• র‍্যাগিং, যৌন হেনস্থা... সব জেনেও মনোজিৎকে ছাড় ল কলেজের জিবির
    এই সময় | ১৮ জুলাই ২০২৫
  • জয় সাহা

    একের পর এক অভিযোগ। কিন্তু ব্যবস্থা? শূন্য। এ ভাবেই কসবার ল কলেজে গণধর্ষণের ঘটনায় ধৃত টিএমসিপি নেতা তথা কলেজের অস্থায়ী কর্মী মনোজিৎ মিশ্রকে আশ্রয় এবং প্রশ্রয় দিয়েছিল প্রতিষ্ঠানের পরিচালন সমিতি বা জিবি।

    কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্তকারী দলের কাছে ইতিমধ্যেই জিবি–র নানা রেজ়লিউশন-সহ প্রায় ৫০০ পাতার একটি রিপোর্ট জমা করেছে ওই ল কলেজ।

    সেই কাগজপত্র পরীক্ষা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্তকারী দলের সদস্যরা জানতে পেরেছেন, নানা সময়ে একাধিক মারাত্মক অভিযোগ জমা পড়লেও একটি অভিযোগ নিয়েও মনোজিৎ এবং তার গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে ন্যূনতম পদক্ষেপ করেনি জিবি।

    র‍্যাগিং, যৌন হেনস্থা, শারীরিক নিগ্রহ, হুমকি — ওই আইন কলেজের জিবির কাছে সব ধরনের অভিযোগ জমা পড়েছিল মনোজিতের বিরুদ্ধে। কিন্তু যতবাই তা আলোচনার জন্য জিবি–র কাছে এসেছে, ততবারই সেটাকে ‘ডেফার্ড’ করা হয়েছে।

    অর্থাৎ, বলা হয়েছে পরে এ বিষয়ে আলোচনা হবে। সেই ‘পরে’ অবশ্য আসেনি কখনওই। তদন্তকারীদের বক্তব্য, এ ভাবেই মনোজিৎকে আশ্রয় দিয়েছিল জিবি।

    বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্তার কথায়, ‘ওই জিবির মেয়াদ এমনিতেই উত্তীর্ণ হয়েছে। ২০১৭–য় ওই আইন কলেজের জিবি তৈরি হয়। এত দিন একটা জিবি-র মেয়াদ চলতে পারে না।’

    এ বিষয়ে ইতিমধ্যেই কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল নয়না চট্টোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্তকারীরা। প্রায় ৫ ঘণ্টা সেই জিজ্ঞাসাবাদ চলে। জিবি–তে মনোনীত আরও এক সদস্যকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

    বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, জিবি কেন এ ভাবে মনোজিৎ-কে দিনের পর দিন ছাড় দিয়ে রেখেছিল, সে কথা জানতে চাওয়া হয় দু’জনের কাছেই। প্রাপ্ত উত্তর মোটেই সন্তোষজনক নয় বলেই সূত্রের দাবি।

    দু’জনেই উত্তর এড়িয়ে যেতে প্রবল চেষ্টা করেন বলে জানা গিয়েছে। তবে বেশ কিছু উত্তর লিখিত ভাবে তাঁদের থেকে নেওয়া হয়েছে। সেই বক্তব্যের সঙ্গে বাকি নথি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

    এই অবস্থায় উচ্চশিক্ষা দপ্তর ঠিক করেছে, রাজ্যের যতগুলি কলেজে পরিচালন সমিতির মেয়াদ ৩০ জুন শেষ হয়ে গিয়েছে, তাদের আরও ৬ মাসের এক্সেটেনশন দেওয়া হবে।

    শুধু কসবার ওই ল কলেজই নয়, ইতিমধ্যে রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে তৃণমূল ছাত্রনেতাদের দাপট সামনে এসেছে। সেই দাপট বন্ধ করে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে ইউনিয়ন রুমে তালা মারা হয়েছে।

    কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, যে জিবিগুলি দিনের পর দিন মনোজিৎ-দের মতো ‘দাদা’-দের ‘সুরক্ষা’ দিয়ে এসেছে, সেখানে মেয়াদ আরও বাড়িয়ে দেওয়া নৈতিক কিনা? রাজ্য সরকার বিজ্ঞপ্তিতে লিখেছে, ‘২০১৭–র কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী জিবি–র মেয়াদ বাড়াতে পারে উচ্চশিক্ষা দপ্তর।’

    কিন্তু বিরোধী অধ্যাপক সংগঠন ওয়েবকুটার সভাপতি শুভোদয় দাশগুপ্তর বক্তব্য, ‘এটা তো একরকম ছলনা করা। আমরা জানি বিভিন্ন কলেজের জিবি–তে তৃণমূল ছাত্রনেতাদের প্রতিনিধি করে রেখেছে উচ্চশিক্ষা সংসদই।

    এই অবস্থায় উচিত ছিল জিবিগুলির পুনর্মূল্যায়ন করে এই ধরনের সমস্যাজনক ব্যক্তিদের বের করে ফ্রেশ জিবি গঠন করা।’ শুভোদয়ের সংযোজন, ‘তা না করে সরকার আসলে এই সব প্রশ্রয়দাতাদেরই মেয়াদ বাড়িয়ে তাদের আরও শক্তিশালী করল।’

    শাসকদলের অধ্যাপক সংগঠন ওয়েবকুপার রাজ্য কমিটির সদস্য তথা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মনোজিৎ মণ্ডলের দাবি, ‘জিবি পুনর্গঠন করা সময়সাপেক্ষ কাজ। এ ব্যাপারে অধ্যাপক সংগঠনগুলির ভূমিকাও যথেষ্ট। সেটা সরকার নিশ্চিত ভাবেই করবে।’ তবে একই সঙ্গে তিনি মনে করেন, ‘জিবিতে শিক্ষানুরাগীদের রাখাই শ্রেয়। ছাত্রছাত্রীদের মনোনীত করলে নানা অভিযোগ সামনে আসতে পারে।’

  • Link to this news (এই সময়)