‘বেআইনি’ নিয়োগ নিয়ে রাজ্যে টানাপড়েন অব্যাহত। কিন্তু এ রাজ্যেরই একদল পুরকর্মীর চাকরি সংক্রান্ত মামলার রায় দিতে গিয়ে সোমবার কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ জানিয়েছেন, নির্দিষ্ট আইন না-থাকার সময় যদি নিয়োগ হয় এবং কর্মরতরা যদি নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন, তা হলে সেই নিয়োগকে ‘বেআইনি’ বলা যায় না। ওই পুরকর্মীদের অবিলম্বে স্থায়ী চাকরি দিতেও নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি ভরদ্বাজ। আইনজীবীদের একাংশের পর্যবেক্ষণ, রাজ্যের নানা পুরসভাতেই এমন বহু ঠিকাকর্মী আছেন প্রায় দু’দশক কর্তব্যপালন করেও যাঁরা স্থায়ী চাকরি পাননি। এ দিনের রায় ভবিষ্যতে তাঁদেরও আশার আলো দেখাতে পারে।
মামলাকারীদের আইনজীবী সুস্মিতা সাহা দত্ত জানান, তাঁর মক্কেলরা ২০০৬ সালে উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ পুরসভায় মাসিক ১৭০০ টাকা বেতনে ঢুকেছিলেন। দীর্ঘদিন চাকরি করার পর পুরসভা থেকে রাজ্যের ‘ডিরেক্টর অব লোকাল বডিজ়’ (ডিএলবি)-এর কাছে চাকরি স্থায়ী করার আবেদন পাঠালেও সে ব্যাপারে ডিএলবি পদক্ষেপ করেননি। আর্জি খারিজও করেননি। পরবর্তী কালে ওই কর্মীদের পদেই নতুন নিয়োগের নোটিস জারি হয়। ২০২০ সালে বিচারপতি অমৃতা সিংহ সেই নিয়োগে স্থগিতাদেশ দেন। সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে কোনও আর্জি জানায়নি রাজ্য। সুস্মিতা জানান, ওই কর্মীদের নিয়োগে কোনও দুর্নীতি, স্বজনপোষণের অভিযোগ ওঠেনি। তাঁরা টানা দায়িত্বপালন করেছেন।
রাজ্য এবং ডিএলবি-র কৌঁসুলিরা অবশ্য কোর্টে দাবি করেন যে এই মামলার গ্রহণযোগ্যতা নেই। মামলাকারীদের স্থায়ী চাকরি চাওয়ার অধিকার নেই। রাজ্য সরকার এবং ডিএলবির অনুমতি ছাড়াই ওই কর্মীদের নিয়োগ হয়েছিল। পুরসভার আইনজীবী দাবি করেন যে প্রশাসনের উপরে চাপ সৃষ্টি করতেই এই মামলা করা হয়েছে।
মামলার রায়ে বিচারপতি ভরদ্বাজের পর্যবেক্ষণ, মামলাকারীরা দীর্ঘদিন চাকরি করার পর স্থায়ী পদ পাওয়ার যোগ্য কি না, সেটাই মামলার মূল বিষয়। এ ব্যাপারে একই ধরনের অন্য একটি মামলায় হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রায়ের উল্লেখও করেছেন তিনি। বিচারপতিজানান, মামলাকারীরা গোপনে বা বেআইনি ভাবে নিযুক্ত হননি। সেই নিয়োগের সময় পুরকর্মী নিয়োগ বিধি (২০০৫) কার্যকর ছিল না। কোন ক্ষেত্রে নিয়োগ বেআইনি হতেপারে, তারও ব্যাখ্যা রায়ে দিয়েছেন তিনি। সুুপ্রিম কোর্টের একটি রায় উল্লেখ করে বিচারপতি বলেছেন যে অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবার ক্ষেত্রেকেউ যদি প্রথাগত ভাবে নিযুক্তনা-হন তা হলেও দীর্ঘদিন চাকরি করার পরে নিয়োগ বাতিল করে দেওয়াযায় না।