নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁকুড়া: প্রকাশ্যে শৌচকর্মের জেরে গঙ্গাজলঘাটির দুর্লভপুরে ডায়ারিয়া ছড়িয়ে পড়ে। এমনটাই দাবি বাঁকুড়ার উপমুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক(২) দেবব্রত দাসের। ওই সংক্রান্ত রিপোর্ট তৈরি করে রাজ্যে পাঠানো হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। এই ঘটনায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে। কারণ, নির্মল ব্লক হিসেবে ঘোষিত হয়েছে গঙ্গাজলঘাটি। ঘটনায় প্রশাসন ও স্বাস্থ্যদপ্তরের মধ্যে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে।
জনস্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বে থাকা দেবব্রতবাবু বলেন, দুর্লভপুরের একটি পুকুরের জল থেকে ডায়ারিয়া ছড়িয়েছিল। সরেজমিনে তদন্ত করে আমরা বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি। ওই পুকুরের পাড় সংলগ্ন এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা শৌচকর্ম করেন। সেই পুকুরের জল বাসন ধোয়া ও কাপড় কাচার কাজে ব্যবহৃত হয়। ডায়ারিয়া সংক্রান্ত রিপোর্টে আমরা বিষয়টি উল্লেখ করব। তা রাজ্যে পাঠানো হবে। বিষয়টি নিয়ে গঙ্গাজলঘাটির বিডিও মৃন্ময়ী চট্টোপাধ্যায় কোনও মন্তব্য করতে চাননি। বাঁকুড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক(জেলা পরিষদ) রোহন লক্ষ্মীকান্ত যোশী বলেন, বাঁকুড়া নির্মল জেলা হিসেবে ঘোষিত হয়েছিল। গঙ্গাজলঘাটি ব্লককেও নির্মল ঘোষণা করা হয়। খোলা স্থানে শৌচকর্ম করার কারণেই ডায়ারিয়া ছড়িয়েছিল কি না, তা এখনও নিশ্চিত নয়। জল সহ সংগৃহীত অন্যান্য নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার পর এব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে। তিনি আরও বলেন, সংশ্লিষ্ট পুকুরের জল শোধন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ধীরে ধীরে রোগের প্রকোপ কমছে। বর্তমানে হাসপাতালে ১১ জন ডায়ারিয়া আক্রান্তের চিকিৎসা চলছে। উল্লেখ্য, সপ্তাহখানেক আগে দুর্লভপুর লোহার পাড়ায় ডায়ারিয়া ছড়িয়ে পড়ে। পেটের রোগে প্রায় ২০০ জন আক্রান্ত হন। তাঁদের মধ্যে অনেককে অমরকানন গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। ওই ঘটনায় প্রাথমিকভাবে গঙ্গাজলঘাটি ব্লক প্রশাসন ও স্বাস্থ্যদপ্তরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। প্রথম দিকে তারা বিষয়টিকে আমল দেয়নি বলে অভিযোগ। বাঁকুড়ার সাংসদ অরূপ চক্রবর্তী জেলাশাসককে ফোন করার পর ব্লক প্রশাসন ও স্বাস্থ্যদপ্তরের টনক নড়ে। এমনকী, সরকারি সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও আক্রান্তদের বাজার থেকে ওষুধ কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে বলে সাংসদ দাবি করেন। জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে আক্রান্তদের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। এলাকায় মেডিক্যাল ক্যাম্প বসানো হয়। জল ও আক্রান্তদের মলের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরিস্থিতি অন্যদিকে মোড় নিচ্ছে বুঝতে পেরে বাঁকুড়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শ্যামল সোরেন ও উপমুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবব্রত দাস পরপর এলাকায় যান।
ওই ঘটনার পর গঙ্গাজলঘাটি ব্লক প্রশাসন ও স্বাস্থ্যদপ্তর দায় ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করে। আধিকারিকদের মধ্যেও বিষয়টি নিয়ে টানাপোড়েন শুরু হয়। জেলা স্বাস্থ্যদপ্তরের এক শীর্ষ আধিকারিক জনস্বাস্থ্য বিভাগের উপর দায় ঠেলে কার্যত হাত ধুয়ে ফেলেন। জনস্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকরাও গাফিলতি মানতে চাননি। এবার প্রকাশ্যে শৌচকর্ম নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গেই কার্যত স্বাস্থ্যদপ্তরের বিতর্ক শুরু হল।