মদ্যপান করার পরে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছিল এক যুবকের। পরিবারের দাবি, তিনি সাঁতারে পটু ছিলেন, তাই জলে ডুবে মৃত্যু হওয়ার কথা নয়। বন্ধুরাই মারধর করে তাঁকে পুকুরে ফেলে দেয় বলে অভিযোগ পরিবারের। যদিও প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের দাবি, জলে ডুবেই মৃত্যু হয়েছে অমিত ভান্ডারি (৪০) নামে ওই যুবকের। ঠাকুরপুকুরের বাসিন্দা অমিতের দেহ শনিবার পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়। কিন্তু তাঁর মৃত্যু দুর্ঘটনাজনিত বলে মানতে রাজি নয় পরিবার। অভিযোগ, পুলিশ জেনারেল ডায়েরি করলেও সোমবার পর্যন্ত এফআইআর নেয়নি।
ঠাকুরপুকুর থানা এলাকার ভট্টাচার্যপাড়ার বাসিন্দা অমিতের পরিবার জানিয়েছে, পেশাগত কাজের সঙ্গে জড়িত কয়েক জনের সঙ্গে শনিবার তিনি স্থানীয় শীলপাড়া উদয়নপল্লির পুকুরপাড়ে মদের আসরে যোগ দেন। অমিতের ভাই সুমিতের অভিযোগ, ‘‘দাদা সাঁতারে অত্যন্ত দক্ষ ছিল। নিয়মিত পুকুরে মাছ ধরতে যেত। নিজের পেশাগত কাজের ক্ষেত্রের কয়েক জন বন্ধুর সঙ্গে পুকুরপাড়ে মদ্যপানের আসরে যোগ দিয়েছিল। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, দাদার সঙ্গে অন্যদের গোলমাল হয়েছিল। দাদাকে মারধর করে পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়। এমনকি, দাদা ডুবে যাওয়ার পরেও তারা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করে যে, অমিত তো সাঁতার জানে, উঠে আসবে।’’ যদিও এর পরে বন্ধুদেরই এক জন এবং এক প্রতিবেশী মিলে অমিতের দেহ উদ্ধার করেন। ময়না তদন্তের পরে রবিবার ওই যুবকের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে।
পুলিশের অবশ্য দাবি, মৃতের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে অনিচ্ছাকৃত ভাবে মৃত্যু ঘটানোর ধারায় মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। অজ্ঞাতপরিচয় যুবকদের বিরুদ্ধে ওই মামলা রুজু হয়েছে। ইতিমধ্যে অভিযুক্তদের পরিচয় জানতে পেরেছে পুলিশ। অমিতের তিন বন্ধুকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এক বন্ধুর খোঁজ করা হচ্ছে। তবে মৃতের ভাইয়ের দাবি, দুই বন্ধুর নাম তাঁরাই পুলিশকে জানান। পুলিশ তাঁদের জানিয়েছে, দিন কয়েক পরে তদন্তের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে জানানো হবে। পুলিশের দাবি, আটক তিন জন দাবি করেছেন, মদ্যপানের পরে পুকুরপাড়ে পা ধুতে গিয়ে তলিয়ে যান অমিত। বন্ধুরাই তাঁকে উদ্ধার করে বিদ্যাসাগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করা হয়।
পুলিশ সূত্রের দাবি, ময়না তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে জানা গিয়েছে, ডুবে মৃত্যু হয়েছে অমিতের। দেহে আঘাতের চিহ্ন মেলেনি। পাশাপাশি, পেটে প্রচুর পরিমাণে তরল মিলেছে। চিকিৎসকদের অনুমান, অমিত মত্ত অবস্থায় ছিলেন। তাঁর পরিবারও মদ্যপানের কথা অস্বীকার করেনি। অমিতের ভাইয়ের অভিযোগ, ‘‘বিকেলে খবর পেয়ে বিদ্যাসাগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে গিয়েদাদার দেহ শনাক্ত করি। মাত্র কয়েক মিনিট দেহ দেখতে পাই। তখন দেখেছি, দাদার নাকে আঘাত রয়েছে। কেউ ডুবে মারা গেলে তো তার পেট ফুলে থাকবে। দাদার পেট ফুলে ছিল না। বলা হচ্ছে, দাদা পুকুরে পা ধুতে নেমে তলিয়ে গিয়েছে। কিন্তু আমরা তা মানতে রাজি নই। আমরা এফআইআর করব।’’
এক পুলিশকর্তা জানান, রবিবার পরিবার থানায় অভিযোগ করেছে। তার ভিত্তিতে তদন্ত হচ্ছে। কেন এক বন্ধু পালিয়ে গেলেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গেও সোমবার কথা বলেছে পুলিশ।