মোদী সরকার দেশের সবচেয়ে অনুন্নত ১০০টি জেলাকে চিহ্নিত করে সেখানে উন্নয়ন পৌঁছে দিতে ‘উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলা কর্মসূচি’ শুরু করেছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার সেই প্রকল্প থেকে বেরিয়ে আসে। অভিযোগ ছিল, পশ্চিমবঙ্গ থেকে কোন কোন জেলা এই প্রকল্পে থাকবে, তা কেন্দ্রীয় সরকার নিজের মতো করে ঠিক করছে। এ বার ঠিক একই পথে মোদী সরকার দেশের কৃষিতে পিছিয়ে থাকা ১০০টি জেলাকে নিয়ে ‘প্রধানমন্ত্রী ধন-ধান্য কৃষি যোজনা’ শুরু করতে চলেছে। আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা এই প্রকল্প মঞ্জুর করেছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও কোন রাজ্যের কোন জেলা এই প্রকল্পে থাকবে, তা কেন্দ্রের নির্ধারিত মাপকাঠি অনুযায়ীই ঠিক হবে।
স্বাভাবিক ভাবেই পশ্চিমবঙ্গের মতো বিরোধী-শাসিত রাজ্যগুলি এ নিয়ে আপত্তি তুলতে পারে বলে সরকারের অন্দরমহলেই সংশয় তৈরি হয়েছে। কারণ কৃষিতে উৎপাদনের হার, ফসলের ঘনত্ব এবং চাষিদের জন্য ঋণের বন্দোবস্ত ও তা শোধ হওয়া—এই তিনটি মাপকাঠির ভিত্তিতে দেখা হবে, কোন জেলাগুলি পিছিয়ে রয়েছে। তার ভিত্তিতেই ঠিক হবে, কোন রাজ্য থেকে কোন জেলা এই ১০০টি জেলার তালিকায় স্থান পাবে। রাজ্যের মতামত তাতে প্রাধান্য পাবে না। তবে প্রতিটি রাজ্য থেকে অন্তত একটি করে জেলা থাকবে।
কোনও রাজ্য যদি চায় যে কেন্দ্রের বাছাই করা জেলার বদলে অন্য জেলাকে তালিকায় রাখা হোক, তা হলে কি মেনে নেওয়া হবে? কেন্দ্রীয় তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব উত্তরে বলেন, “নৈর্ব্যক্তিক ভাবে ১০০টি জেলাকে বেছেনেওয়া হবে।”
অশ্বিনীর আরও যুক্তি, “রাজ্যের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই ঠিক হবে, কোন রাজ্যের কোন জেলা এই প্রকল্পে স্থান পাবে। ফলে রাজ্যগুলির বড় ভূমিকা থাকছেই।” কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের পরে নবান্ন সূত্রের বক্তব্য, দিল্লি থেকে প্রস্তাব গেলে তা খতিয়ে দেখা হবে।এর আগে অনুন্নত জেলাগুলিকে চিহ্নিত করতেও কেন্দ্রীয় সরকার নিজের একগুচ্ছ মাপকাঠির ভিত্তিতে উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলা কর্মসূচির ১০০টি জেলাকে চিহ্নিত করেছিল। তাতে পশ্চিমবঙ্গের পাঁচটি জেলা ছিল। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বক্তব্য ছিল, এই সব মাপকাঠি ও কেন্দ্রের বাছাই করা জেলার সঙ্গে রাজ্য সহমত নয়। ফলে রাজ্য সরে দাঁড়ায় এই প্রকল্প থেকে।
উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলা প্রকল্পে নবান্নের আরও একটি আপত্তি ছিল। তা হল, মোদী সরকার নবান্নকে এড়িয়ে সরাসরি জেলাশাসকদের মাধ্যমে প্রকল্প রূপায়ণ করতে চাইছে। এ বার প্রধানমন্ত্রী ধন-ধান্য কৃষি যোজনাতেও প্রতিটি জেলার জন্য একটি করে ‘মাস্টার প্ল্যান’ তৈরি হবে। জেলাশাসকের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি এই পরিকল্পনা তৈরি করবে। ফলে সেখানেও রাজ্যের আপত্তি আসতে পারে। যদিও কেন্দ্রের যুক্তি, উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলার সাফল্য থেকে শিক্ষা নিয়েই ধন-ধান্য যোজনা।
ধন-ধান্য যোজনায় কেন্দ্রীয় সরকারের মোট ১১টি মন্ত্রকের ৩৬টি প্রকল্পের কাজ হবে। এই সব মন্ত্রকের জন্য বরাদ্দ অর্থ থেকেই ১০০টি জেলায় প্রতি বছর ২৪ হাজার কোটি টাকা করে খরচ হবে।
ছ’বছরের প্রকল্পের পাঁচটি লক্ষ্য হবে, কৃষিতে উৎপাদন বাড়ানো, ফসলের বৈচিত্র আনা, পঞ্চায়েত-ব্লক স্তরে শস্য মজুতের পরিকাঠামো তৈরি, সেচের উন্নতি ও ঋণের সুবন্দোবস্ত। অক্টোবরে রবি ফসলের সময় থেকে ধন-ধান্যের কাজ শুরু হবে।