প্রভিডেন্ট ফান্ড (পিএফ)-এর টাকা জমা না হওয়া নিয়ে সরব হচ্ছেন বিরোধীরা। অভিযোগ, ইপিএফও-তে ‘ডিফল্ট’ বা টাকা জমা না পড়ার পরিমাণ লাফিয়ে বাড়ছে প্রতি বছরই। এর মধ্যেই এ বিষয়ে হইচই হয়েছে সংসদে। তার পরে আংশিক পদক্ষেপের ইঙ্গিত মিলছে কেন্দ্রের তরফে। যদিও এখনই তা নিয়ে উৎসাহিত হতে নারাজ বিরোধীরা। তবে প্রভিডেন্ট ফান্ড নিয়ে অভিযোগ বেসরকারি ক্ষেত্রছাপিয়ে পৌঁছে গিয়েছে এ রাজ্যের সরকারি স্তরেও।
অভিযোগ উঠেছে, বহু সংস্থা ইপিএফও-তে নথিভুক্ত হলেও, বেশির ভাগই নিয়ম মেনে প্রভিডেন্ট ফান্ড জমা করছে না। ফলে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে কর্মচারীদের। এ রাজ্যে হলদিয়া শিল্পাঞ্চল, চটকল ক্ষেত্র এবং চা-বাগানে এই সমস্যাও দীর্ঘদিনের। অভিযোগ, সেখানকার কর্মীদেরও বঞ্চিত হতে হচ্ছে। রাজ্য সরকারের তরফে কেন্দ্রকে এ নিয়ে সবিস্তার জানানো হলেও, তাদের তরফে জবাব মেলেনি বলেই দাবি। কয়েক মাস আগে সংসদের ‘জ়িরো আওয়ার’-এ প্রশ্ন তুলেছিলেন রাজ্যসভায় তৃণমূলের সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিযোগ করেছিলেন, ইপিএফও-তে ‘ডিফল্ট’-এর পরিমাণ ২৬ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছে গিয়েছে। ঋতব্রতের কথায়, ‘‘অভিযোগ করেছিলাম, বেশ কিছু সংস্থার সঙ্গে আধিকারিকদের একাংশের অসাধু যোগাযোগ রয়েছে।সম্ভবত তা কাজে লাগিয়েই দিনের পর দিন এই অব্যবস্থা চলছে। তবে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের বদলি করেছে কেন্দ্র। দেখতে হবে, নতুন যাঁরা দায়িত্বে এলেন, তাঁরা কতটা ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে পদক্ষেপ করেন।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘প্রভিডেন্ট ফান্ড আইন খুব কড়া। এই আইনের আওতায় গ্রেফতার হলে ৬০% না মেটানো পর্যন্ত ছাড়া পাওয়া যায় না। ফলে শাস্তি এড়াতে অভিযুক্ত সংস্থাগুলি কতটা প্রভাবিত করার চেষ্টা করবে, তা দেখাই জরুরি।’’
তবে এ রাজ্যেও প্রভিডেন্ট ফান্ড নিয়ে অভিযোগ উঠছে। বিশেষ করে স্কুল শিক্ষকদের একটা বড় অংশের বক্তব্য, সরকারি ক্ষেত্রে প্রভিডেন্ট ফান্ডের অংশীদারিত্ব থাকে কর্মীর উপরেই। তাঁদের অভিযোগ, বছরের সুদ অনেক সময়েই সে বছর জমা পড়ছে না। সেই সুদ যোগ হতে কখনও এক, কখনও আবার দেড় বছর সময় লেগে যাচ্ছে। এক প্রধান শিক্ষকের কথায়, ‘‘বিভিন্ন বছরের সুদ বিভিন্ন সময় যোগ হচ্ছে। এখন আইএফএমএস পোর্টালে সুদের বিষয়টি দেখাই যাচ্ছে না। কিন্তু সেটা দেখা যাওয়ার কথা।’’
সংশ্লিষ্ট মহলে আরও অভিযোগ, এখন মাসের প্রথম দিনেই বেতন হয়। অথচ প্রভিডেন্ট ফান্ডের কন্ট্রিবিউশন কাটা হচ্ছে সেই মাসের ১৫ তারিখের পরে। ফলে তা পরের মাসে যোগ হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী, ১৫ তারিখের আগে টাকা কাটা হলে, সে মাসেই তা যুক্ত হত। আবার এর সুদ ‘কম্পাউন্ড’ বা চক্রবৃদ্ধি চরিত্রের। একটি অর্থবর্ষে মোট জমার উপরে তা হিসাব হওয়ার কথা। কিন্তু প্রতি মাসে সুদ হিসাব করার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে বলেও জানাচ্ছেন শিক্ষকদের অনেকে। অভিযোগ, তাতে কম্পাউন্ডের সুবিধা তুলনায় কম পাওয়া যাচ্ছে।
তবে বিকাশ ভবনের এক কর্তা বলেন, ‘‘উপরোক্ত তিনটি বিষয় নিয়েই অভিয়োগ রয়েছে শিক্ষকদের। বিষয়গুলির যাতে সমাধান হয়, সেই নিয়ে কাজ চলছে।’’