ভিন্রাজ্যে বাংলাভাষীদের উপর হেনস্থায় সরব কলকাতার শিল্পীরা, অন্য সুর রুদ্রনীলের
আনন্দবাজার | ১৭ জুলাই ২০২৫
বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাভাষী শ্রমিকদের উপর হেনস্থার অভিযোগ আসছে বেশ কিছু দিন ধরেই। কোথাও কোথাও বাংলাভাষীদের আটক করারও অভিযোগ উঠছে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি। একাধিক রাজ্যে একের পর এক এ ধরনের ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার তাঁর নেতৃত্বে মিছিলের আয়োজন করা হয় কলকাতায়। পাশাপাশি, বাংলাভাষীদের উপর হেনস্থার ঘটনায় সরব কলকাতার শিল্পীরাও। এ হেন নিপীড়ন কোনও ভাবেই মানতে রাজি নন তাঁরা। এই ঘটনার বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ হওয়ার কথাই বলছেন সবাই। তাঁদের অধিকাংশেরই অভিমত, দলমতনির্বিশেষে একসঙ্গে প্রতিবাদে নামা দরকার।
ভিন্রাজ্যে এ ধরনের জটিল পরিস্থিতি তাঁদের কল্পনার বাইরে বলে জানালেন জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী রূপঙ্কর বাগচী এবং অভিনেত্রী-নৃত্যশিল্পী মমতাশঙ্কর। রূপঙ্কর বললেন, “দুঃখজনক ঘটনা। একেবারেই কাম্য নয়। যাঁরা এই ঘটনা ঘটাচ্ছেন, তাঁদের তীব্র ধিক্কার জানাচ্ছি। আর যাঁরা এই পরিস্থিতির শিকার, তাঁদের জন্য আমার সহানুভূতি রয়েছে। নিজে একজন বাঙালি। এই ভাষা নিয়েই কাজ করি। যাঁরা এই ভাষায় কথা বলছেন, তাঁদের সঙ্গে এই ঘটনা খুবই অনভিপ্রেত।”
অন্য দিকে, মমতাশঙ্কর বলেন, ‘‘বাংলা আমার মাতৃভাষা। আমি বাংলা ভাষায় কথা বলতে ভালবাসি। তাই অনেক বৈঠকে বা সম্মেলনে আমি বাংলাতেই কথা বলেছি বা বলি। কিন্তু বিদেশি অভ্যাগতেরা এলে তাঁদের জন্য বিদেশি ভাষার শরণ নিতেই হবে। একই ভাবে বিদেশে গেলে আমি ইংরেজিতে কথা বলতে বাধ্য। যেমন, প্যারিসে গিয়ে বাংলায় কথা বলা অযৌক্তিক। নিজের দেশে অন্য ভাষাভাষীদের সঙ্গে হিন্দিতে কথা বলার চেষ্টা করব। তার জন্য প্রতিবাদ, মারামারি বা খারাপ ভাষার প্রয়োগ কোনও দিন করব না।’’
অভিনেতা কৌশিক সেন জানালেন, এ ধরনের ঘটনা অবাঞ্ছিত ও দুঃখজনক। তিনি বললেন, “দলমতনির্বিশেষে এই বিষয় নিয়ে ভাবা উচিত। যাঁরা আক্রান্ত হচ্ছেন তাঁরা সবাই খেটে খাওয়া মানুষ। আমরা বাঙালি না বাংলাদেশি, তা বলার জন্য আমাদের কাছে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ রয়েছে। কিন্তু যাঁদের সঙ্গে এই ঘটনা ঘটছে তাঁরা প্রত্যেকে গরিব মানুষ। তাঁদের অনেকের কাছে সঠিক নথিও নেই। বেশির ভাগ মানুষই পেটের টানে ভিন্রাজ্যে গিয়ে কাজ করেন। তাঁদের সঙ্গে ঘটা ঘটনা খুবই দুঃখজনক এবং চিন্তার।”
অভিনেত্রী ঊষসী চক্রবর্তী বললেন, “এই পরিস্থিতি একেবারেই কাম্য নয়। মাতৃভাষা আমার প্রাণে। তা বলার জন্য যদি নির্বাসনে পাঠানো হয় বা শাস্তি দেওয়া হয়, তা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। প্রতিবাদ হওয়া খুবই দরকার। সব রাজনৈতিক দলেরই উদ্যোগী হওয়া উচিত, যাতে বাঙালিরা রাজ্যের বাইরে গিয়েও সুরক্ষিত বোধ করতে পারেন। চারপাশে যে কী ঘটছে বুঝতে পারছি না।”
এক দিকে শহর জুড়ে মিছিল। তার সঙ্গে এই বিতর্কের মাঝে অভিনেতা ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, “শাসকদলের প্রতিনিধিদের অনেকে যে ধরনের ভাষা ব্যবহার করেন, রাজ্যে ধর্ষণ-কাণ্ডের পর যে ব্যাখ্যা দেন তাতে কি বাঙালিদের মুখ উজ্জ্বল হচ্ছে? প্রতিবাদ মিছিল ভাল। কিন্তু এটা দেখে মনে হচ্ছে, আমরা আয়না দেখব না বলে অন্য দিকে ঘুরে গেলাম। আমরা যখন রাজ্যের বাইরে কাজ করতে যাই, তখন অনেকে বলেন, এখানকার গিল্ড সুস্থ ভাবে কাজ করতে দেয় না। এটা নিয়ে কথা বলতে কি আমরা রাজি?”
বুধবারের এই মিছিলের পরে বিজেপি নেতা তথা অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ চাঁছাছোলা ভাষায় আক্রমণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রীকে। তাঁর দাবি, বাঙালিদের উপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর দলের যদি বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধা, ভক্তি, ভালবাসা থাকত তা হলে সবার আগে বাংলায় নিজেরা যে বাঙালিদের লুট করছে তার বিরুদ্ধে মিছিল করতেন। রুদ্রনীল বলেন, “বাংলাদেশিদের লাগাতার ভোটার এবং আধার কার্ড পাইয়ে দিয়েছেন তিনি, তা সবার জানা। মুর্শিদাবাদ, মালদহ থেকেই তো বাংলাদেশিদের ভুয়ো ভোটার আর আধার কার্ড করিয়ে দেওয়া হয়েছে। পঞ্চায়েতের লোকজন তো ধরা পড়েছেন। পশ্চিমবঙ্গে যে লুটের রাজত্ব মুখ্যমন্ত্রী কায়েম করেছেন, তাতে এ রাজ্যের গরিব বাঙালিরা ভিন্রাজ্যে কাজ করতে গিয়েছেন। পড়াশোনা কম জানা বাংলাদেশি, যাঁদের বাংলার শ্রমিকদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মিশিয়ে দিয়েছেন। ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে যাঁরা ধরা পড়ছেন, তাঁরা তৃণমূল দলের সাহায্যে ও পার বাংলা থেকে এসে ভারতীয় ভোটার বা আধার কার্ড পাওয়া লোক। দিল্লি হাই কোর্ট স্পষ্ট ভাষায় বলেছে, এদের তাড়াতে হবে। মমতা যে ঘৃণ্য রাজনীতি করছেন তাতে দেশের সার্বভৌমত্ব নষ্ট হচ্ছে।”