• বাংড়ি নদীতে হড়পা বান, যাত্রী সহ আটকে গেল বাস! বাঁচার আর্তি ২১ পড়ুয়া সহ ৪০ জনের, পরে উদ্ধার
    বর্তমান | ১৭ জুলাই ২০২৫
  • সংবাদদাতা, আলিপুরদুয়ার: মাদারিহাট থেকে টোটোপাড়া ২২ কিমি রাজ্য সড়কের মাঝে একাধিক নদী পেরতে হয়। বুধবার সকালে সেই রাস্তায় বাংড়ি নদীতে হড়পা বানের স্রোতে আটকে যায় যাত্রীবাহী বাস। বাসে পড়ুয়া ও সাধারণ যাত্রী মিলে ৪০ জন ছিলেন। স্রোতে ভেসে যাওয়ার ভয়ে যাত্রীরা আতঙ্কে কেউই নামতে পারেননি। বাসটি একসময় অনেকটাই কাত হয়ে যায়। এতে চিৎকার জুড়ে দেন সকলে। প্রায় ৩০ মিনিট আটকে থাকার পর জল কমলে মাদারিহাট থানার উদ্ধারকারী টিম একে একে সকলকে ডাঙায় নিয়ে আসে। তবে, বাসটি উদ্ধার করতে তিনঘণ্টা সময় লেগে যায়। 

    টোটোপাড়া থেকে বেসরকারি বাসটি সকাল সাড়ে ৯টায় মাদারিহাটের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। রাজ্য সড়কে থাকা কোনও নদীতেই সেতু নেই। ফলে নদীর উপর দিয়েই যানবাহন পারাপার করে। টোটোপাড়া থেকে ছাড়ার পর বাসটি তিথি ও হাউড়ি নদী পেরিয়ে যায়। তখনও বৃষ্টি হচ্ছিল। ১০টা নাগাদ বাংড়ি নদীতে নামতেই হড়পা বান আসে। পাথরে আটকে যায় চাকা। স্রোতের ধাক্কায় টলতে থাকে বাস। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ৪০ জন যাত্রীর মধ্যে ২১ জন পড়ুয়া ছিল। তারা মাদারিহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী। 

    যাত্রীরা ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে চিৎকার করতে থাকেন। খবর পেয়ে মাদারিহাট থানার ওসি অসীম মজুমদারের নেতৃত্ব বিশাল পুলিস বাহিনী চলে আসে বাংড়ি নদীর চরে। কিন্তু স্রোতের কারণে পুলিসের উদ্ধারকারী দল নদীতে নামতে সাহস পাচ্ছিল না। 

    শেষপর্যন্ত জল কিছুটা কমার পর উদ্ধারকারী দল প্রথমে ২১ জন পড়ুয়া ও পরে ১৯ জন যাত্রীকে বাস থেকে উদ্ধার করে। চোখেমুখে আতঙ্ক নিয়ে দশম শ্রেণির ছাত্র সোনম কার্জি বলে, বর্ষার সময় টোটোপাড়া থেকে নদী পেরিয়ে আমাদের স্কুলে যেতে সমস্যা হয়। এদিন অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছি। 

    এই ঘটনার পর বাসের পড়ুয়ারা কেউই স্কুলে যায়নি। অভিভাবকরা এসে বাড়ি নিয়ে যান। অভিভাবক রতন টোটো বলেন, বৃষ্টি হলে ছেলেকে আর স্কুলে পাঠাব না। ওই বাসের যাত্রী মোঙ্গরা ওরাওঁয়ের কথায়, হড়পার স্রোতে ভেসে যেতে যেতে বাসটি নদীর মাঝে আটকে যায়। বরাত জোরে সকলে বেঁচে গিয়েছি। 

    তবে, মাদারিহাট-টোটোপাড়া রাজ্য সড়কে বর্ষার সময় এই ঘটনা নতুন নয়। গতবছর বর্ষায় টোটোপাড়ার বাসিন্দা মাদারিহাট পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আশা বোমজানের গাড়িও বাংড়ির জলের স্রোতে ভেসে গিয়েছিল। তিনিও নদীর মাঝে গাড়ির ভিতরে দীর্ঘক্ষণ আটকে ছিলেন। 

    টোটো কল্যাণ সমিতির সম্পাদক বকুল টোটো বলেন, বাংড়ি, তিথি, হাউড়ি কোনও নদীতেই সেতু নেই। আমাদের আর কতদিন এভাবে বঞ্চিত থাকতে হবে কে জানে।

    দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাসের মালিক মোহন সাহা বলেন, জল ঢুকে যাওয়ায় ইঞ্জিন সহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি কাজ করছে না। 

    আলিপুরদুয়ারের পুলিস সুপার ওয়াই রঘুবংশী বলেন, বাস ও যাত্রীদের উদ্ধার করা গিয়েছে। 

     বাসটিকে উদ্ধার করার চেষ্টা। - নিজস্ব চিত্র।
  • Link to this news (বর্তমান)