• বন্ধুত্ব করে বিদেশ ঘোরানোর ব্যবস্থা, ফেরার সময়েই লাগেজে 'বিশেষ' একটি প্যাকেট, বিমানবন্দরে ধরা পড়ছেন একের পর এক মহিলা...
    আজকাল | ১৬ জুলাই ২০২৫
  • বিভাস ভট্টাচার্য

    বলতে গেলে একদিনও বাদ নেই। প্রায় প্রতিদিনই কলকাতা বিমানবন্দরে ধরা পড়ছে মারিজুয়ানা। ব্যাঙ্কক থেকে বিমানে করে যা এদেশে নিয়ে আসা হচ্ছে। অথচ দেখা গিয়েছে, যারা এই পাচারের দায়ে ধরা পড়ছেন তাঁরা আদৌ এই পাচারের বিষয়ে বিন্দু বিসর্গও জানে না। 

    মঙ্গলবার কলকাতা বিমানবন্দরের একটি সূত্র জানায়, এদিন বিকেল পর্যন্ত ১১কেজি মারিজুয়ানা উদ্ধার হয়েছে। যারা ধরা পড়ছেন তাঁরা অধিকাংশই মহিলা। এই মারিজুয়ানা এদেশে চড়া দামে বিক্রি হয়। 

    পুলিশের একটি সূত্র জানায়, গাঁজা হিসেবে মারিজুয়ানাকে ধরা হলেও নেশার জগতে সাধারণ গাঁজার থেকে এর চাহিদা অনেকগুণ বেশি। পুরিয়া হিসেবে বিক্রি করা হলেও এর দাম হাজার টাকার বেশি। যেখানে এমনি গাঁজার পুরিয়া বিক্রি হয় ১০০ বা ১৫০ টাকায়। 

    স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে পাচারকারী হিসেবে যে মহিলারা ধরা পড়ছেন তাঁরা কারা? সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, এই পাচারকারীদের অধিকাংশই ব্যাঙ্ককে বেড়াতে যাওয়া পর্যটক। যাদেরকে খুব সুকৌশলে ব্যবহার করে এই পাচারের কাজে লাগানো হচ্ছে। 

    আরও পড়ুন: জুনে মুদ্রাস্ফীতির হার কমে ২.১%, সাড়ে ছয় বছরে সর্বনিম্ন, আগস্টে ফের রেপ রেট কমাবে আরবিআই?

    কীভাবে হচ্ছে এই কাজ? সূত্রটি জানায়, দেখা গিয়েছে এই মহিলারা প্রায় সবাই বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে আসক্ত। এদের সঙ্গে সামাজিক মাধ্যমেই আলাপ হচ্ছে বিভিন্ন লোকের সঙ্গে। যার মধ্যে একজন এই ব্যবসা চালায়। আলাপ যখন খুব ভালোভাবে জমে ওঠে তখন এরা এদেশের এই মহিলাদের 'অফার' দেন ব্যাঙ্কক ঘুরে আসার জন্য। যার মধ্যে থাকে একেবারেই নামমাত্র খরচে ব্যাঙ্ককে বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে ঘুরে আসার প্রতিশ্রুতি। কথায় ভুলে অনেকেই এদের ফাঁদে পা দেন। ব্যাঙ্ককে পৌঁছনোর পর সেখানে তাঁর বন্ধুও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেন। নামমাত্র খরচে ঘুরিয়ে দেওয়া হয় বিভিন্ন পর্যটনের জায়গাগুলি। এটা করা হয় স্রেফ বিশ্বাসটা তৈরি করার জন্য।‌ এক্ষেত্রে যে বন্ধুত্ব করেন সে একেবারেই সামনে আসেন না। ব্যস্ততার বাহানা দেখিয়ে দেয়। পাঠিয়ে দেয় নিজের কোনও লোককে। আসল খেলাটা শুরু হয় ফিরে আসার দিন। 

    আরও পড়ুন: ৬৫ বার ইঞ্জিন বন্ধ, ১৭টি মে ডে কল, গত পাঁচ বছরে আহমেদাবাদের মতো আরও বিপর্যয় হতে পারত: ডিজিসিএ

    যে মহিলা পর্যটক ব্যাঙ্ককে গিয়েছিলেন তাঁকে ফেরার সময় ওদেশের বন্ধু বলে ভারতের অমুক জায়গায় তাঁর এক বন্ধু আছে। ফেরার সময় সে যেন একটা প্যাকেট নিয়ে যায়। যেটা কলকাতায় পৌঁছনোর পর তাঁর বন্ধু নিয়ে যাবে। এতদিনের সুন্দর আতিথেয়তার পর স্বাভাবিকভাবেই ওই পর্যটকের 'না' বলার কোনও উপায় থাকে না। সে বিদেশি বন্ধুকে বিশ্বাস করেই ওই প্যাকেট নিয়ে এদেশে ফিরে আসেন। যা বিমানবন্দরে চেকিংয়ে ধরা পড়ে। 

    ওই সূত্রটি জানিয়েছে, ধরা পড়ার পর অধিকাংশ মহিলাই জানায় তাঁদেরকে বলা হয়েছিল প্যাকেটটা ওই দেশ থেকে এই দেশে নিয়ে আসতে হবে। এর বাইরে তারা কিছুই জানে না। ওই সূত্রটির দাবি, পাচারকারী হিসেবে ধরা পড়া এই মহিলাদের আর্থিক অবস্থা যথেষ্টই স্বচ্ছল। ফলে আপাতদৃষ্টিতে এটা কখনোই মনে হয় না যে সামান্য অর্থের জন্য এরা এইভাবে 'ক্যারিয়ার' হিসেবে কাজ করবে। তাঁর কথায়, পরপর এভাবে মারিজুয়ানা-সহ মহিলা পাচারকারী ধরা পড়ার পর এটাই সন্দেহ পাচারকারীদের সফট টার্গেট হল মহিলারা এবং অবশ্যই এই মহিলারা হল সামাজিক মাধ্যমে ভীষণভাবে সক্রিয়। যেখানে ফাঁদ পেতে এরা এভাবে মারিজুয়ানা ব্যাঙ্কক থেকে এদেশে পাচারের চেষ্টা করছে।
  • Link to this news (আজকাল)