এক দিকে টানা বৃষ্টিতে রাস্তার পিচ উঠে ছোট-বড় খন্দ। অন্য দিকে, নির্মীয়মাণ ছয় লেনের এলিভেটেড করিডর বা ফ্লাইওভার। এই দুইয়ে নাভিশ্বাস অবস্থা কোনা এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে নিত্য পারাপার করা প্রায় ১ লক্ষ গাড়িচালক ও যাত্রীদের। অভিযোগ উঠেছে, ১৬ নম্বর জাতীয় সড়কের নিবড়া থেকে শেখপাড়ার ফুটবল গেট পর্যন্ত এই সাত কিলোমিটার রাস্তা পেরোতে দিনের ব্যস্ত সময়ে কমপক্ষে দেড় ঘণ্টা লেগে যাচ্ছে। বেলা বাড়লেই গাড়ির অতিরিক্ত চাপে তীব্র যানজটে জড়িয়ে পড়ছে কোনা এক্সপ্রেসের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। আরও অভিযোগ, রেল, ফ্লাইওভার নির্মাণকারী সংস্থা ও হাওড়া পুরসভার দড়ি টানাটানির খেলায় সামান্য বৃষ্টিতেই জমা জল ঠেলে যাতায়াত করতে হচ্ছে সাঁতরাগাছি স্টেশনের রেলযাত্রী ও জগাছা এলাকার বাসিন্দাদের।
সাঁতরাগাছি স্টেশন এলাকা বাদ দিয়ে সাত কিলোমিটার লম্বা ছয় লেনের এই ফ্লাইওভারের কাজ হচ্ছে কোনা এক্সপ্রেসওয়ের বাকি অংশগুলিতে। এই ফ্লাইওভার নির্মাণের দায়িত্বে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ থাকলেও এর নির্মাণকাজ করছে কেন্দ্রীয়সরকারের একটি বিশেষজ্ঞ সংস্থা রেল বিকাশ নিগম লিমিটেড (আরভিএনএল)। সময়সীমা ধরা হয়েছে চার বছর। সাঁতরাগাছি রেল সেতুর দু’পাশে সেতুর গার্ডারগুলি যে স্তম্ভের উপরে থাকবে, সেগুলি নির্মাণের কাজ চলছে।
কোনা এক্সপ্রেসওয়ে যতটা সম্ভব স্বাভাবিক রেখে এই কাজ শেষ করা যায়, এই নির্মাণ শুরুর আগে থেকেই তা নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক হয় রাজ্য সরকার, জেলা প্রশাসন, হাওড়া পুরসভা, হাওড়া সিটি পুলিশ, জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ, রেলের ইরকন ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের প্রতিনিধিদের মধ্যে। ওই বৈঠকের পরে সার্ভিস রোড চওড়া করা হয়, কয়েকটি জায়গায় ঢালাই রাস্তা তৈরি করে দেওয়া হয়। কিন্তু তার পরেও দেখা যায়, বর্ষা শুরু হতেই সকালে থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে যানজটে জড়াচ্ছে কোনা এক্সপ্রেসওয়ে। যা হচ্ছে মূলত নিবড়ার দিকে সাঁতরাগাছি সেতুর আগে মৌখালি থেকে সুন্দরপাড়া পর্যন্ত। এর পরে আবার সাঁতরাগাছি রেল সেতুতে ওঠার আগে। একই অবস্থা হচ্ছে হাওড়া থেকে আসার সময়ে বাকসাড়ায়।
হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘অনেক জায়গায় রেল বিকাশ নিগমকে রাস্তা এতটাই ছাড়তে হয়েছে যে তা সঙ্কীর্ণ হয়ে গিয়েছে। ফলে বেড়েছে গাড়ির চাপ। মালবাহী গাড়ি ছাড়তে হচ্ছে বাধ্য হয়ে। বর্ষার সময়ে সেই সব গাড়ি সাঁতরাগাছি সেতুতে উঠে মন্থর গতিতে যাচ্ছে। ফলে পিছনে গাড়ির লম্বা লাইন হচ্ছে। মালবাহী গাড়ি অন্য পথে না পাঠালে যানজট আটকানো যাবে না। রাস্তাও মেরামত করতে হবে।’’
হাওড়া সিটি পুলিশের বক্তব্য প্রসঙ্গে আরভিএনএলের প্রোজেক্ট ডিরেক্টর বিমল প্রসাদ বলেন, ‘‘একটা বড় ফ্লাইওভার হচ্ছে। আমাদের আট মিটার রাস্তা দিতেই হবে। পুলিশ যেখানে রাস্তা চওড়া করতে বলেছে, আমরা করে দিয়েছি। আমরা মিডিয়ান ভেঙে রাস্তা বাড়িয়েছি।’’ আরভিএনএলের দাবি, ফ্লাইওভারের সাঁতরাগাছির পরে স্তম্ভ উঠে গিয়েছে। এর পরে পাইলন ক্যাপ বসবে। এক দিকে গার্ডার ঢালাই চলছে।
ফ্লাইওভারের প্রোজেক্ট ডিরেক্টর বলেন, ‘‘ওপরে যত ক্ষণ না গার্ডার বসাচ্ছি, তত ক্ষণ রাস্তা খুলতে পারি না আমরা। গার্ডার বসানোর পরেই রাস্তা খুলে দেব। বাকি যা কাজ, এর পরে করতে সমস্যা হবে না।’’ নিগমের কর্তাদের দাবি, ছয় মাসের মধ্যে মৌখালি থেকে সুন্দরপাড়ার কাজ শেষ হবে। তখন রাস্তার ওই অংশ খুলে দিলে যানজট হবে না।