• 'মানুষ চেয়ে ছাগল দামী,খবর গেল বাবার কানে', বিধায়কের ছাগলের মৃত্যুর পর ফের উঠে এল বিখ্যাত এই নাটকের নাম ...
    আজকাল | ১৭ জুলাই ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: ছাগলের মৃত্যুতে শোকের ছায়া। বুধবার বর্ধমানের ভাতারে একটি ছাগল মারা যাওয়ার পর গোটা এলাকা জুড়ে সকলের মন খারাপ। ছাগলটির বয়স হয়েছিল। তবুও সে সবার চেনা ছিল। পুরুষ এই ছাগলটির নাম রামদাস। 

    মঙ্গলবার পর্যন্তও রামদাস বেঁচে ছিল। কিন্তু বুধবার সকালেই সব শেষ। বয়স হয়েছিল ১৮ বছর।   সকাল  ৮ টায় মারা গিয়েছে  রামদাস। এদিনই তাকে সমাধিস্থ করা হয়। 

    এই পর্যন্ত পড়ে  যারা ভাবছেন রামদাস কোনো সাধারণ ছাগল তাহলে কিন্তু তাঁরা ভুল করছেন। তা কিন্তু নয়। রামদাস অবশ্যই একটি ছাগল। তবে যেমন তেমন ছাগল নয়। বিধায়কের আদরের  ছাগল। 

    ভাতারের তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারী। পোড়খাওয়া রাজনৈতিক নেতা। প্রচুর ঝড়ঝাপটা সয়েছেন বিরোধী থাকাকালীন। স্বভাবে ডাকাবুকো এবং কথাবার্তায় প্রচণ্ড খোলামেলা বিধায়কের দুর্বলতার জায়গা ওই ছাগল। যার প্রতি ছিল তাঁর অকৃত্রিম ভালোবাসা। রামদাসকে কাছে ডেকে আদর করতে না পারলে তাঁর কিছুই ভালো লাগত না। এটা তাঁর আত্মীয়স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী থেকে জেলায় তাঁর দলের এবং অনেক দূরের লোকেরাও জানতেন। 

    সম্পর্কে মানগোবিন্দ অধিকারী জেলা পরিষদের শিক্ষা, ও  তথ্য সংস্কৃতি কর্মাধ্যক্ষ শান্তনু কোণারের মেসোমশাই। তিনি জানাচ্ছেন, 'রামদাস মেসোমশাইয়ের খুবই আদরের ছিল। উনি মানুষের পাশাপাশি  পশুপাখিদের ভালবাসেন। সংবেদনশীল মানুষ। বিধায়ক হবার অনেক আগে থেকেই খুব যত্নে ' মানুষ ' হয়েছে রামদাস। বয়সজনিত কারণে সে অসুস্থ ছিল। একটি পা ভেঙে গিয়েছিল। ইউরিন ইনফেকশন হয়েছিল।  এদিন সকালে গিয়ে দেখা যায় সে আর বেঁচে নেই। বিধায়ক খুব দু:খ পেয়েছেন।'

    রামদাস আসলে একটি বড়ো প্রজাতির পুরুষ ছাগল। যাকে চলতি ভাষায় বলা হয় 'খাসি'। বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারী নি:সন্তান এবং পশুপ্রেমী। তাঁর আরও গরু ও ছাগল আছে। আগেও তিনি গরু-ছাগল পুষেছেন। তার মধ্যে রামদাস ছিল বেশি আদরের। তাই তার মৃত্যুতে যথেষ্টই শোক পেয়েছেন মানগোবিন্দ। 

    এই রামদাসকে ওই গ্রামের বাসিন্দারা সবাই চেনেন। ঘটনায় শোক পেয়েছেন তাঁরাও। তাঁরা জানাচ্ছেন,  রামদাস কখনো কারো জমিতে চলে গেলেও কেউ কিছু বলত না। সবাই তাকে চিনত। ধরে বেঁধে বাড়ি পৌঁছে দিত। স্বভাবে নরম রামদাস  কখনও কাউকে গুঁতো দিতে তেড়ে আসত না। বরং মুড ভালো থাকলে নাম ধরে ডাকার পর কাছে এগিয়ে এসে দাঁড়াত। যার জন্য গ্রামের মানুষেরও খুবই প্রিয় ছিল। 

    আরও পড়ুন: মাথায় হাত স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের, এ কী হল সোনার বাজারে

    বিধায়কের এক আত্মীয় শুভেন্দু সাঁই জানাচ্ছেন, 'এই যুগে মানুষ মানুষকে ভালোবাসে না। অনেকেই চেষ্টা করে পরস্পর পরস্পরকে এড়িয়ে যেতে। সেখানে  মনুষ্যতর প্রাণীর প্রতি এই ভালবাসা একটা নজির। এটা সত্যিই প্রশংসনীয়। মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর আমাদেরও খারাপ লাগছে।'

    পশু চিকিৎসক ডা: পার্থ সরকার জানাচ্ছেন,  পশুপাখির প্রতি মানুষের ভালবাসা বাড়ছে। এদিন সকালেই দুর্ঘটনায় আহত কয়েকটি মোষের চিকিৎসার জন্য উদ্যোগী হয় বর্ধমান থানার পুলিশ। অন্যদিকে পুরুষ ছাগল পোষা কমছে। ছাগলের ক্ষেত্রে ১৮ বছর পরিণত বয়স।  তবু একটি প্রাণীর প্রতি এই ভালবাসা অবশ্যই নজির।

    বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারী বলেন, বর্তমানে আমার বাড়িতে ৬ টি গরু ও একটি ছাগল ছিল। কিন্তু সেই পোষ্য ছাগলটি মারা গেল। ১৮ বছরের বেশি আমার কাছে ছিল। দুটি ছাগল ছিল। একটি অনেক আগেই মারা যায়। এদিন আরেকটিও চলে গেল।
  • Link to this news (আজকাল)