• ‘স্লো পয়জনে’ স্বামীকে খুনের চেষ্টার অভিযোগে গ্রেপ্তার স্ত্রী, কারণ ঘিরে ধোঁয়াশা
    প্রতিদিন | ১৭ জুলাই ২০২৫
  • অর্ণব দাস, বারাকপুর: ‘স্লো পয়জনে’ স্বামীকে খুনের চেষ্টা! বাড়ির আশেপাশে সিসিটিভি ক্যামেরা ভেঙে খুনের পরিকল্পনা! খাবারে বিষ মিশিয়ে খাওয়ানো-সহ একাধিক অভিযোগে স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করল নৈহাটি থানার পুলিশ। ঘটনাটি নৈহাটি পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রাজবন্দী গড় এলাকার। বিষয়টি সামনে আসতেই শোরগোল এলাকায়।

    নৈহাটি পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বছর চুয়াল্লিশের দেবেশ চট্টোপাধ্যায়। স্ত্রী রনিতা চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে থাকতেন। দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ দেবেশ। দেখভাল করছিলেন স্ত্রী। বাড়ি থেকে বিশেষ বেরতেন না। নিস্তেজ হয়ে পড়ে থাকতেন। ডাক্তার দেখিয়েও লাভ হচ্ছিল না। বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষা করা হলেও রোগ ধরা পড়ছিল না। শেষ ক’দিন শরীর আরও খারাপ হয়ে যায়।

    এরইমধ্যে গত সোমবার রাতে রনিতা একটি ইনজেকশন দেন। অভিযোগ, এরপরই দেবেশের শরীরে খুব জ্বালা করতে থাকে। ছটফট করতে করতে জ্ঞান হারান দেবেশ। পরে দেখা যায় দেহের একটি অংশে পুড়ে গিয়েছে। এই সবের মধ্যেই তাঁদের বাড়িতে যান এক আত্মীয়া। তাঁকে প্রথমে ঘরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। তিনি কোনওরকমে ঘরে ঢুকে দেখেন, অচৈতন্য অবস্থায় বিছানায় পড়ে রয়েছে দেবেশ। এরপরই পুলিশকে জানানো হয়। দেবেশের আত্মীয় স্বপ্না চক্রবর্তীর কথায়, “দীর্ঘদিন ধরে শুনছি দেবেশকে ঘর থেকে বেরোতে দেয় না। ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখে। আমরা জোর করে ওর বাড়িতে ঢুকলে দেখি অচৈতন্য অবস্থায় বিছানায় পড়ে রয়েছে দেবেশ। এরপর ঘটনাটি কাউন্সিলরকে জানিয়ে ঘরে গিয়ে দেখি দেবেশের পেটের বাঁ দিক পুড়ে গিয়েছে। জিজ্ঞাসা করলে বলে স্ত্রী ইনজেকশন দেওয়ার ফলে এমনটা হয়েছে। এরপরই পুলিশকে জানানো হয়।”

    চিকিৎসার জন্য দেবেশকে নৈহাটি স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। করানো হয়। স্বামীকে খুনের চেষ্টার অভিযোগে বুধবার স্ত্রী রনিতাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এদিনই তাঁকে বারাকপুর আদালতে পেশ করা হলে ৩ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। এরপর সামনে আসে, ধৃত স্বামীর অসুস্থতার নাম করে এলাকায় ঋণ নিয়েছেন। বাড়ির সামনের সিসি ক্যামেরা ভেঙে দিয়েছেন বলেও অভিযোগ। ঘটনায় ঘনীভূত হয়েছে রহস্য। ধৃতকে জিজ্ঞাসা করে রহস্য উদঘাটন করতে চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। নেওয়া হচ্ছে বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকদেরও পরামর্শ।

    চিকিৎসাধীন অবস্থায় দেবেশ জানিয়েছেন, “ডাক্তার দেখিয়ে সুস্থ হলেও ফের শরীর খারাপ হচ্ছিল। রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টেও সব ভালো। চিকিৎসকও বুঝতে পারছিলেন না। তখন বুঝিনি খাবারের সঙ্গে স্ত্রী ওষুধ মিশিয়ে খাইয়ে আমায় নিস্তেজ করে দিচ্ছিল।” তিনি আরও বলেন, “শেষ ক’দিন ধরে শরীর খুব খারাপ হয়ে যায়। এরইমধ্যে গত সোমবার রাতে দেখি স্ত্রী হঠাৎ ইনজেকশন দিল। জ্বালায় ছটফট করতে করতে জ্ঞান হারাই। আমাকে যেদিন ইনজেকশন দেয় সেদিন বাড়ির উলটোদিকের সিসি ক্যামেরা রাত ১টায় ভেঙে দিয়েছিলও। এর মানে নিশ্চয়ই অন্য কোনও পরিকল্পনা ছিল।”

    অভিযুক্ত রনিতা ইনজেকশন দেওয়ার অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, “দেবেশ ঘুমাচ্ছিল। ভুলভাল বকছিল। ওষুধের দোকান থেকে ইনজেকশন এনে দিয়েছি। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ইনজেকশন দেওয়াটাই আমার ভুল হয়েছে।” এনিয়ে বিধায়ক সনৎ দে জানিয়েছেন, “দেবেশ খুবই ভালো ছেলে। ভালো চাকরি করে। এলাকাবাসীর তৎপরতায় তাকে উদ্ধার করা গিয়েছে। ওর অসুস্থতার নাম করে স্ত্রী পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-পরিজনের থেকে অনেক টাকা ধারে নিয়েছে শুনেছি। পুলিশি তদন্তে সত্যিটা উঠে আসবে।”
  • Link to this news (প্রতিদিন)