• নলহাটিতে উচ্ছেদ অভিযান স্থগিত, ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিল রেল
    বর্তমান | ১৭ জুলাই ২০২৫
  • সংবাদদাতা, রামপুরহাট: বর্ষার এই সময় ছেলেমেয়েদের নিয়ে কোথায় যাব? মাথা গোঁজার কোনও ঠাঁই নেই। হাতজোড় করে, কাকুতিমিনতি করে আপাতত উচ্ছেদ হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেলেন নলহাটিতে রেলের জায়গায় বসবাসকারী প্রায় ৬০০টি পরিবার। রেল পুলিস তাঁদের সরে যাওয়ার জন্য ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিল। 

    নলহাটি জংশন স্টশনের কাছে সাহেববাগান পাড়া ও খালাসিপাড়ায় গত প্রায় ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ছিঁটেবেড়া তৈরি করে বসবাস করছে ওই পরিবারগুলি। প্রায় তিন হাজার বাসিন্দা বসবাস করেন। এদের কেউ পরিচারিকার কাজ করেন কেউবা হকার। আবার কেউ স্থানীয় দোকানে দিনমজুরের কাজ করে কোনরকমে দিন গুজরান করেন। দিনকয়েক আগে রেলের পক্ষ থেকে বস্তিবাসীদের নোটিস দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়, ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে রেলের জায়গা খালি করে দিতে হবে। নচেত উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। সেক্ষেত্রে মালপত্রের ক্ষতি হলে রেল দায়ী থাকবে না। নোটিস পেয়ে মাথায় হাত পড়ে জয়দেব যাদব, অঞ্জলি বিশ্বাসদের। 

    বুধবার নির্ধারিত দিনে জেসিবি, প্রচুর ফোর্স নিয়ে হাজির হয় রেল পুলিস ও আধিকারিকরা। তাঁরা বসবাসকারীদের সরে যাওয়ার জন্য বলে। সেইসময় কাঁদতে কাঁদতে বস্তিবাসীরা হাতেজোড় করে পায়ে ধরে নিবেদন করেন, ভারী বৃষ্টির এই সময় যাব কোথায়। আশ্রয় চলে গেলে বৃষ্টির মধ্যে খোলা আকাশের নিচে থাকা ছাড়া উপায় থাকবে না। এভাবেই নিজেদের অসহায়তার কথা তুলে ধরেন। বসবাসকারীরা বলেন, দীর্ঘ ৫০বছর ধরে এখানে বসবাস করছি। জন্মও এখানে হয়েছে। ভাবী বর্ষার এই সময় এই সময় ছেলেমেয়ে, নাতি, নাতনিদের নিয়ে যাব কোথায়? নিজস্ব কোনও জমিও নেই যে ঘর বানিয়ে থাকব। ভাড়া নিয়ে থাকব তারও উপায় নেই। সামান্য‌ আ঩য়ে সংসার চালানোই দায়, তার উপরে এত ভাড়া কোথায় পাব? 

    স্থানীয় অনেকেই বলছেন, উচ্ছেদ করার আগে পুনর্বাসন বা বিকল্প আবাসনের ব্যবস্থা করা উচিত। এখানে থাকা ছোট শিশুদের দেখে খুবই কষ্ট হচ্ছে। বর্ষার রেলের এই চূড়ান্ত অমানবিক সিদ্ধান্তের সমালোচনা শুরু হয় সর্বস্তরে। অঞ্জলি বিশ্বাস বলেন, ৪২বছর ধরে এখানে বসবাস করছি। ছেলেপুলে নিয়ে বৃষ্টির মধ্যে অন্য কোথায় যাব? তাই দুর্গাপুজো পর্যন্ত সময় চেয়েছি। 

    অবশেষে অসহায় পরিবারগুলির আবেদনে সাড় দিয়ে আপাতত উচ্ছেদ অভিযান স্থগিত রাখে রেল। নলহাটি আরপিএফ ইন্সপেক্টর এএইচ যাদব বলেন, বসবাসকারীরা সময় চেয়ে আবেদন জানায়। মানবিক দিক থেকে বিবেচনা করে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে ওই জায়গায় বসবাসকারীরা স্বইচ্ছায় সরে যাবেন সেব্যাপারে জানিয়েছেন। কয়েক মাস সময় পেয়ে কিছুটা হলেও খুশি বস্তির বাসিন্দারা। তাঁরা জানিয়েছেন, এর মধ্যেই অন্যত্র মাথা গোঁজার ব্যবস্থা করে নেবেন তাঁরা।
  • Link to this news (বর্তমান)