চার্জশিটে নাম, সিবিআই তলব! বিজেপি কর্মী হত্যা মামলায় আগাম জামিনের আর্জি বিধায়ক পরেশ ও দুই কাউন্সিলরের
আনন্দবাজার | ১৫ জুলাই ২০২৫
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার দিন রাতে বেলেঘাটায় বিজেপি কর্মী অভিজিৎ সরকার খুনের ঘটনায় আগাম জামিনের আবেদন করলেন বেলেঘাটার তৃণমূল বিধায়ক পরেশ পাল, কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (বস্তি) স্বপন সমাদ্দার এবং ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পাপিয়া ঘোষ। তাঁদের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই মামলায় রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই তাঁদের নাম জড়ানো হয়েছে। তদন্তে সহযোগিতা করার ইচ্ছা থাকলেও, সিবিআই হঠাৎ করে তাঁদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করায় আইনি সুরক্ষার প্রয়োজন পড়ে। তাই তাঁরা আদালতের কাছে আগাম জামিন চেয়ে আবেদন করেছেন।
আগামী ১৬ জুলাই বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের এজলাসে এই আগাম জামিনের আবেদনের শুনানি হতে পারে বলে আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে। ঘটনাচক্রে ওই দিনই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে কলকাতার কলেজ স্কোয়্যার থেকে ডোরিনা ক্রসিং পর্যন্ত বিজেপির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল করবে তৃণমূল। অন্য দিকে, সিবিআই ইতিমধ্যেই ওই তিন তৃণমূল নেতা-নেত্রীকে ১৮ জুলাইয়ের মধ্যে হাজিরা দেওয়ার জন্য নোটিস পাঠিয়েছে। প্রসঙ্গত, অভিজিৎ কলকাতার বেলেঘাটা অঞ্চলের বাসিন্দা এবং বিজেপির সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ২০২১ সালের ২ মে ভোটের ফল প্রকাশের পরে কলকাতার বেশ কয়েকটি এলাকায় হিংসার ঘটনা ঘটে। সেই সময় নিজের ফেসবুক লাইভে এসে অভিজিৎ অভিযোগ করেন, তাঁর বাড়ি এবং পোষ্যদের উপর আক্রমণ হয়েছে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার হয়। সেই ঘটনায় অভিযুক্ত তৃণমূলের ওই তিন নেতা-নেত্রী। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অভিজিতের পরিবারের পক্ষ থেকে কলকাতা হাইকোর্টে সিবিআই তদন্তের দাবি জানানো হয়। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর আদালতের নির্দেশে তদন্তভার যায় কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার হাতে। সম্প্রতি যে চার্জশিট দাখিল করেছে তারা, তাতে পরেশ, স্বপন এবং পাপিয়ার নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
তৃণমূলের তরফে এখনও পর্যন্ত এই নিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়নি। যদিও দলীয় সূত্রে দাবি করা হয়েছে, রাজনৈতিক স্বার্থে ও কেন্দ্রীয় সংস্থাকে ব্যবহার করে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে তাঁদের নেতাদের। অন্য দিকে, বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ, এই খুনের ঘটনায় জড়িত শাসকদলের একাধিক নেতাকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হচ্ছে দীর্ঘ দিন ধরে। কিন্তু, অবশেষে সত্য সামনে আসছে। তৃণমূল সূত্রে খবর, সিবিআই চার্জশিটে তাঁদের নাম প্রকাশিত হওয়ার পর দলের রাজ্য নেতৃত্বের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তাঁরা। দলীয় শীর্ষ নেতৃত্বের অনুমোদন নিয়েই তাঁরা আদালতে আগাম জামিনের আবেদন করেছেন। কাউন্সিলর পাপিয়া বলেন, ‘‘আমি শুধু দেশের আইন ব্যবস্থাই নয়, ঈশ্বরের উপরেও আশাবাদী যে, আমরা সঠিক বিচার পাব।’’
এই মামলার পরবর্তী ধাপের দিকে নজর রাখছে গোটা রাজনৈতিক মহল। ১৬ জুলাই জামিন শুনানি এবং ১৮ জুলাই সিবিআইয়ের সামনে হাজিরা, এই দু’টি তারিখ ঘিরেই এখন চরম সতর্কতায় আছেন সংশ্লিষ্ট নেতারা। মামলার ভবিষ্যৎ গতিপথও নির্ভর করছে সেই শুনানি এবং জিজ্ঞাসাবাদের উপর।