মেদিনীপুর সদর ব্লকের ধেড়ুয়া, চাঁদড়া, মণিদহ, কঙ্কাবতী গ্রাম পঞ্চায়েতের একাধিক গ্রামের বাসিন্দাদের কাছে কংসাবতী নদীর ভাঙন এক আতঙ্কের নাম। বসত বাড়ি সরিয়ে পাকা রাস্তার কাছে সরিয়ে এনেও কাটছে না উদ্বেগ।
টানা বৃষ্টিতে কংসাবতীর জলস্তর বেড়ে পাড় ছুঁই–ছুঁই অবস্থা। ভাঙনের প্রবণতা বেড়েছে বহুগুণ। সম্প্রতি মেদিনীপুরের রাজা নরেন্দ্রলাল খান মহিলা মহাবিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের সমীক্ষা জানাচ্ছে, গত দু’–তিন দশকে নদীর গতিপথ সরে এসেছে প্রায় ০.৬৭ কিলোমিটার।
নদীর পাড়ে ভাঙনের জেরেই এই গতিপথের পরিবর্তন। গবেষকদের অনুমান, এ ভাবে ভাঙন চলতে থাকলে নদীর উত্তর পারের পাকা রাস্তা পর্যন্ত গ্রামগুলির কোনও অস্তিত্বই থাকবে না।
বর্ষার আগে নদীর ভাঙন নিয়ে এই সমীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন কুড়ি জন স্নাতকোত্তর স্তরের ছাত্রী। উপগ্রহ চিত্র, প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণ ও নদীর পাড়ের মাপজোকের মাধ্যমে তাঁরা কংসাবতী নদীর গতিপথ পরিবর্তন ও পাড় ভাঙার কারণ খুঁজে বের করেছেন।
ধেড়ুয়া থেকে কঙ্কাবতী পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকার নদীপাড়ের ঢাল, মাটির বৈশিষ্ট্য, নদীপাড়ের প্রোফাইল, উদ্ভিদের আচ্ছাদনের পরিমাণ ও নদীর ক্রসসেকশন প্রোফাইল করেন।
ভাঙনের প্রবণতা অনুযায়ী এই এলাকাকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন সমীক্ষকরা— সর্বোচ্চ মাত্রায় ভাঙন–প্রবণ এলাকা, মাঝারি মাত্রায় ভাঙন–প্রবণ এলাকা ও স্বল্প মাত্রায় ভাঙন–প্রবণ এলাকা।
ওই কলেজের ভূগোলের অধ্যাপক প্রভাতকুমার শীলের কথায়, ‘আমরা দেখেছি, কিছু জায়গায় নদীর পাড়ের উচ্চতা ৫ থেকে ৭ মিটার, ঢাল প্রায় আশি ডিগ্রি খাড়া। পাড়ের উপরে বাঁশ বা অন্য গাছের শিকড় মাত্র দু’–তিন মিটার নীচে প্রবেশ করতে পারে।
কিন্তু নীচের অংশে পলি ও বালি থাকায় সহজেই জলের তোড়ে ধুয়ে যায়, উপরের অংশ ঝুলতে থাকে, ফাটল দেখা দেয়।’ কংসাবতীর ডান তীরের তুলনায় বাম তীরের পাড় ভাঙার সম্ভাবনাই বেশি বলে জানান তিনি।
ইতিমধ্যেই মণিদহ গ্রাম পঞ্চায়েতের ধনেশ্বরপুরের মতো অনেক গ্রাম মানচিত্র থেকে মুছে গিয়েছে। বিঘের পর বিঘে চাষের জমি জলের তলায়। ধজিধরা গ্রামের বাসিন্দা বছর ষাটেকের কালীপদ রায়ের কথায়, ‘গত ত্রিশ বছরে আমার ২৫ বিঘা ধানজমি গিলে নিয়েছে কংসাবতী।’
চাষের জমির উপর নির্ভর করেই সংসার চালানো উপরডাঙার অবনী বেরার এক একর জমি নদীগর্ভে। পেট চালানোর বিকল্প উপায় খুঁজছেন বিপর্যস্ত অবনী।
কিছু মাস আগে মেদিনীপুরের বিধায়ক সুজয় হাজরা ভাঙন–বিধ্বস্ত এলাকাগুলিতে প্রচারে গেলে স্থানীয়রা তাঁর কাছে ভাঙনরোধের আর্জি জানিয়েছিলেন। স্থানীয়দের দাবি, নির্বাচনের আগে সুজয় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ভোটে জিতলে তিনি এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন।
সুজয় বলেন, ‘নদীর ভাঙন আমার কাছেও চিন্তার। বিষয়টি বিধানসভায় তুলে ধরেছি। তার পরেই সেচমন্ত্রী মানসরঞ্জন ভুঁইয়া তাঁর দপ্তরের ইঞ্জিনিয়ারদের পাঠিয়ে পরিকল্পনা করেছেন। যতদূর জানি, ডিপিআর (ডিটেইলড প্রজেক্ট রিপোর্ট) তৈরি হয়ে গিয়েছে।’
বর্ষার পরেই কাজ শুরু করা হবে বলে আশাও প্রকাশ করেন তিনি। এ প্রসঙ্গে সেচমন্ত্রী মানসরঞ্জন ভুঁইয়ার কথায়, ‘একপ্রস্থ সার্ভে করা হয়েছে। বর্ষা কমলেই আরও একবার সার্ভে করে ভাঙন রোধ করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’