছেলে হয়েছে। এখন বয়স তিন। মানত পূর্ণ করার জন্য আমি দন্ডী কেটে কেদারনাথের পথে পাড়ি দিয়েছি। মানুষের আশীর্বাদ ও ভালোবাসা থাকলে ঠিক পৌঁছে যাব।' 

    শম্ভুর এই কঠিন মানতের গল্প শুনে নকপুল গ্রামের বাসিন্দা কৃষ্ণ রক্ষিত বলেন, 'কঠিন মানত করার অনেক উদাহরণ শুনেছি। কিন্তু বুকে হেঁটে দণ্ডী কেটে কেউ কেদারনাথ পৌঁছবেন, এমন প্রতিজ্ঞার কথা আগে কখনও শুনিনি। শম্ভুর পরিণতির কথা ভেবে ভয় করছে। তবু তাঁকে শুভেচ্ছা জানালাম। বিশ্বাস মানুষকে অনেক দূর পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। শম্ভুর মানত যেন পূর্ণ হয়।'

    কঠিন প্রতিজ্ঞা পূরণের জন্য জুলাইয়ের তুমুল বৃষ্টিতেও বুকে হেঁটে বা দন্ডী কাটতে কাটতে এগিয়ে চলেছেন শম্ভু। অনেকেই তাঁকে দেখতে এগিয়ে এসেছেন। জানতে চেয়েছেন কোথা থেকে তিনি এসেছেন। রাস্তা দিয়ে চলা অন্যান্য যাত্রীরাও কৌতুহল নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ছেন। উৎসাহ দিচ্ছেন সকলেই। যা সঙ্গী করে এগিয়ে যাচ্ছেন শম্ভু। পথ বন্ধুর হলেও তাঁকে পৌঁছতেই হবে।
  • Link to this news (আজকাল)