সংবাদদাতা বেলদা: কেশিয়াড়ি বিডিও অফিসের হেড ক্লার্কের খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত শিবু রাউল তৃণমূলের দাপুটে ছাত্রনেতা! কেশিয়াড়ি গভর্নমেন্ট জেনারেল ডিগ্রি কলেজের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের মনোনীত ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক ছিল সে। বিষয়টি সামনে আসতেই তোলপাড় শুরু হয়েছে গোটা জেলায়। এমনিতেই কলেজ ক্যাম্পাসগুলিতে ছাত্রনেতাদের ‘দাদাগিরি’ নিয়ে এখন বেশ বিড়ম্বনায় শাসকদল তৃণমূল। তার উপর কেশিয়াড়ির হত্যাকাণ্ডে ছাত্রনেতা অভিযুক্ত হওয়ায় চরম অস্বস্তিতে পড়েছেন জেলারা শাসক নেতারা। সুযোগ বুঝে আক্রমণ শানিয়েছে বিরোধী দলগুলি। সিপিএম-কংগ্রেস ও বিজেপি একযোগে ছাত্রনেতার শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছে। তবে, তৃণমূলের স্থানীয় বিধায়ক ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও সংস্রব নেই বলে দাবি করেছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে কেশিয়াড়ির একটি ভাড়া বাড়ি থেকে ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয় বিডিও অফিসের হেড ক্লার্ক অভিষেক গঙ্গোপাধ্যায়ের। তদন্তে নেমে ওই ভাড়া বাড়িতে অভিষেকের পাশের রুমে থাকা শিবুকে গ্রেপ্তার করে পুলিস। বুধবার খড়্গপুর মহকুমা আদালতে পেশ করলে বিচারক তিনদিনের পুলিস হেফাজতের নির্দেশ দেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিস জানতে পারে, সোমবার রাত প্রায় এগারোটা নাগাদ অভিষেকের সঙ্গে তুমুল বচসা হয় শিবুর। তখনই ধারাল অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপালে ঘটনাস্থলে লুটিয়ে পড়েন অভিষেকবাবু। এরপর দরজা লাগিয়ে সেখান থেকে চম্পট দেয় অভিযুক্ত শিবু। অভিষেকবাবুর স্ত্রী শিল্পী চট্টোপাধ্যায় গঙ্গোপাধ্যায় কেশিয়াড়ি থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেন।
কলেজ সূত্রে খবর ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে কেশিয়াড়ি কলেজে ভর্তি হয়েছিল শিবু। ২৩ সালে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের পক্ষ থেকে তাকে কলেজের ছাত্র নেতা হিসেবে মনোনীত করে সাধারণ সম্পাদকের পদ দেওয়া হয়। সেই সময় কলেজে দাপুটে নেতা ছিল সে। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কেশিয়াড়ি ব্লকের সভাপতি দেবাশিস দে বলেন, ‘২৩ সালে শিবু কলেজের দায়িত্ব পেলেও পরবর্তীকালে তার আচরণ ঠিক না থাকায় পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকে কলেজের সঙ্গে তার কোনও যোগাযোগ ছিল না।’ তবে, স্থানীয় সূত্রে অভিযোগ, কলেজের নানা বিষয়ে নাক গলাতে দেখা গিয়েছে শিবুকে। বুধবার কেশিয়াড়ি থানায় গিয়েছিলেন বিধায়ক পরেশচন্দ্র মুর্মু। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে কেশিয়াড়িতে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তবে, নৃশংস এই হত্যাকান্ড রীতিমতো শিউরে ওঠার মতো। এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। আশাকরি, পুলিস এর সঠিক তদন্ত করে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেবে।’
বিধায়ক রাজনীতির সঙ্গে কোনও যোগ নেই বললেও রাজনীতি করতে ছাড়ছে না বিজেপি। বিধায়কের সঙ্গে শিবুর একাধিক ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করে ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির যোগ রয়েছে বলে দাবি করেছে বিজেপি। গেরুয়া শিবিরের নেতা গৌরীশংকর অধিকারী বলেন, ‘কেশিয়াড়িতে ভয়ানক এই হত্যাকাণ্ডে মূল অভিযুক্ত হিসেবে বিধায়ক ঘনিষ্ঠ ছাত্রনেতা শিবু রাউলের নাম উঠে আসছে। তার গ্রেপ্তারির পর বাঁচাতে থানা পর্যন্ত ছুটে গিয়েছিলেন বিধায়ক। আমরা চাই, এই ঘটনার সঠিক তদন্ত হোক।’ সিপিএম ও কংগ্রেস ঘটনাটিকে নিন্দনীয় অ্যাখ্যা দিয়ে অভিযুক্তের কঠোর শাস্তির দাবি করেছে। ধৃত অভিযুক্ত।-নিজস্ব চিত্র