দেশের একাধিক বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাঙালিদের হেনস্থার অভিযোগে পথে নেমে কেন্দ্রীয় সরকারকে হুঁশিয়ারি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন, বাঙালিদের উপরে এই অত্যাচার তিনি মেনে নেবেন না। তিনি আরও বেশি করে বাংলায় কথা বলবেন। গোটা দেশে ঘুরবেন। ক্ষমতা থাকলে তাঁকে ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখুক কেন্দ্র। বাঙালিদের দিয়ে কাজ করিয়ে বাংলায় কথা বললেই জেলে, ডিটেনশন ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ায় কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে তোপ দেগেছেন তিনি। কোন অধিকারে এই কাজ করা হচ্ছে তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। এদিন বিজেপির বিরুদ্ধে ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে লড়াই করার বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। মমতার দাবি, বাংলার মানুষকে ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখলে তাঁরাও বিজেপিকে নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিকভাবে ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখবেন।
বুধবার দুপুরে কলেজ স্কোয়্যার থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে প্রতিবাদ মিছিল শুরু হয়ে ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিংয়ে পৌঁছয়। মিছিলে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সহ তৃণমূলের নেতা–মন্ত্রী ও কর্মী সমর্থকরা উপস্থিত ছিলেন। দুপুর আড়ইটে নাগাদ ডোরিনা ক্রসিংয়ে আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখতে উঠে দেশজুড়ে বাঙালিদের হেনস্থার ঘটনা নিয়ে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন মমতা। তাঁর অভিযোগ, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে কেন্দ্র। ওই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, সন্দেহ হলে যে কাউকে এক মাস জেলে রেখে দেওয়া যাবে। অবৈধভাবে এই বিজ্ঞপ্তি আনা হয়েছে। বিনা বিচারে এক মাস জেলে রেখে দেওয়া বেআইনি। ইন্দিরা গান্ধীর সমালোচনা করে সুপার ইমার্জেন্সি ডে পালন করা হয়। কিন্তু এই ঘটনা তো জরুরি অবস্থার থেকে বেশি ভয়ঙ্কর। লুকিয়ে লুকিয়ে জারি করা এই বিজ্ঞপ্তি তিনি চ্যালেঞ্জ করবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মমতা। তাঁর অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গের নাগরিকদের আধার, প্যান কার্ড থাকা সত্ত্বেও তাঁদের জেলে পাঠানো হচ্ছে, হেনস্থা করা হচ্ছে, ধর্ম দেখে মানুষকে বাছাই করা হচ্ছে। প্রায় এক হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করে লকআপ, ডিটেনশন ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এর একটি তালিকা রয়েছে। বাংলাদেশে অনেককে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপরই বিজেপিকে হুঁশিয়ারি দিয়ে মমতা বলেন, ‘আমরা আহত হয়েছি। আমরা আহত হলেও সুসংহত। এর জবাব আমরা দেবই দেব।’
মমতা আরও জানিয়েছেন, প্রত্যেক ভারতবাসীকে তিনি সম্মান করেন। প্রত্যেকের নিজের ভাষায় কথা বলার অধিকার আছে। তাহলে কেন বাংলা বললেই হেনস্থা করা হচ্ছে? বাঙালিদের উপরে এত রাগ কেন? এ বিষয়ে বলতে গিয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-সহ দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রসঙ্গ তোলেন মমতা। পাশাপাশি অনুপ্রবেশ ইস্যুতে কেন্দ্রকে বিঁধেছেন তিনি। ফের একবার মমতা মনে করিয়ে দিয়েছেন, সীমান্ত বিএসএফের হাতে। বিএসএফ, সিআইএসএফ, সিআরপিএফ এসব কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের হাতে। বিমানে কেউ অনুপ্রবেশ করছে কি না তা দেখার দায়িত্বও কেন্দ্রের।
এ দিন একযোগে অসম, ওড়িশা, দিল্লি, ছত্তিশগড় সরকারকে নিশানা করেছেন মমতা। কোচবিহারের বাসিন্দাদের নোটিশ পাঠানো প্রসঙ্গে অসম সরকারের অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। পাশাপাশি তিনি বলেন, অসম সরকার ১২ লক্ষ মানুষকে বিতাড়িত করেছে। কারণ, তাঁরা অসমিয়া ভাষা জানেন না। ছত্তিশগড়ে নদিয়ার বাসিন্দাদের আটকে রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি দিল্লিতেও বাঙালিরা হেনস্থার শিকার। রাজবংশী ও মতুয়া পরিযায়ীদের প্রসঙ্গ তুলে মমতার অভিযোগ, মহারাষ্ট্রে মতুয়াভাষীদের উপর অত্যাচার হয়েছে। নির্বাচনের সময় মতুয়াদের বাড়িতে গিয়ে ভোটভিক্ষা করে ও অন্য সময় তাঁদের উপর অত্যাচার হয়, বাংলাদেশে পুশব্যাক করা হয়, জেলে রাখা হয়। এই বিষয়ে কেন্দ্রের কাছ থেকে জবাব চেয়েছেন মমতা।
বিহারে ৩০.৫ লক্ষ ভোটারের নাম ভোটার লিস্ট থেকে বাদ দেওয়া নিয়েও সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, এই একই উপায়ে মহারাষ্ট্র, দিল্লিতে জয়লাভ করেছে বিজেপি। পশ্চিমবঙ্গেও সেই পরিকল্পনা করা হচ্ছে। কিন্তু বিজেপির এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে না বলে দাবি করেছেন মমতা। ভোটার তালিকায় নাম রয়েছে কি না তা সকল ভোটারকে নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, ভিন রাজ্যে বসে সেখানকার সংস্থাকে দিয়ে রাজ্যের ভোটারদের নাম কেটে দেওয়া হচ্ছে। বিনা যুদ্ধে এক ইঞ্চিও জমি তিনি ছাড়বেন না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। ২০২৬ সালের নির্বাচনে বাংলা দখলের পর দিল্লি দখলের ডাক দিয়েছেন মমতা। আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ সফল হবে বলে তিনি আশাবাদী।
মুখ্যমন্ত্রী ফের একবার মনে করিয়ে দিয়েছেন, ভিন রাজ্যের দেড় কোটিরও বেশি পরিযায়ী শ্রমিক এ রাজ্যে কাজ করেন। কিন্তু তাঁদের সঙ্গে কোনও খারাপ আচরণ করা হয় না। তাঁদের সম্মান দেওয়া হয়। কিন্তু বিজেপি অসম্মান করে। রাজ্যের বাইরে কাজ করা পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যে ফিরে আসার অনুরোধ করেছেন তিনি।
এরপর পাঁচের পৃষ্ঠায়