দুই নালার সংস্কারে অতিরিক্ত ব্যয় বহু কোটি, ধরল পুর অডিট
আনন্দবাজার | ১৭ জুলাই ২০২৫
টালিনালা (দু’টি পর্যায়) ও চেতলা বোট ক্যানাল সংস্কারের কাজে (পলি, কাদা, আবর্জনা তোলা) ১১ কোটি ৯৩ লক্ষ টাকা অতিরিক্ত খরচ করেছে কলকাতা পুরসভা। পুরসভার সেন্ট্রাল অডিট রিপোর্টেই বিষয়টি ধরা পড়েছে। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, খরচের হার একই থাকলে টালিনালার তৃতীয় পর্যায়ের সংস্কারের কাজে আরও ৩ কোটি ২৯ লক্ষ টাকা অতিরিক্ত খরচ হবে।
অতিরিক্ত খরচের পরিমাণ এত বেশি কেন, তা জানতে চেয়ে গত ২৮ জুন পুরসভার কমিশনারকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন সেন্ট্রাল মিউনিসিপ্যাল অডিটর। বুধবার পুরসভার এক শীর্ষ কর্তা এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আমরা অডিট রিপোর্টটি খতিয়ে দেখছি। শীঘ্রই উত্তর দিয়ে দেব।’’ পুরসভা সূত্রের খবর, ২০১৮ সাল থেকে টালিনালা সংস্কার প্রকল্পের যে কাজ শুরু হয়েছিল, তারই অডিট রিপোর্টে বিশাল অঙ্কের টাকা অতিরিক্ত খরচ করা হয়েছে বলে ধরা পড়েছে।
২০১৪ সালে টালিনালার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পায় পুরসভা। তার আগে এই দায়িত্বছিল সেচ দফতরের হাতে। ২০১৮ সালে সেচ দফতরের দর অনুযায়ী, টালিনালার এক ঘন মিটার অংশের পলি তোলার কাজে খরচ বরাদ্দ ছিল ১৯০ টাকা। অভিযোগ,সেখানে কলকাতা পুরসভা এক ঘন মিটার অংশের পলি তুলতে বরাদ্দ করেছিল ৭২৯ টাকা। আবার সেচ দফতরের দর অনুযায়ী, এক ঘন মিটার অংশের পলি তোলার পরে তা অন্যত্র ফেলতে দর বরাদ্দ ছিল ১১৭ টাকা। পুরসভা তাতেও ৭২৯ টাকা খরচ করেছে।
টালিনালা সংস্কারের দু’টি পর্যায় ও চেতলা বোট ক্যানাল সংস্কারে খরচের বিস্তারিত হিসাবও রয়েছে অডিট রিপোর্টে। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রথম পর্যায়ে গঙ্গা থেকে চেতলা সেতু পর্যন্ত টালিনালা সংস্কারে বাড়তি খরচ হয়েছিল ৫ কোটি ৭৯ লক্ষ ৭২ হাজার ৫১৭ টাকা। দ্বিতীয় পর্যায়ে কুঁদঘাট মেট্রো স্টেশন থেকে চেতলা সেতু পর্যন্ত টালিনালাসংস্কারে অতিরিক্ত বরাদ্দ করা হয়েছিল ৪ কোটি ৩৬ লক্ষ ৯৬ হাজার ২২৬ টাকা। আবার চেতলা বোট ক্যানাল থেকে পলি তুলতে অতিরিক্ত ১ কোটি ৭৬ লক্ষ ৩১ হাজার ৭৬৪ টাকা খরচ হয়েছিল।
এখন টালিনালা সংস্কারের তৃতীয় পর্যায়ের কাজ চলছে। অডিট রিপোর্টে বলা হয়েছে, আগের দু’টি পর্যায়ের দরে পলি তোলা ও ফেলার কাজ চললে অতিরিক্ত ৩ কোটি ২৯ লক্ষ ৫০ হাজার ৩২৬ টাকা বাড়তি খরচ হবে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, টালিনালার দু’টি পর্যায় ও চেতলা বোট ক্যানাল সংস্কারের কাজে যে সমস্ত ঠিকাদার কাজ পেয়েছিলেন, তাঁদের নিয়ম-বহির্ভূত ভাবে বাড়তি সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। তাঁরা ওই সময়ে নিজেদের কর্মপদ্ধতি সংক্রান্ত যে শংসাপত্র পুরসভাকে দিয়েছিলেন, তাতে প্রতি ঘন মিটার পলি তোলার কাজের জন্য দর বরাদ্দ ছিল ১৯০ টাকা। কিন্তু আদতে বিল ধরিয়েছিলেন ৭২৯ টাকার।