‘আমি বিতর্ক থেকে সরে আসিনি, পাঁচজন কর্মীর মতোই সামলেছি’, গানে ৩০ বছর কাটিয়ে জানালেন রূপঙ্কর
আনন্দবাজার | ১৮ জুলাই ২০২৫
বর্তমান যুগে শুধু বাংলা গান গেয়ে রোজগার করা মোটেই সহজ বিষয় নয়। এক সময় বেতারে বাংলা গান বাজত ও বেশ কিছু রেকর্ডকারী সংস্থা শিল্পীদের পাশে থাকত। কিন্তু এখন পরিস্থিতি একেবারে আলাদা, বাংলা গান গাওয়াকে রুজিরুটির মাধ্যম বানানো বেশ কঠিন। ত্রিশ বছর সঙ্গীত জগতে কাটানোর পরে এমনই উপলব্ধি রূপঙ্কর বাগচীর। তবে নিজের ত্রিশ বছরের সফরে তিনি কৃতজ্ঞ দর্শক-শ্রোতা এবং সঙ্গীতমহলের সকলের কাছে।
শুক্রবার জিডি বিড়লা সভাঘরে বসবে তাঁর গান আসর। তিন দশক ধরে গাওয়া নানা গান এ দিন তিনি গাইবেন মঞ্চে। তবে বেশি করে গাইবেন বর্ষার গান। নিজের সঙ্গীত সফর নিয়ে কথা বলতে গিয়ে রূপঙ্কর বলেন, “এই ত্রিশ বছরের ভাল বিষয়গুলিই শুধু মনে রেখেছি। খুব উপভোগ করেছি এই তিনটি দশক। উত্থান-পতন সকলের জীবনেই থাকে। তবে আমি ভালবাসাটাই মনে রেখেছি। অনেক মানুষ ভালবাসা দিয়েছেন। শ্রোতাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।”
গানবাজনা করে রোজগার করবেন, গানবাজনা করেই বেঁচে থাকবেন— এই লক্ষ্য নিয়ে সঙ্গীত সফর শুরু করেছিলেন রূপঙ্কর। তিনি বলেন, “এই জগতে আসার আগে, কোনও ভাবনাই ছিল না। গান গেয়ে টাকা রোজগার করতে হবে এবং বেঁচে থাকতে হবে। এটুকুই চেয়েছিলাম। আমি অত্যন্ত নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। গান গেয়ে রোজগার না করলে খেতে পাব না, এটাই শুধু মাথায় ছিল।” এই পরিস্থিতিতে এখনও কোনও বদল হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি। এখনও একই ভাবনাচিন্তা তাঁর মধ্যে কাজ করে। এত দিন যে ভাবে লড়েছেন, বাকি জীবনটাও সেই ভাবেই লড়ে যেতে চান তিনি।
বর্তমান প্রজন্মের শিল্পীরা কি বাংলা গান গেয়ে উপার্জনের কথা ভাবতে পারেন? রূপঙ্কর বলেন, “বাংলা গান গেয়ে নিজেকে দাঁড় করানো এখন কঠিন। বেতারে এখন আর বাংলা গান বাজে না। বিশেষ করে স্বাধীন বাংলা আধুনিক গান গেয়ে রোজগার করা কঠিন। বড় প্রযোজনা সংস্থার ছবিতে গান গাইলে তা-ও খানিক সম্ভাবনা রয়েছে। না হলে নতুন বাংলা গান গেয়ে এগোনো খুব কঠিন। পুরনো বাংলা গান গাইতে হবে।”
তা হলে কি নতুন বাংলা গান নিজস্ব পরিচিতি তৈরি করতে পারছে না? রূপঙ্করের স্পষ্ট জবাব, “আসলে নতুন বাংলা গান যাঁরা তৈরি করছেন, তাঁদের কোনও দোষ নেই। তাঁরা তাঁদের গানের পরিচিতি তৈরি করার কোনও জায়গাই পাচ্ছেন না।” নিজের গানের তুলনা টেনে রূপঙ্কর বলেন, “সে সময়ে রেকর্ডকারী সংস্থাগুলি আমাদের হয়ে প্রচার করতেন। নতুন প্রজন্মের গায়কদের জন্য কারা প্রচার করবে? নিজেরা নিজেদের প্রচার কী ভাবে করবেন? সঙ্গীত জগতের প্রবীণ ব্যবসায়ীরা এখন আর কেউ নেই। শিল্পীরা তো কেউ ব্যবসায়ী নন।”
সঙ্গীতজগতে একদিকে খ্যাতি পেয়েছেন রূপঙ্কর। একই ভাবে বার বার বিতর্কেও জড়িয়েছেন। অনুরাগীরাই এক সময় তাঁর দিকে কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছেন। গায়কের কথায়, “বিতর্ক থেকে কখনও নিজেকে সরিয়ে আনিনি। প্রত্যেক মানুষকেই পেশাগত জগতে সমস্যা সামলাতে হয়। তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মীকে যেমন অফিসের রাজনীতি সামলাতে হয়, একজন রিকশাচালককে যেমন ঝড়, জল, বৃষ্টিতে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, আমিও সেই ভাবে সমস্যা সামলেছি।”
এই ত্রিশ বছরে রূপঙ্কর সবচেয়ে বেশি কৃতজ্ঞ কবীর সুমন, অঞ্জন দত্ত, নচিকেতা চক্রবর্তীর কাছে। সেই সঙ্গে দেবজ্যোতি মিশ্র, অমিত বন্দ্যোপাধ্যায়, ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত, জয় সরকার, হৈমন্তী শুক্ল, ঊষা উত্থুপ, জোজো, রাঘব চট্টোপাধ্যায়, মনোময় ভট্টাচার্য, অনুপম রায় এবং সোমলতা আচার্যের থেকেও সমৃদ্ধ হয়েছেন বলে জানান গায়ক।