আজকাল ওয়েবডেস্ক: ২১ জুলাই সভার সমর্থনে চুঁচুড়ায় একাধিক ব্যানার টাঙিয়েছিলেন হুগলি জেলা পরিষদের মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ নির্মাল্য চক্রবর্তী। সেই ব্যানার গায়েব হয়ে গিয়েছে। হুগলির মোড়, খাদিনার মোড়, তোলা ফটক সহ বিভিন্ন জায়গা টাঙানো ছিল সেই ব্যানার। কেউ বা কারা বেশ কয়েকটি ব্যানার ছিঁড়ে দিয়েছে। অনেকগুলি ব্যানার পুরোপুরি গায়েব করে দিয়েছে কেউ বা কারা। নির্মাল্য চুঁচুড়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। যে সব জায়গায় সিসি ক্যামেরা নেই, সেই জায়গার ব্যানারই বেশি খুলে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।
কিন্তু কারা এই কাজ করল? বিজেপির অভিযোগ, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফলে এই ঘটনা। বিজেপি নেতা স্বপন পাল বলেন, “চুঁচুড়ায় বিধানসভার টিকিট পাওয়ার জন্য লড়াই শুরু হয়েছে। বর্তমান বিধায়ক ছাড়াও বেশ কয়েকজন দাবিদার রয়েছেন। সেই দ্বন্দ্বের ফলেই দলেরই নেতার টাঙানো ব্যানার গায়েব করে দেওয়া হচ্ছে রাতের অন্ধকারে।“
আরও পড়ুন: ভারতীয় রুপির প্রতীক তৈরি করেছিলেন কারা? একজনকে মনে রাখেনি কেউ
নির্মাল্য বলেন, “হুগলির মোড়ে ৫০ ফুটের একটি ব্যানার টাঙানো হয়েছিল। সেটি ছিঁড়ে দেওয়া হয়েছে। খাদিনা মোড় থেকে তোলা ফটক পর্যন্ত বেশ কয়েকটি ব্যানার ছিল সেগুলি পুরোপুরি গায়েব হয়ে গিয়েছে। কে বা কারা করেছে সেটা জানি না। তবে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছি। বলেছি যেই করে থাকুক পুলিশ যাতে তাঁদের চিহ্নিত করতে পারে। কারণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল যারা করে তৃণমূল কংগ্রেসকে যারা ভালবাসেন তাঁরা এই কাজ করবে না। কারণ আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে দল করি আমরা তৃণমূল কংগ্রেসের সৈনিক।“
বিজেপির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “বিজেপির অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই। যে বা যারাই করে থাকুক পুলিশ তাঁদের চিহ্নিত করুক। কারণ এটা দলকে অবমাননা করা হচ্ছে।“
১৯৯৩ সাল। রাজ্যের ক্ষমতায় জ্যোতি বসুর সরকার। সিপিএমের বিরুদ্ধে ছাপ্পা-রিগিংয়ের মতো অভিযোগ নিয়মিত শোনা যেত সে-সময় বিরোধীদের মুখে। আর সেই সময় বিরোধীপক্ষের অন্যতম লড়াকু মুখ মমতা ব্যানার্জি। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনার জন্য, সচিত্র পরিচয়পত্রের দাবিতে ২১ জুলাই মহাকরণ অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথমে এই কর্মসূচির দিন ঠিক হয়ে ছিল ১৪ জুলাই। কিন্তু, ওই সময় প্রাক্তন রাজ্যপাল নুরুল হাসানের প্রয়াণের কারণে, কর্মসূচির দিন পিছিয়ে ২১ জুলাই করা হয়।
আরও পড়ুন: সিনেমা হলে দর্শক টানতে উদ্যোগী সিদ্দারামাইয়া, টিকিটের দাম বেঁধে দিল কর্ণাটক সরকার
সেদিনের ঘাটন এখনও দগদগে বাংলার রাজনীতিতে। ২১ জুলাই সকাল ১০টা থেকে মহাকরণ অভিযানের জন্য জমায়েত শুরু হয়। কলকাতার পাঁচটি জায়গা থেকে যাত্রা শুরু হয়। এগোতে থাকেন যুব কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকরা। পুরোভাগে ছিলেন যুব কংগ্রেস নেত্রী মমতা নিজে। বিভিন্ন মিছিলে ছিলেন সৌগত রায়, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, মদন মিত্ররা। মহাকরণে পৌঁছনোর আগে পাঁচ দিক থেকে ইব্যারিকেড করে তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ। তাতেই ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়। ধুন্ধুমার শুরু হয়। বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘাত বেঁধে যায় যুব কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকদের।
পুলিশি বাধা ঠেকাতে শুরু হয় ইট-পাথরবৃষ্টি। বিক্ষোভকারীদের হঠাতে পাল্টা কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশ। সবমিলিয়ে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয়। অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয় মেয়ো রোড-রেড রোডের মোড়ে। বোমাও পড়ে। সারা কলকাতা অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। অশান্তির ভরকেন্দ্র ছিল মধ্য কলকাতা। ধীরে ধীরে সারা কলকাতা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পুলিশের ভ্যানে অগ্নি সংযোগের মতো ঘটনাও ঘটে। বিক্ষোভকারীরা এগোতে থাকে, পিছু হঠতে শুরু করে পুলিশ। তখন গুলি চালাতে শুরু করে পুলিশবাহিনী। আর তাতেই প্রাণ যায় ১৩ জন যুব কংগ্রেস কর্মীর।
কার নির্দেশে পুলিশ সেদিন গুলি চালিয়েছিল, সেই প্রশ্নের উত্তর আজও মেলেনি ।