• ডাকছে চিতাবাঘ, পুরুলিয়ায় ডেরা বাঁধবে রয়্যাল বেঙ্গলও?
    এই সময় | ১৭ জুলাই ২০২৫
  • সঞ্চিতা মুখোপাধ্যায়, পুরুলিয়া

    কানহা বা রণথম্ভোর নয়। পাঁচ বছরের মধ্যে পুরুলিয়ার অরণ্যেই দেখা মিলবে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের। পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে এমন কথাই বলছেন বন দপ্তরের আধিকারিকরা। অতীতে পুরুলিয়া জুড়ে ছিল গভীর জঙ্গল।

    মাঝে তা অনেকটা হারিয়ে গেলেও সম্প্রতি ৩.৯৪ শতাংশ জঙ্গল বেড়েছে এই জেলায়। সেই সঙ্গে মানুষজনের মধ্যে ব্যাপক ভাবে বেড়েছে জঙ্গল নিয়ে সচেতনতা। জঙ্গল লাগোয়া গ্রামের মানুষ এখন নিজেরাই জঙ্গল এবং বন্যপ্রাণ রক্ষা করছেন।

    বন দপ্তরের আধিকারিকদের মতে, ‘দাও ফিরে সে অরণ্য’ বাস্তবায়িত হচ্ছে ওই গ্রামবাসীদের জন্যই।

    এমনিতেই পুরুলিয়া জেলায় অযোধ্যা পাহাড় ছাড়াও ঝালদা এবং বান্দোয়ানে রয়েছে গভীর অরণ্য। সম্প্রতি একাধিক রয়্যাল বেঙ্গল এসে ডেরা বাঁধে পুরুলিয়ায়। এর মধ্যে সিমলিপাল থেকে আসা জ়িনাত যেমন বান্দোয়ানের রাইকার জঙ্গলে বেশ কয়েক দিন ছিল, তেমনই একটি পুরুষ বাঘও বসবাস শুরু করেছিল এখানে।

    আবার কয়েক বছর আগেই কোটশিলার সিমনি জাবরের অরণ্যে ডেরা বেঁধেছে এক লেপার্ড বা চিতাবাঘ দম্পতি। এখন তাদের পরিবারে সদস্যসংখ্যা বেড়ে হয়েছে চার। সম্প্রতি আরেকটি মাদি চিতাবাঘও সেখানে এসেছে।

    এই চিতাবাঘের পথ ধরেই রয়্যাল বেঙ্গলও পুরুলিয়ায় স্থায়ী ভাবে বসবাস করবে বলে নিশ্চিত বন দপ্তর। জেলায় চলছে অরণ্য সপ্তাহ। সেই উপলক্ষে বুধবার আয়োজন করা হয়েছিল বনমহোৎসবের। মূল অনুষ্ঠান হয় ঝালদা ব্লক মাঠে।

    সেখানে এ কথা জানিয়ে পুরুলিয়ার ডিএফও অঞ্জন গুহ বললেন, ‘চিতাবাঘ কোথাও থাকলে রয়্যাল বেঙ্গলও সেখানে থাকার উপযোগী পরিবেশ পায়। আমরা সিমনি কোটশিলাতে চিতাবাঘের পরিবারের একটা পাকাপাকি বসবাসের সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি। এ থেকেই আমরা নিশ্চিত, আগামী পাঁচ বছরে পুরুলিয়া জুড়ে একটা টাইগার ল্যান্ডস্কেপ তৈরি হবে।’

    নিরন্তর প্রচারের ফলে বন ও বন্যপ্রাণ সম্পর্কে জঙ্গল এলাকার মানুষ এখন অনেক সচেতন। ঝালদার অনুষ্ঠানে বহু গ্রামবাসীকে জঙ্গল রক্ষার জন্য সংবর্ধনা জানালেন বনমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা ও অন্য বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।

    তাঁদেরই একজন বাঘমুন্ডির মাঠার জঙ্গল লাগোয়া মণিবেড়া গ্রামের ফুলচাঁদ মাহাতো বললেন, ‘জঙ্গলে গাছ কাটা সম্পূর্ণ বন্ধ। রাতেও নজর রাখা হয় জঙ্গলে। গ্রামের কেউ কাটলে হাজার টাকা জরিমানা নেওয়া হয়। অন্য কেউ হলে জরিমানা পাঁচ হাজার টাকা। আমরা জঙ্গলের প্রাণীদেরও ক্ষতি হতে দিই না।’

    অযোধ্যা পাহাড়ের জঙ্গল এলাকার বাসিন্দা জগবন্ধু নাগ বললেন, ‘আমাদের জঙ্গলে শাল, সেগুন ছাড়াও বহু দামী গাছ রয়েছে। গত কয়েক বছরে জঙ্গল দারুন ভাবে বেড়েছে। পর্যটকরা এসে এখন এই জঙ্গলে ময়ূর ও হরিণ দেখতে পান।’

    এ দিন এই অনুষ্ঠানে বনমন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডু, সভাধিপতি নিবেদিতা মাহাতো, জেলা পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, মুখ্য বনপাল বিদ্যুৎ সরকার, পুরুলিয়া বনবিভাগের ডিএফও অঞ্জন গুহ, কংসাবতি দক্ষিণের ডিএফও পূরবী মাহাতো প্রমুখ।

    পুরুলিয়ার পরিবেশ রক্ষায় এ বার বন মহোৎসব থেকে চারাগাছ বিতরণও শুরু করল বন দপ্তর। জানা গিয়েছে, চলতি আর্থিক বছরে পুরুলিয়া জেলায় লাগানো হবে নানা গাছের মোট ছয় লক্ষ চারা। ‘সবুজশ্রী’ প্রকল্পেও সাড়ে পঁচিশ হাজার অর্থকরী গাছের চারা দেওয়া হবে সাধারণ মানুষকে।

  • Link to this news (এই সময়)