• অসুস্থ হয়ে স্ত্রীর মৃত্যু, পরের দিনই শ্মশানে গিয়ে আত্মঘাতী স্বামী, শোকস্তব্ধ নারায়ণগড়
    বর্তমান | ১৭ জুলাই ২০২৫
  • সংবাদদাতা, বেলদা: অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয়েছে স্ত্রীর। তাঁর শেষকৃত্যের পরের দিনই শ্মশানে গিয়ে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হলেন স্বামী। নারায়ণগড় থানার রামপুরা গ্রামে ঘটে যাওয়া এই মর্মান্তিক ঘটনায় শোকস্তব্ধ এলাকা।

    স্ত্রীকে চোখের আড়াল করতেন না নারায়ণগড়ের রামপুরা গ্রামের বাসিন্দা সুনীল সিং। তাঁদের ভালোবাসা নিয়ে রীতিমতো চর্চা হতো গ্রামে। বছর ২৮ আগে বিয়ে করেছিলেন। ২৭ বছরের একটি ছেলেও রয়েছে তাঁর। গত কয়েক বছর ধরে স্ত্রী অঞ্জলি অসুস্থ ছিল। লিভার জন্ডিসের আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। ডাক্তার বলেছে অসুখ সারাতে সময় লাগবে। বাড়িতে অসুস্থ স্ত্রীকে রাখা নিয়ে ছেলের সঙ্গে বনিবনা হচ্ছিল না। তাই স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়াবাড়িতে আলাদা থাকতেন সুনীলবাবু। কিন্তু গত কয়েকদিনে অসুস্থতা বাড়তে থাকে। সোমবার রাতেই মৃত্যু হয় ৪৮ বছর বয়সি অঞ্জলি দেবীর। 

    মঙ্গলবার গ্রামের পাশেই শ্মশানে চোখের জলে স্ত্রীকে শেষ বিদায় জানান সুনীলবাবু। প্রতিবেশীরা জানান, স্ত্রীর চিতায় অগ্নিসংযোগের পর দীর্ঘক্ষণ সেই জ্বলন্ত চিতার দিকে তাকিয়ে নিশ্চুপ হয়ে বসেছিলেন তিনি। বাড়ি ফিরে সারাক্ষণ মনমরা হয়েছিলেন। বুধবার সকালে ভাড়াবাড়ি থেকে একাই বেরিয়ে যান। তারপর থেকে তার আর খোঁজ পায়নি গ্রামের বাসিন্দারা। এদিন গ্রামের এক বৃদ্ধ মারা গেলে তাকে গ্রামের শেষ প্রান্তে ওই শ্মশানে পোড়াতে গেলে তারা দেখেন, শ্মশানে থাকা একটি গাছে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলছে ৫১ বছরের সুনীল সিং। আর তাঁর ঝুলন্ত মৃতদেহের পাশে তখনও ধিকিধিকি করে জ্বলছে স্ত্রী অঞ্জলি দেবীর চিতা। ঠিক সিনেমার মতো। স্ত্রীর এভাবে চলে যাওয়া হয়তো মেনে নিতে পারেননি তিনি। 

    গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, স্ত্রীকে খুব ভালোবাসত সুনীল। চোখের আড়াল হতে দিত না। শুনতাম স্ত্রীকে বলত, তুমি না থাকলে আমি আর থাকব না। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর থেকেই মনমরা হয়ে গিয়েছিল। দুপুরে খবর পেয়ে শ্মশানে গিয়ে দেখি, তাঁর চিতার পাশেই একটি গাছে গলায় দড়ি দিয়েছে সে। সত্যি খুব দুঃখজনক ঘটনা। পরিবারের এক সদস্য বলেন, নিজের স্ত্রীকে খুব ভালোবাসত সুনীল। স্ত্রী অসুস্থ হওয়ার পর ছেলের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় স্ত্রীকে ভালো রাখবে বলে আলাদা বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকত। কিন্তু এরকম ঘটনা ঘটাবে ভাবতেও পারিনি। বুধবার দুপুরে গ্রামবাসীদের কাছ থেকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় নারায়ণগড় থানার পুলিস। সেখানে গিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে। বৃহস্পতিবার মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে পাঠাবে পুলিস। 

     ঘটনাস্থলে পুলিস।-নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)