চারজনের আধার কার্ড তৈরি করতে এক লক্ষ টাকা দাবি, অভিযোগ পাড়ুইয়ের ধৃত দু’জনের বিরুদ্ধে
বর্তমান | ১৬ জুলাই ২০২৫
সংবাদদাতা, বোলপুর: চারটি আধার কার্ড তৈরির জন্য চাওয়া হয়েছিল এক লক্ষ টাকা। অর্থাৎ কার্ড পিছু ২৫হাজার টাকা। ১৮বছরের ঊর্ধ্বে ভারতীয় নাগরিকের নতুন করে আধার কার্ড তৈরি হচ্ছে না। শুধুমাত্র সংশোধন বা আপডেট করা যাচ্ছে। অথচ কলকাতার দমদমের এক বাসিন্দাকে তা করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছিল পাড়ুইয়ের যুবক শেখ মিরাজ হোসেন। কলকাতা পুলিসের স্পেশাল টাস্কফোর্স(এসটিএফ) হাওড়া থেকে ‘ফলো’ করে এসে রবিবার গভীর রাতে বোলপুরে তাকে ধরে। তারপর পাড়ুই থানার সাত্তোর গ্রামের একটি সাইবার ক্যাফেতে তল্লাশি অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে আধার তৈরির যন্ত্র, অন্যান্য সরঞ্জাম, হার্ডডিস্ক ও একশোর বেশি আধার কার্ড বাজেয়াপ্ত করেন টাস্কফোর্সের আধিকারিকরা। দোকানের মালিক আব্দুল কুদ্দুস ওরফে মুন্নাকেও গ্রেপ্তার করা হয়। বাজেয়াপ্ত করা আধার কার্ডগুলি জালিয়াতি করে বাংলাদেশিদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল কি না খতিয়ে দেখছে পুলিস। সীমান্ত পেরিয়ে পাকাপাকিভাবে ভারতে থাকার জন্য এই কার্ড করা হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। এই চক্রের সঙ্গে পাকিস্তানের কোনও যোগ রয়েছে কি না তাও খতিয়ে দেখছে এসটিএফ।
পুলিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মিরাজের বাড়ি পাড়ুই থানার যাদবপুরে। মুন্নার বাড়ি একই থানার কেন্দ্রডাঙাল এলাকায়। বোলপুর-সিউড়ি রোডের পাশে নিজের বাড়িতেই মুদিখানা দোকান খুলেছিল মুন্না। তবে সেই পাট চুকিয়ে গত দু’বছর ধরে সাইবার ক্যাফে খুলে সে অনলাইন কারবার ও আধার কার্ড তৈরিতে নেমেছিল।
গত রবিবার কলকাতার এক ব্যক্তিকে পুরনো আধার কার্ড নতুন করে বানিয়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছিল মিরাজ। সে মুন্নার আধার তৈরির অথোরাইজেশন মেশিন নিয়ে কলকাতার দমদমে যায়। এরপর সেখানেই এক লক্ষ টাকার বিনিময়ে চারটি নতুন আধার কার্ড করার কথা জানায়। সেখান থেকেই এসটিএফ তার গতিবিধি অনুসরণ করতে থাকে। হাওড়া থেকে বোলপুরে আসতেই তাকে আটক করে এসটিএফ। জিজ্ঞাসাবাদ করে মুন্নার সাইবার ক্যাফের হদিশ পায় এসটিএফ। তাকে নিয়ে গিয়ে ওইদিন রাত সাড়ে ১১টা থেকে ভোর ৩টে পর্যন্ত তল্লাশি চালায়। সেখান থেকে আধার সংক্রান্ত নথি, জাল আধার কার্ড ও অন্যান্য সরঞ্জাম বাজেয়াপ্ত করা হয়। পাশাপাশি বোলপুরের একটি সাইবার ক্যাফেতেও তল্লাশি চালানো হয়। সেখান থেকে একটি ল্যাপটপ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ধৃত দুই যুবকের পরিবারকে এসটিএফ জানায়, তথ্যপ্রযুক্তি আইন ও ফরেনার্স অ্যাক্ট সহ বিভিন্ন ধারায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়েছে। তাদের সাতদিনের পুলিসি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে বিধাননগর আদালত।
এই চক্র দীর্ঘদিন ধরে জালিয়াতি করে আধার কার্ড তৈরি করছিল। পুলিসের অনুমান, মোটা টাকার বিনিময়ে অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশিদের আধার কার্ড করাই ছিল তাদের আসল কারবার। চক্রের মূল মাথা কারা, কোনও সরকারি কর্মী বা আধিকারিক এই জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মুন্নার বাবা গোলাম মাওলা আবুল কালাম বলেন, ছেলে অনলাইনে ব্যবসা করত, এটুকুই জানি। তা বৈধ না অবৈধ ছিল, সেটা বলতে পারব না। তবে আইনি পরামর্শ নিচ্ছি। -নিজস্ব চিত্র