বৌবাজারের ঘটনা থেকে শিক্ষা, মুখ্যমন্ত্রীর বিধানসভায় মেট্রোর সুড়ঙ্গ খননের কাজে কড়া নজর রাখবে কলকাতা পুরসভা
আনন্দবাজার | ১৭ জুলাই ২০২৫
জোকা-বিবাদী বাগ মেট্রো সম্প্রসারণের জন্য সম্প্রতি খিদিরপুর এলাকায় সুড়ঙ্গ খননের কাজ শুরু করেছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। একেবারে শুরু থেকেই সেই কাজে কড়া নজর রাখছে কলকাতা পুরসভা। মেট্রো সম্প্রসারণের ওই কাজটি হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিধানসভা কেন্দ্রে। কলকাতা পুরসভার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে মাটির তলায় দীর্ঘ সময় ধরেই খননকাজ চলবে। কিন্তু এই কাজ করতে গিয়ে যাতে বৌবাজারের মতো কোনো বিপত্তি না ঘটে সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে চায় কলকাতা পুরসভা ও রাজ্য সরকার। কারণ, ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের ভূগর্ভস্থ খননকার্যের ফলে বৌবাজার এলাকার অনেকগুলি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সেই ঘটনার জেরে বেজায় ভোগান্তি হয়েছিল স্থানীয় বাসিন্দাদের। কিন্তু, এ ক্ষেত্রে তেমনটা চায় না রাজ্য। তাই কাজ শুরু হওয়ার সময় থেকেই এর উপর কড়া নজর রাখছেন কলকাতা পুরসভার আধিকারিকেরা।
রাজ্য সরকার, পুরসভা ও মেট্রো কর্তৃপক্ষের স্মৃতিতে বছর ছয়েক আগের বৌবাজারের ঘটনা এখনও তাজা। সুড়ঙ্গ খোঁড়ার সময় ভিত আলগা হয়ে গিয়ে হেলে পড়ে একাধিক বাড়ি। পরে ভেঙেও পড়ে কয়েকটি। তাই বৌবাজারের বিপত্তির পুনরাবৃত্তি যাতে কোনও ভাবেই খিদিরপুরে না হয় সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে চায় তারা।
খিদিরপুর এলাকায় এখনও বেশ কিছু বনেদি বাড়ি রয়েছে। রয়েছে কলকাতার বহু প্রাচীন ঐতিহ্য। মেট্রোর নির্মাণকাজের ফলে সেই সব স্থাপত্যের যাতে কোনও রকম ক্ষতি না হয় সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে মেট্রো কর্তৃপক্ষকে। মঙ্গলবার খিদিরপুর এলাকায় মেট্রোর ভূগর্ভস্থ নির্মাণ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘কাজ করার ক্ষেত্রে মেট্রোর ইঞ্জিনিয়ারদের আরও সতর্ক হতে হবে। অনেক হেরিটেজ বিল্ডিং রয়েছে সেখানে। আমাদের মতে, ওখানে সতর্ক হয়ে কাজ করা উচিত।’’ তবে এ ক্ষেত্রে একটি রাজনৈতিক অঙ্ক দেখছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল, এমনটাই মত ওয়াকিবহাল মহলের। আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে মেট্রো নির্মাণের কাজের কারণে মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভা কেন্দ্রের অংশে যাতে কোনও ভাবেই জনজীবন বিপর্যস্ত না হয়, সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে শাসকদলকেই। তাই মেট্রোর কাজে সজাগ দৃষ্টি রেখে চলবে কলকাতা পুরসভা। ঘটনাচক্রে, যে এলাকায় টিএমবি কাজ করবে তার একটি অংশ আবার মেয়রের বিধানসভা কেন্দ্র কলকাতা বন্দরের অন্তর্গত।
কলকাতা মেট্রো সূত্রে খবর, বৌবাজারের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে একাধিক পদক্ষেপ আগেই করা হয়েছে। জোকা-এসপ্লানেড মেট্রোপথে খিদিরপুর থেকে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল পর্যন্ত অংশে ১৭২৩ মিটার দীর্ঘ সুড়ঙ্গ খননের ক্ষেত্রে টানেল বোরিং মেশিন (টিবিএম) ‘দুর্গা’ পরিচালনার ক্ষেত্রে একাধিক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
মাটির গভীরে টিবিএম তার নিজের পরিধির চেয়ে কিছুটা বড় আকারের সুড়ঙ্গ খনন করে। খননের কিছু ক্ষণের মধ্যেই টিবিএমের সঙ্গে বসানো যন্ত্র কংক্রিটের টুকরো জুড়ে সুড়ঙ্গের রিং তৈরি করে ফেলে। ওই রিংয়ের বাইরের চার দিকের অংশ দ্রুত জমে যায়, এমন সিমেন্ট এবং রাসায়নিক দিয়ে ভর্তি করে দেওয়া হয়। ফলে চারপাশে মাটির বসে যাওয়ার প্রবণতা রুখে দেওয়া যায়। সুড়ঙ্গ খননপর্বে যন্ত্রের বাইরের আবরণের ফাঁক গলে যাতে কোথাও কাদামাটি ঢুকতে না পারে, সে জন্য ওই সিল কাজে আসবে। মাটির প্রকৃতির সঙ্গে তাল রেখে প্রয়োজন অনুযায়ী ফুলে অথবা কিছুটা চুপসে গিয়ে জল আসার পথ সম্পূর্ণ রুদ্ধ করে দিতে পারে এই ব্যবস্থা। এ ছাড়াও টিবিএমের লেজের দিকে টেল স্কিন গ্রিজ় (টিএসজি) লাইনিং তৈরি করার ব্যবস্থা থাকবে। এ জন্য জলরোধী বিশেষ রাসায়নিক পাম্প করার ব্যবস্থা থাকবে। সুড়ঙ্গ নির্মাণকারী সংস্থা সূত্রের খবর, সদ্যনির্মিত সুড়ঙ্গের কংক্রিটের রিংয়ের উপরে ভর রেখে টানেল বোরিং মেশিন একটু একটু করে সামনের দিকে এগোয়। সুড়ঙ্গ খননের এই পর্বে রিংয়ের চারপাশ থেকে যাতে জল-কাদা টিবিএমের ভিতরে ঢুকে না আসে, তার জন্য যন্ত্রের লেজের দিকে থাকা ব্রাশ ঘেঁষে জলরোধী রাসায়নিকের বৃত্তাকার লাইনিং বসানোর ব্যবস্থা থাকছে। এর ফলে, সুড়ঙ্গ তৈরির সময়ে বিপত্তির আশঙ্কা অনেকটা কমবে।