• ধর্ষণের অভিযোগ গর্ভবতী প্রেমিকার, ছেলের ‘কুকীর্তি’তে আত্মঘাতী বাবা-মা
    বর্তমান | ১৭ জুলাই ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা ও বরানগর: সন্তানের সুখের জন্য কী না করেন মা-বাবা! তাঁদের পরিশ্রম ও আত্মত্যাগের পথ ধরেই সাফল্যের সরণিতে এগিয়ে যায় সন্তান-সন্ততি। কিন্তু সন্তানের কৃতকর্মের জন্য যদি এতদিনের পরিশ্রম, মানসম্মান সব ধুলোয় মিশে যায়, তখন বোধ হয় পায়ের নীচ থেকে মাটি সরে যায়! নাহলে কেনই বা এমন মর্মান্তিক সিদ্ধান্ত নেবেন নিমতা থানা এলাকার পশ্চিম প্রতাপগড়ের দম্পতি জগন্নাথ দাস (৪৮) ও মণিকা দাস (৪১)! আত্নঘাতী হয়েছেন তাঁরা! মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিরাটি স্টেশনের অদূরে ডাউন ঠাকুরনগর-শিয়ালদহ লোকাল পিষে চলে যায় তাঁদের। ঘটনা হল, এক তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে মঙ্গলবার এই দম্পতির ছেলে জয়ন্ত দাসকে পুলিস গ্রেপ্তার করে। ওই তরুণী বর্তমানে অন্তঃসত্ত্বা। মৃত দম্পতির পরিবারের সদস্যদের দাবি, জগন্নাথবাবুর অফিস থেকেই জয়ন্তকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই অপমানজনক পরিস্থিতির তীব্র অভিঘাত সামলাতে না পেরেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন তাঁরা!    

    বুধবার শিয়ালদহ আদালতে বাবা-মায়ের এই পরিণতি শুনে কান্নায় ভেঙে পড়ে ছেলে জয়ন্ত। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, জগন্নাথবাবু স্বাস্থ্যদপ্তরে গাড়ি চালাতেন। তাঁদের একমাত্র ছেলে জয়ন্ত ওরফে শুভ মাস তিনেক আগে বাবার অফিসেই অস্থায়ী কর্মী হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। গত এপ্রিলে সোদপুরের এক যুবতীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। কিন্তু গোল বেধেছিল বহু আগে! পুলিস সূত্রে খবর, দু’বছর ধরে অন্য একটি মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল জয়ন্তর। গত বছর নভেম্বরে মুরারিপুকুরের বাসিন্দা সেই মহিলা মানিকতলা থানায় ধর্ষণের অভিযোগ (জিডি) করেন। সেই সময় পুলিস ছেলেটিকে থানায় ডেকে ধমকও দেয়। তারপর সব চুপচাপ। ১৪ জুলাই নাগাদ ওই তরুণী জানতে পারেন, জয়ন্ত বিয়ে করেছে। এবার তরুণী গর্ভবতী অবস্থায় ফের মানিকতলা থানায় অভিযোগ করেন। তার ভিত্তিতে মঙ্গলবার অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে পুলিস। পুলিসের দাবি, নিমতা থানা এলাকা থেকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে জয়ন্তকে। তারপর তার মাকে ফোন করে এই খবর জানানো হয়। মণিকাদেবী তাঁর স্বামীকে ফোন করেন। এরপর দু’জনেই বিরাটি স্টেশনে চলে আসেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, তাঁরা রেললাইন ধরে দুর্গানগরের দিকে প্রায় ৩০০ মিটার এগিয়ে যান। ট্রেন আসছে দেখে লাইনের উপর দু’জন হাত ধরে দাঁড়িয়ে পড়েন। বারাসত জিআরপি দেহ উদ্ধার করে এবং তাঁদের ছবি থানায় থানায় ছড়িয়ে দেয়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে জগন্নাথবাবুর ভাই বিশ্বনাথ দাস এসে দেহ শনাক্ত করেন। পরিবার সূত্রে অবশ্য দাবি, নিমতা নয়, মঙ্গলবার দুপুরে পুলিস জয়ন্তকে স্বাস্থ্যদপ্তরের অফিস থেকেই গ্রেপ্তার করে। তখন জগন্নাথবাবু অফিসেই ছিলেন। বিশ্বনাথবাবু বলেন, ‘ভাইপো এপ্রিল মাসে বিয়ে করেছিল। আমাদের ধারণা, ভাইপোর বিরুদ্ধে এমন মারাত্মক অভিযোগ ওঠায় দিগ্বিদিক জ্ঞান হারিয়ে এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটিয়েছেন তাঁরা।’ তাঁদের বোন রিনা চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘ভাইপোকে ফাঁসানো হয়েছে। শুনেছি, দাদা ওই তরুণীকে ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা দিয়েছিল। তার কাগজও রয়েছে। অফিস থেকে এভাবে ছেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার যন্ত্রণা দাদা –বউদি সহ্য করতে পারেনি। আমরা নিরপেক্ষ তদন্ত চাই।’
  • Link to this news (বর্তমান)