• বাঙালি হেনস্তায় প্রত্যাঘাতের গর্জন মমতার
    বর্তমান | ১৭ জুলাই ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বাংলা ও বাঙালির নিজস্ব সত্তায় আঘাত। হেনস্তা। পুশব্যাক। লাগাতার। কখনও অসম, কখনও দিল্লি, কখনও ওড়িশা। তারই প্রতিবাদে কলকাতার রাজপথে নামলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃষ্টিভেজা শহরে হাজার হাজার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে মিছিল করলেন। এবং শোনা গেল অগ্নিকন্যার গর্জন—‘আঘাত করলে প্রত্যাঘাত যে কী হতে পারে, ওদের (বিজেপির) ধারণা নেই। বাংলাকে আহত করেছে। এটা মনে রাখবেন, আহত বাঘ ভয়ঙ্কর। আমরা সুসংহত আছি, জবাব দেবই দেব।’ আর এই জবাব গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়, নির্বাচনী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে আসতে চলেছে, সেটাও জানাতে ভুললেন না তিনি। জনস্রোতকে সাক্ষী রেখে আওয়াজ তুললেন, ‘খেলা হবে। তৈরি থাকুন। আগামী দিনে পারবে টিম ইন্ডিয়াই। আমরা দিল্লি দখল করব।’ 

    ডাবল ইঞ্জিন রাজ্যগুলিতে সম্প্রতি বাঙালিদের নিশানায় বিঁধে ফেলার বিস্ময়কর কর্মসূচি চলছে। বাংলায় কথা বলাটাই এখন সবচেয়ে বড় অপরাধ। তাহলেই সেই ব্যক্তিকে বাংলাদেশি বলে দেগে দেওয়া হচ্ছে এবং সঙ্গে চলছে চরম হেনস্তা। কোথাও আটক, কখনও গ্রেপ্তার, কখনও পুশব্যাক। বাড়ির জল-বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়ার মতো অভিযোগও সামনে এসেছে। এরই প্রতিবাদে বুধবার পথে নামেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলেজ স্কোয়ার থেকে ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিং পর্যন্ত মমতার নেতৃত্বাধীন পদযাত্রায় শামিল হন হাজারে হাজারে সাধারণ মানুষ, তৃণমূল কর্মী-সমর্থক। মমতার পাশেই ছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। পোস্টার-ব্যানারে লেখা ছিল, ‘ডাবল ইঞ্জিনের রাজ্যে বাংলা ভাষায় কথা বলা কি অপরাধ? বিজেপির কাছে জবাব চাই।’

    এই সূত্র ধরেই কলকাতার প্রাণকেন্দ্র ধর্মতলার বুক থেকে বিজেপি বিরোধী কণ্ঠস্বরকে সপ্তমে নিয়ে যান মমতা। সভামঞ্চ থেকে তিনি বলেন, ‘বিজেপি বাঙালি বিরোধী। বাঙালিদের ওরা অপমান করছে। বাংলা ভাষাভাষী মানুষের উপর যেভাবে আক্রমণ আছড়ে পড়ছে, তাতে তৃণমূল কংগ্রেস এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকার ব্যাথিত। মর্মাহত। কেন্দ্র লুকিয়ে যে নোটিফিকেশন করেছে, সেটাকে চ্যালেঞ্জ করছি। আমরা তার জবাব দেবই। দিল্লির জমিদারি আমরা মানব না।’ মমতা বুঝিয়ে দিয়েছে, মাতৃভাষার এই অপমান তাঁর উপরও আঘাত। আক্রমণ প্রত্যেক বাঙালিকে। আর তাই বিজেপির উদ্দেশে তাঁর চ্যালেঞ্জ, ‘পশ্চিমবঙ্গ দেশের বাইরে নয়। তাই আমি আরও বেশি করে বাংলায় কথা বলব। দেখি কত ক্ষমতা... আমাকে ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখুক!’  

    বস্তুত, বাংলা বরাবরই সাক্ষী রেখেছে ঐক্যের। ধর্ম, বর্ণ, ভাষা নির্বিশেষে। তার প্রতিচ্ছবি দেখা গিয়েছে তৃণমূলের পদযাত্রাতেও। বিভিন্ন ভাষাভাষী ও সম্প্রদায়ের মানুষ মমতার সঙ্গে পা মিলিয়েছেন। মমতা বলেছেন, ‘যে রাজ্যেই বাংলা ভাষাভাষী মানুষের উপর আক্রমণ, সেখানেই আমাদের প্রতিবাদ হবে। অ-বাঙালি মানুষদের উপরও যদি অত্যাচার হয়, সেদিনও আমাদের প্রতিবাদের কণ্ঠ গর্জে উঠবে।’

    একদিকে যেমন বাংলা ভাষাকে অপমান করা হচ্ছে, তেমনই এনআরসি আতঙ্ক গ্রাস করেছে সাধারণের মধ্যে। মমতার কথায়, ‘এনআরসির নামে চলতে থাকা অত্যাচার জরুরি অবস্থার থেকেও খারাপ। বিজেপিকে সতর্ক করছি, এসব কীভাবে থামাতে হয় সেটা আমি জানি। তাই জেনে রাখুন, আগামী দিনে খেলা হবেই।’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ‘দানবিক দল বিজেপিকে আগামী নির্বাচনেই গোড়া থেকে উৎখাত করবে বাংলার মানুষ।’
  • Link to this news (বর্তমান)