• উচ্চশিক্ষায় প্রবল অনীহা, ছাত্র সঙ্কট কলেজগুলিতে, মোকাবিলায় কর্মমুখী কোর্স চালুর সিদ্ধান্ত বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের
    বর্তমান | ১৭ জুলাই ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: উচ্চশিক্ষায় পড়ুয়া সঙ্কট মোকাবিলায় কর্মমুখী কোর্স চালুর পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিল বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়। জেনারেল কোর্সে ছাত্রছাত্রীদের পড়ার আগ্রহ নেই। তাই অযথা আসন ফেলে রাখা হবে না। গত তিন বছরে ভর্তির পরিসংখ্যান দেখেই আসন ছেঁটে ফেলা হবে। সেই জায়গায় কর্মমুখী নতুন কোর্স চালু হবে। কর্মমুখী কোর্স হিসেবে আর্ট অব অ্যারোমা থেরাপি(বিউটিশিয়ান), ফিশারি সায়েন্স, মোবাইল রিপেয়ারিং প্রভৃতির কথা উঠে এসেছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা মহাবিদ্যালয়, পূর্ব মেদিনীপুরের মুগবেড়িয়া গঙ্গাধর কলেজ সহ কয়েকটি কলেজে কর্মমুখী কোর্স বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ওইসব কলেজের অধ্য‌ক্ষরা বুধবার ‘জব ওরিয়েন্টেড কোর্সের’ গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন।

    গত কয়েক বছর ধরে কলেজে ছাত্র ভর্তি উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম জেলার ৫৬টি কলেজেও একই ছবি। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকস্তরে আসন সংখ্যা ৭৪ হাজার ৩৮১টি। অথচ, ভর্তির আবেদন করেছেন মাত্র ২৬ হাজার ৩৮৪জন। আবেদনকারীদের প্রত্যেকে ভর্তি হলেও প্রায় ৪৮ হাজার আসন ফাঁকা পড়ে থাকবে। এই পরিসংখ্যান যথেষ্টই উদ্বেগজনক। মঙ্গলবার এই তথ্য হাতে পাওয়ার পরই বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দীপক কর বুধবার দুপুর ২টোয় জরুরি বৈঠক ডাকেন। সেখানে প্রতিটি কলেজের প্রিন্সিপালকে হাজির হতে বলা হয়।

    ছাত্র সঙ্কটের সন্ধিক্ষণে বিকল্প রাস্তা খোঁজার লক্ষ্যে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক বীরেন্দ্রনাথ শাসমল সেমিনার হলে সভা হয়। সেখানে উচ্চশিক্ষায় পড়ুয়াদের অনীহা নিয়ে বিভিন্ন কলেজের অধ্যাপকরা বক্তব্য রাখেন। প্রত্যেকেই জানান, বিগত কয়েকবছর কলেজে ক্লাসরুম ফাঁকাই থাকছে। কিছু অনার্স পেপারে একজন ছাত্রও মিলছে না। এই সমস্যার সমাধানে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।  জানা গিয়েছে, প্রত্যেক কলেজ কর্তৃপক্ষ ২০২৩-’২৫ সাল পর্যন্ত বিষয়ভিত্তিক ভর্তির গড় রিপোর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাবে। অর্থাৎ, কোনও একটি অনার্স সাবজেক্টে পরপর তিন বছর কতজন করে ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়েছে, সেই হিসেব অনুযায়ী আসন সংখ্যা সীমাবদ্ধ রাখা হবে। 

    অতিরিক্ত আসন ছেঁটে ফেলা হবে। তিন বছরের ডিগ্রি কোর্সে এভাবে আসন সংখ্যা কমিয়ে সেই জায়গায় কর্মমুখী বিষয় চালু করার উপর জোর দেওয়া হবে। তারজন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষক কিংবা অধ্যাপকের সঙ্কট হতে পারে। সেক্ষেত্রেও কিছু পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। উদাহরণস্বরূপ বলা হয়েছে, ফিশারি সায়েন্স বিষয়টি বোটানি, জুলজি বিভাগের অধ্যাপকরা পড়াবেন। 

    এদিনের মিটিংয়ের পর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি সামগ্রিক রিপোর্ট বানিয়ে প্রত্যেক কলেজে পাঠানো হবে। সেখানে কর্মমুখী কোর্স কীভাবে চালু করা যেতে পারে এবং তার অসুবিধা দূর করার উপায় কী, তা নিয়ে পরামর্শ থাকবে। কলেজ পরিদর্শক অভিজিৎ রায় চৌধুরী বলেন, কর্মমুখী কোর্স চালুর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি গত তিন বছরের ভর্তির পরিসংখ্যান নিয়ে একটি রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে।

    এদিন যোগদা সৎসঙ্গ পালপাড়া মহাবিদ্যালয় থেকে অধ্যাপক সুমন মণ্ডল ওই সভায় যোগ দেন। তিনি বিউটিশিয়ান কোর্স চালুর উপর জোর দেন। সেই রেশ ধরেই উপাচার্য আর্ট অব অ্যারোমাথেরাপি কোর্সে জোর দিতে বলেন। অনেকেই বলছেন, ২০১৬ সালের পর থেকে এরাজ্যে স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা হয়নি। অনার্স, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট এবং বিএড প্রশিক্ষণ নিয়ে কয়েক লক্ষ যুবক-যুবতী বেকার অবস্থায় বসে আছেন। 

    উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর কলেজে উচ্চশিক্ষায় অনীহার মূল কারণ এটাই। তাই বর্তমান প্রজন্ম কর্মমুখী পেশার দিকে ঝুঁকছেন। এবার কলেজেও ‌এধরনের কোর্সে জোর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়।
  • Link to this news (বর্তমান)