তৃণমূল জমানায় আরও এক খুনের ঘটনায় হাইকোর্টে বেকসুর খালাস পেল ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত অভিযুক্তরা। এবার কোনও জেলা নয়, অপদার্থতার অভিযোগ খোদ কলকাতা পুলিশের বিরুদ্ধে। ওদিকে এই ঘটনায় অভিযুক্তদের জীবনের ১১ বছর কারাবাসের মূল্য কে চোকাবে সেই প্রশ্ন তুলেছেন তাঁদের আইনজীবী।
২০১৪ সালের ২০ মে শিয়ালদা স্টেশনের পার্কিং থেকে উদ্ধার হয় কম্বল মোড়া একটি দেহ। ব্যস্ত এলাকায় দেহ উদ্ধারের ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায়। দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায় পুলিশ। তদন্তে পুলিশ জানতে পারে মৃতের নাম জয়ন্তী দেব। এর পর স্ত্রীকে খুনের অভিযোগে তাঁর স্বামী সুরজিৎ দেব, বান্ধবী লিপিকা পোদ্দার ও সঞ্জয় বিশ্বাস নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশের দাবি ছিল পরকীয়া সম্পর্কের জেরে সুরজিত, লিপিকা মিলে খুন করেন জয়ন্তী দেবীকে। খুনে সহযোগিতা করে সঞ্জয়। ফার্স্ট ট্র্যাক কোর্টে বিচারপ্রক্রিয়া শেষে ৩ অভিযুক্তকেই ফাঁসির সাজা শোনান বিচারক।
নিম্ন আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ২০১৯ সালে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন অভিযুক্তরা। পুলিশি তদন্তে একাধিক ফাঁক রয়েছে বলে দাবি করেন তাঁরা। ১১ বছর জেলবন্দি থাকার পর বৃহস্পতিবার অভিযুক্তদের আইনজীবীর সওয়ালকে স্বীকৃতি দিয়ে ৩ অভিযুক্তকেই বেকসুর খালাস দেন বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি সব্বার রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ। আদালত জানিয়েছে, অপর্যাপ্ত তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা যায় না। ফাঁসির সাজা তো পরের কথা।
আদালতের রায়ের জেরে ১১ বছর পর জেল থেকে মুক্তি পেতে চলেছেন ৩ জন। তবে তাঁদের আইনজীবীর প্রশ্ন, ৩টে মানুষের ১১ বছর অকারণে জেলবন্দি থাকার মূল্য কে চোকাবে? এই ঘটনায় পুনর্তদন্তের দাবি জানাতে পারে মৃতের পরিবার।
কামদুনি মামলার পর উচ্চ আদালতে ফের এক মামলায় ফাঁসির আসামিরা বেকসুর খালাস হওয়ায় কলকাতা পুলিশের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সঙ্গে প্রশ্ন উঠছে, রাজ্যের বিভিন্ন ফাস্ট ট্র্যাক আদালতে খুন ও ধর্ষণের যে মামলাগুলি চলছে তারও কি পরিণতি একই হতে চলেছে? প্রশ্ন উঠছে, তদন্তে পুলিশি ফাঁকফোঁকড় কি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত?