• জলবন্দি ইংলিশবাজার শহর, পুরসভার ভূমিকায় প্রশ্ন বিরোধীদের
    বর্তমান | ১৭ জুলাই ২০২৫
  • সংবাদদাতা, মালদহ: রাতভর বৃষ্টি, চলল বুধবার সকালেও। তাতেই জল থইথই মালদহ শহর। বেরিয়ে এল নিকাশি ব্যবস্থার কঙ্কালসার দশা। ইংলিশবাজারে জল-যন্ত্রণার পুনরাবৃত্তি ঘটতেই পুরসভার ব্যর্থতায় সরব বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। জলযন্ত্রণায় ক্ষুব্ধ মানুষও। নাগরিকদের ক্ষোভকে সামনে রেখে তৃণমূল পরিচালিত ইংলিশবাজার পুরসভাকে তীব্র আক্রমণ বিজেপির। আক্রমণ শানিয়েছে বামদলগুলিও। এই পরিস্থিতিতে পুরচেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীর দাবি, অতিরিক্ত বৃষ্টি হওয়াতেই জল জমেছিল। বিকালের পর থেকে জল নামতে শুরু করেছে। বিরোধীরা চোখে ঠুলি পড়ে বিরোধিতা করছেন বলে তির্যক আক্রমণ করেছেন তিনি।

    সোমবার রাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টির পুনরাবৃত্তি হয় মঙ্গলবার। দফায় দফায় বৃষ্টি হওয়ায় জল জমতে শুরু করে ইংলিশবাজার পুরসভার বিস্তীর্ণ এলাকায়। কোথাও কোথাও এক হাঁটু জলও দাঁড়িয়ে পড়ে। বাজার অফিস সহ কর্মক্ষেত্রে পৌঁছতে নাজেহাল হন আমজনতা। ক্ষোভ উগড়ে দেন নাগরিকরা। মালদহ মেডিক্যালের কিছু অংশেও ফের জল দাঁড়িয়ে পড়ে। ক্ষুব্ধ নাগরিকরা অনেকেই নিজেদের জলমগ্ন এলাকার ছবি তুলে ফেসবুক সহ বিভিন্ন সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেন। স্বাভাবিকভাবে ধেয়ে আসে নাগরিকদের বাঁকা মন্তব্যও। বেশিরভাগ নাগরিকের মন্তব্যের নিশানা ছিল পুরসভার ভূমিকা। এক নেটিজেন মন্তব্য করেন, ইংলিশবাজার পুরসভার দৌলতে নিজেদের পাড়াতেই এখন ভেনিস দেখতে পাচ্ছি। যা অবস্থা এবার গন্ডোলা (এক ধরণের ছোটো নৌকা) চালাতে না হয়। ইংলিশবাজারের বাসিন্দা কনককুমার দাস বলেন, বর্ষা আসতেই আমাদের দুর্ভোগ শুরু হয়ে গেল। বৃষ্টিতে পাড়া থইথই। বাড়িতে বসে থাকলে তো চলবে না! তাই এক হাঁটু জল কাটিয়েই বাজার থেকে অফিস সবই করতে হচ্ছে। নাগরিক পারমিতা সূত্রধরের কথায়,  প্রতিবারই শুনি জল-যন্ত্রণার অবসান ঘটবে। আমাদের দুর্ভোগের সমাধান হয় না। ফি বছর শুধু প্রতিশ্রুতির বন্যা বয়ে যায়।

    এই ক্ষোভকেই তুরুপের তাস করে পুরসভাকে কঠোর আক্রমণ করেন বিরোধী দলনেতা অম্লান ভাদুড়ি। তিনি বলেন, কয়েক বছরে তিন কোটি টাকারও বেশি খরচ করেছে পুরসভা। পুরোটাই আসলে ভস্মে ঘি ঢালা। ঢাকঢোল পিটিয়ে বলা হল ড্রেন বানিয়ে শহরের জল মহানন্দায় ফেলা হচ্ছে। শহর ডুববে না। চেয়ারম্যান আসলে নতুন নতুন অজুহাত খুঁজে বের করেন। উনি চেয়ারম্যান হিসেবে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের দায়িত্ব কৃষ্ণেন্দুবাবু এড়িয়ে যেতে পারেন না। ওনার মতলবই হল কর আদায়ের নাম করে সাধারণ মানুষের পকেট খালি করা। ওরা নিশ্চিন্ত থাকুক, বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের এই অপদার্থতার জবাব দেবেন ইংলিশবাজারের মানুষ।

    পাল্টা কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী বলেন, লাগাতার বৃষ্টি হওয়াতেই কিছু এলাকায় জল জমেছে। ড্রেনের ধারণ ক্ষমতার অনেক বেশি বৃষ্টি হওয়াতেই জল জমেছিল। কিন্তু প্রায় সব এলাকা থেকেই বিকালের মধ্যে জল নেমে গিয়েছে। ৫৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে যে ড্রেন আমরা করেছি তারই সুফল হল দিনের পর দিন জল জমে থাকছে না। বিরোধী দলনেতা কানে তুলো গুঁজে থাকেন। পুরসভার বৈঠকে কী আলোচনা হচ্ছে কিছুই শোনেন না। উনি বরং গুজরাত দিল্লি গিয়ে দেখে আসুন ওখানকার মানুষের কী অবস্থা। আমরা রাজ্য সরকারের কাছে আরও অর্থ চেয়েছি। জল জমার সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হবে না। 

    আবহাওয়া আধিকারিক তপনকুমার দাস বলেন, মঙ্গলবার সকাল ৮.৩০টা থেকে বুধবার বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আরও তিনদিন হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।  মালদহ মেডিক্যালে জল জমেছে। - নিজস্ব চিত্র।
  • Link to this news (বর্তমান)