এবার বাঘ-সিংহের জুড়ি বাছাই হবে কুল-গোত্র বিচার করে! জানেন কেন?
প্রতিদিন | ১৫ জুলাই ২০২৫
নিরুফা খাতুন: বিয়ের আগে অনেক ক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রীর পরিবার একে অপরের কুল, বংশ ইত্যাদি খুঁটিয়ে যাচাই করে। কোষ্ঠী বিচারে সম্বন্ধ পাকা হয়। এবার আলিপুর চিড়িয়াখানাও কুল-গোত্র দেখে বাঘ-সিংহের সঙ্গী বাছাই করবে।
নতুন সঙ্গী বা সঙ্গিনী কোন বংশজাত? বাপ-ঠাকুরদার রক্তে দোষ নেই তো? আবাসিকদের জিনগত সমস্যা এড়াতেই এই উদ্যোগ। একই কারণে বন্যপ্রাণীদের পরিবারের মধ্যে প্রজনন বন্ধ করেছে আলিপুর কর্তৃপক্ষ। সেজন্য প্রত্যেক আবাসিকের বংশতালিকা তৈরি হচ্ছে। সেই সঙ্গে জুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (জেডএসআই)-কে দিয়ে চলছে ডিএনএ পরীক্ষা। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য প্রথম ধাপে বাঘ, সিংহ, গন্ডার, জিরাফ ও জেব্রাদের রক্তের নমুনা জেডএসআইকে পাঠানো হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
পাশাপাশি সঙ্গী-সঙ্গিনী নির্বাচনে চূড়ান্ত সতর্কতা। এতদিন চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ আবাসিকদের জন্য সুপাত্র বা পাত্রীর খোঁজ পেলে তাদের কুল-বংশ নিয়ে মাথা ঘামায়নি। পরিবারের সদস্যদের মধ্যেই বছরের পর বছর চলছিল প্রজনন। পরিণামে জিন-সমস্যা বাড়ছে। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে জিরাফ ও সিংহের সংসারে। আলিপুর চিড়িয়াখানার এক আধিকারিক জানান, জিনগত সমস্যা এড়াতে এবার আবাসিকদের বংশতালিকা বানানো হচ্ছে। একই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে প্রজনন নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। অন্তত তিন প্রজন্মের মধ্যে প্রজনন হবে না। তারপরে দরকার পড়লে ডিএনএ বিশ্লেষণ করে এগনো হবে। ডিএনএ-তে ৮৫ শতাংশের বেশি মিল থাকলে বাতিল। প্রজননের জন্য অন্য চিড়িয়াখানা থেকে বন্যপ্রাণী আনার সময়ও ডিএনএ পরীক্ষা করে দেখা হবে। ওই আধিকারিকের কথায়, “মানুষের মতো বন্যপ্রাণীরাও পূর্বপুরুষদের ডিএনএ বহন করে চলে। একই পরিবারের না হলেও ডিএনএ-তে মিল থাকতে পারে। মিলনসঙ্গীর সঙ্গে ডিএনএ-র মিল যত বেশি, উত্তর প্রজন্মে জিনগত সমস্যার সম্ভাবনা তত বেশি। শাবক বিকলাঙ্গ হতে পারে। জিনগত রোগ-ব্যাধি নিয়ে জন্মাতে পারে।”
আলিপুর চিড়িয়াখানার অধিকর্তা অরুণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “প্রত্যেক আবাসিকের ‘সার্ভিস বুক’ তৈরি হচ্ছে। কবে, কোথা থেকে আনা হয়েছিল, বাবা-মা কোন পরিবারের, ভাই-বোন কারা, দাদু-দিদা, ঠাকুরমা-ঠাকুরদা কোন বংশের, এমন যাবতীয় ঠিকুজি সংগ্রহ করা হচ্ছে। আপাতত বাঘ, সিংহ, হাতি, জিরাফ, জেব্রাদের সার্ভিস বুক তৈরি। কে কতটা খাবার খায়, কী খায়, আগে কোনও বড় অসুখ বা অস্ত্রোপচার হয়েছে কি না, সার্ভিস বুকে তারও বিশদ উল্লেখ থাকছে। ফলে রোগ-ব্যাধি হলে চিকিৎসা করতে সুবিধা হবে। প্রয়োজনে চটজলদি যাতে হাতে পাওয়া যায়, তাই সার্ভিস বুক গচ্ছিত থাকবে কিপারদের কাছে।”