দলের নির্দেশে ইস্তফা তমলুক সমবায় ব্যাঙ্কের সদ্য নির্বাচিত চেয়ারম্যানের
বর্তমান | ১৭ জুলাই ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: দায়িত্বভার নেওয়ার আগেই পদ ছাড়লেন তমলুক টাউন কো-অপারেটিভ ক্রেডিট সোসাইটির চেয়ারম্যান তৃণমূল নেতা বিশ্বনাথ মহাপাত্র। গত ১২ জুলাই দলের প্যানেলকে চ্যালেঞ্জ করে তমলুক শহরের ওই সমবায় সমিতিতে ভোটাভুটির মাধ্যমে বোর্ড গঠন করা হয়। চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, সেক্রেটারি প্রভৃতি পদে নির্বাচন হয়। কিন্তু, দলের প্যানেলকে চ্যালেঞ্জ করাটা ভালো চোখে দেখেনি নেতৃত্ব। ওই ঘটনার পরই সোসাইটির চেয়ারম্যান বিশ্বনাথবাবুকে অবিলম্বে ইস্তফা দেওয়ার জন্য দলের পক্ষ থেকে নির্দেশ পাঠানো হয়। সেই নির্দেশ মেনেই মঙ্গলবার রাতে বিশ্বনাথবাবু বোর্ড অব ডিরেক্টরের উদ্দেশ্যে ইস্তফাপত্র লিখেছেন। পাশাপাশি তিনি সরে দাঁড়াচ্ছেন বলে দলের জেলা সভাপতি সুজিত রায়কেও চিঠি দিয়েছেন। গোটা ঘটনায় তমলুক শহর তোলপাড়। বিশ্বনাথবাবু বলেন, আমি বিষয়টি নিয়ে সংবাদ মাধ্যমকে কিছু বলতে চাই না।
১৮ জুলাই শুক্রবার, বিকেল ৫টায় তমলুক শহরের নাইট ব্যাঙ্ক হিসেবে পরিচিত ওই সোসাইটির বোর্ড গঠনের পর প্রথম সভা হওয়ার কথা। সেখানে স্পেশাল অফিসারের কাছ থেকে দায়িত্ব হস্তান্তর, সমিতির উন্নয়ন নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সহ পাঁচ দফা অ্যাজেন্ডায় মিটিং হওয়ার কথা। ২০১৯ সালে জুলাই মাসে আগের বোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়। পাঁচ বছর বাদে নির্বাচিত বোর্ডের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর হবে। কিন্তু, সেই হস্তান্তরের আগেই চেয়ারম্যান ইস্তফা দিয়েছেন। যে কারণে নতুন করে বোর্ড গঠন হবে। ডিরেক্টর বোর্ডের প্রথম সভায় চেয়ারম্যানের ইস্তফাপত্র গৃহীত হবে।
প্রায় শতবর্ষ প্রাচীন এই সমবায় সমিতির রাশ কোন দিকে থাকবে, তা নিয়ে শাসক দলের দুই শিবিরের মধ্যে সংঘাত তুঙ্গে। শহর তৃণমূল সভাপতি চঞ্চল খাঁড়া এই সমবায় সমিতির রাশ নিজের হাতে রাখতে মরিয়া বলে অভিযোগ। ওই সমবায় সমিতি থেকে ৫০০ মিটার দূরে অবস্থিত তমলুক-ঘাটাল সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক। সেই ব্যাঙ্কের ভাইস চেয়ারম্যান চঞ্চল। আবার, শেষমুহূর্তে প্যানেল রদবদল করে তমলুক টাউন কো-অপারেটিভ ক্রেডিট সোসাইটিতে তাঁকে ডিরেক্টরও করা হয়েছে। বিপক্ষ গোষ্ঠীর অভিযোগ, ডিরেক্টর হওয়ার পর চঞ্চল খাঁডার লক্ষ্য, নাইট ব্যাঙ্কের বোর্ডের রাশ নিজের পক্ষে রাখা। অথচ, বোর্ডের ১২ জন ডিরেক্টরের মধ্যে আটজন তাঁর বিপক্ষে। গত ১২ জুলাই ভোটাভুটির মাধ্যমে বোর্ড গঠন করা হয়। সেদিন শহর তৃণমূল সভাপতি সহ মোট চারজন ডিরেক্টর ওই ভোটাভুটি বয়কট করেন। যদিও আটজন সহমতের ভিত্তিতে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও সেক্রেটারি নির্বাচন করেন। কিন্তু, দল ওই ভোটাভুটি অনুমোদন করছে না। তাই অবিলম্বে ইস্তফা দেওয়ার নির্দেশ এসেছিল। সেইমতো চেয়ারম্যান ইস্তফাও দিয়েছেন।
জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি সুজিত রায় বলেন, দলের প্যানেল অগ্রাহ্য করে তমলুক টাউন কো-অপারেটিভ ক্রেডিট সোসাইটির চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচন হয়েছে। দল সেটা অনুমোদন করেনি। তাই চেয়ারম্যানকে ইস্তফা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। তিনি আমাকে চিঠি দিয়ে চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা জানিয়েছেন। বোর্ড অব ডিরেক্টরকে ইস্তফাপত্র দিয়েছেন।
তমলুক শহর তৃণমূল সভাপতি চঞ্চল খাঁড়া বলেন, আমরা সবাই দলের সৈনিক। দলের অনুশাসন প্রত্যেকে মানতে বাধ্য। কিন্তু, দলের পাঠানো প্যানেলকে অগ্রাহ্য করে ভোটাভুটি হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে দল বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেছে। এখানে আমার ব্যক্তিগত পছন্দ কিংবা অপছন্দের কোনও বিষয় নেই।