• বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে ভিজছে ছাত্রছাত্রীরা, দেখা নেই শিক্ষকদের, ভাইরাল ভিডিও ঘিরে সমালোচনার ঝড়
    আজকাল | ১৬ জুলাই ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: অঝোরে পড়ে যাচ্ছে বৃষ্টি। ঝোড়ো হাওয়া এসে এলোমেলো করে দিচ্ছে কচি কাঁচাদের স্কুল ইউনিফর্ম, পিঠের ব্যাগ। আর উড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে ছোট্ট পড়ুয়াদের হাতে ধরে থাকা ছাতা। প্রচন্ড বৃষ্টির মধ্যে এভাবেই স্কুল শিক্ষকদের জন্য অপেক্ষা করছিল মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ থানার অন্তর্গত ধুলিয়ানচক্রের জয়কৃষ্ণপুর (২) প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা। অথচ স্কুলের সময় শুরু হয়ে গেলেও বৃষ্টির কারণে দেখা মেলেনি কোনও শিক্ষক-শিক্ষিকার। এমনকি, বন্ধ রয়েছে স্কুলের প্রধান ফটক। এমনই একটি ছবি মঙ্গলবার সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। আর তারপর থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে সমালোচনার ঝড়।

    অনেকেই বলছেন, ‘এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন শিক্ষকদের জন্যই জেলার শিক্ষা ব্যবস্থা ক্রমেই পিছিয়ে যাচ্ছে’। মুর্শিদাবাদের প্রতাপগঞ্জ পঞ্চায়েতের অন্তর্গত জয়কৃষ্ণপুর (২)প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থানীয় গ্রামগুলির প্রচুর ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা করে। অভিযোগ উঠেছে ওই স্কুলে বেশ কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়মিত সময়ে আসেন না। তার ফলে মাঝেমধ্যেই বেশ কিছু ছাত্র-ছাত্রীকে সময়ে স্কুলে পৌঁছেও গেটের বাইরে অপেক্ষা করতে হয়। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে মঙ্গলবার সকালের দৃশ্য। গত কয়েকদিন ধরেই মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন প্রান্তে একটানা বৃষ্টি হয়ে চলেছে। এর ফলে জেলার একাধিক জায়গায় যেমন জল জমার সমস্যা দেখা গিয়েছে, তেমনই প্রচুর সংখ্যক গ্রামের রাস্তাঘাট কাদায় ভরে গিয়েছে।

    তবুও সমস্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপেক্ষা করে ক্লাসে যোগ দিতে মঙ্গলবার সকালে জয়কৃষ্ণপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেশ কিছু ছাত্র-ছাত্রী ছাতা হাতে পিঠে স্কুলের ব্যাগ নিয়ে স্কুলের দরজায় পৌঁছে যায়।অভিযোগ, বেলা পৌনে এগারোটা বেজে গেলেও দেখা মেলেনি স্কুলের কোনও শিক্ষক শিক্ষিকার। সে কারণে স্কুলের দরজায় ছাতা হাতে দাঁড়িয়ে একপ্রকার ভিজতে বাধ্য হয় কচিকাঁচার দল। গোটা ঘটনার ভিডিও করে সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন গ্রামেরই এক বাসিন্দা। এর কিছুক্ষণ পরই একে একে স্কুলে এসে গেট খুলে ভেতরে প্রবেশ করতে থাকেন শিক্ষক শিক্ষিকারা। মহম্মদ অসিরুল মোমিন নামে ওই গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘সকালে বৃষ্টির মধ্যে আমি বাড়ির সামনে স্নান করছিলাম। সেই সময় দেখতে পাই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেশ কিছু পড়ুয়া পিঠে ব্যাগ নিয়ে স্কুলের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

    ঘড়িতে সেই সময় প্রায় পৌনে এগারোটা বেজে গিয়েছিল। কিন্তু স্কুলে কেউ না থাকায় দরজা কেউ খুলে দিতে পারেনি। ফলে ছাত্রছাত্রীরা পিঠে ভারী ব্যাগ নিয়ে এক হাতে ছাতা ধরে বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়েছিল’। বেশ কিছু গ্রামবাসী অভিযোগ করেন, স্কুলটিতে পড়াশোনার মান এক সময় ভাল ছিল বলে বহু গ্রামবাসী তাদের ছেলেমেয়েকে সেখানে ভর্তি করিয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমানে স্কুলে খুব নিম্নমানের মিড-ডে মিল দেওয়া হয় বলে অনেক গ্রামবাসীর অভিযোগ। তাদের বক্তব্য, গরমকালেও সময়মতো স্কুলের দরজা না খোলার কারণে প্রচুর ছাত্রছাত্রীকে স্কুলের মূল ফটকের বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে দেখা যায়।

    স্কুলের প্রধান শিক্ষক ফজলুল হক বলেন, ‘খুব বৃষ্টি পড়ছিল বলে আমরা স্কুলে দরজার সময় মত আসতে পারিনি। তবে আমরা গ্রামের মোড়েই ছিলাম। ছাত্র-ছাত্রীদের বেশিক্ষণ স্কুলের দরজার বাইরে অপেক্ষা করতে হয়নি।  দু’জন শিক্ষক সময় মতো এসে দরজা খুলেছেন’। অন্যদিকে, গোটা বিষয়টি শোনার পর প্রতাপগঞ্জ পঞ্চায়েতের প্রধান আয়েশা বিবি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘গোটা ঘটনাটি আমাকে কেউ লিখিতভাবে এখনও জানায়নি। রাজ্য সরকার প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য সমস্ত রকমের চেষ্টা করছে। আমরা আশা করব সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকারা সময় মতো স্কুলে আসবেন। যাতে কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগের দিনে কচিকাঁচাদের কষ্ট পেতে না হয়। জয়কৃষ্ণপুর(২)প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘটনাটি কী ঘটেছিল তা আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি’।
  • Link to this news (আজকাল)