‘কৃষি বিকাশ শিল্প কেন্দ্র’ মামলা, রাজ্যের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে এ বার আদালত অবমাননার অভিযোগ
আনন্দবাজার | ১৫ জুলাই ২০২৫
তিন বছর আগে রায় দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট। কিন্তু তা এখনও কার্যকর না হওয়ার অভিযোগ তুলে এ বার আদালত অবমাননার মামলা দায়ের হয়েছিল হাই কোর্টে। ‘কৃষি বিকাশ শিল্প কেন্দ্র’ মামলায় বিচারপতি শুভেন্দু সামন্ত এবং বিচারপতি অনিরুদ্ধ রায় রাজ্যকে ৩০ জুনের মধ্যে হলফনামা দিতে বলেছিল আদালতে। মঙ্গলবার থেকে ওই মামলার শুনানির সম্ভাবনা।
২০২২ সালের ১ অগস্ট ‘কৃষি বিকাশ শিল্প কেন্দ্র’ মামলায় রায় দিয়েছিল হাই কোর্ট। আদালতের ওই রায় কার্যকর না করায় আদালত অবমাননার মামলা দায়ের হয়। ‘কৃষি বিকাশ শিল্প কেন্দ্র’ ওই সংস্থা আশির দশকে গ্রামে কৃষি, পরিবার পরিকল্পনা, সেচ, টিউবওয়েল বসানো, ইত্যাদি উন্নয়নমূলক কাজ করত। এই সংস্থাটি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের ‘২০ দফা কর্মসূচি’ বাস্তবায়নে সাহায্য করত। সংস্থাটির দাবি ছিল, তারা সরকারকে অনেক উন্নয়নমূলক কাজে সাহায্য করেছে। অনেক সরকারি কর্মকর্তা ও দফতরের চিঠিতে তাদের কাজের প্রশংসা করা হয়েছে। তাই, যারা এতদিন এই সংস্থায় কাজ করেছেন, তাঁদের সরকারি চাকরিতে নিয়োগ দেওয়া হোক।
অথবা সরকার যেন এই সংস্থাকে অধিগ্রহণ করে এবং সংগঠনের কর্মীদের সুরক্ষা দেয়, সে দাবিও তোলা হয়েছিল সংস্থার তরফে। প্রাথমিক ভাবে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের দফতরগুলি ‘কৃষি বিকাশ শিল্প কেন্দ্রে’র প্রশংসা করেছিল। এমনকি, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকেও ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া এসেছিল। কিন্তু পরে সরকার বলে দেয়, এই সংস্থাকে কখনও সরকারি ভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়নি। তারা নিজেরাই কাজ করেছে, সরকার কোনও দায়িত্ব নেয়নি। তাই কর্মীদের নিয়োগ বা সংস্থাকে গ্রহণ করার প্রশ্নই ওঠে না।
কলকাতা হাই কোর্ট ২০২২ সালের রায়ের পর্যবেক্ষণে সুস্পষ্ট ভাবে তিনটি প্রসঙ্গের উল্লেখ করেছিল— এক, ‘‘সরকার যখন এত বার প্রশংসা করেছে, চিঠিপত্রে বলেছে ‘আপনাদের কাজ ভাল’, তখন পরবর্তীতে তাদের দায় অস্বীকার করা সঠিক নয়।’’ দুই, ‘‘যদিও এটা সত্য যে সরকার কখনও লিখিত প্রতিশ্রুতি দেয়নি, তবুও ৪০ বছর আগে যে অবস্থান তারা নিয়েছিল, সেটাকে পুরোপুরি অস্বীকার করা অনৈতিক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন।’’ তিন, ‘‘সরকারের কাজ হওয়া উচিত বিশ্বাসযোগ্য ও ধারাবাহিক। কথা না রাখলে সেটা সরকারি দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা।’’
কলকাতা হার্হ কোর্ট রায়ে জানিয়েছিল, সরকার যে ২০১৫ সালে এই সংস্থার দাবি বাতিল করেছিল, সেই সিদ্ধান্ত এবং ২০১৭ সালে একক বিচারপতি রায় বাতিল করা হয়েছে। মুখ্যসচিব বা অন্য কোনও উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাকে নতুন করে আবার এই সংস্থার বিষয়ে সতর্ক ভাবে তদন্ত করতে বলা হয়েছে। যদি সংস্থার দাবি সত্যি হয়, তা হলে সরকারকে অনুদান দিতে বলা হয়েছে, যাতে কর্মীরা বা তাদের উত্তরাধিকারীরা কিছু পেনশন বা আর্থিক সহায়তা পান। কিন্তু সেই নির্দেশ পালিত হয়নি বলে অভিযোগ। সূত্রের খবর, রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ‘কৃষি বিকাশ শিল্প কেন্দ্র’ কয়েক হাজার স্বেচ্ছাসেবক রয়েছেন। গ্রামীণ এলাকায় অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষজনের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে এক সময়ে দেশের সঙ্গে এ রাজ্যেও ‘বিশ দফা’ কর্মসূচি রূপায়ণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ওই সংস্থাকে।