সুপ্রিম কোর্টের রায়ে উত্তরপাড়া-হিন্দমোটরের ৩৯৫ একর জমি ফেরত পাওয়ার ক্ষেত্রে আর কোনও বাধা রইল না রাজ্য সরকারের। উত্তরপাড়ায় হিন্দুস্থান মোটরের ৩৯৫ একর জমি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়েছিল। ২০২২ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ওই জমি অধিগ্রহণ করে। এরপর শুরু হয়ে যায় ওই জমি নিয়ে মামলা। রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত সঠিক নয় বলে দাবি করে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল হিন্দমোটর। প্রথমে মামলা হয়েছিল ল্যান্ড ট্রাইবুনালে। পরে মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্টে। শীর্ষ আদালত জানিয়ে দেয়, রাজ্য সরকার জমি অধিগ্রহণ করে কোনও ভুল করেনি। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিভি নাগরত্ন এবং বিচারপতি কেভি বিশ্বনাথনের বেঞ্চ হাইকোর্টের রায়ই বহাল রাখে।
একসময় হিন্দমোটরের এই জমিতেই তৈরি হত অ্যাম্বাসাডর গাড়ি। ১১ বছর আগে হিন্দমোটরের এই গাড়ি তৈরি কারখানার গেটে সাসপেনশন অব ওয়ার্ক-এর বোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। ২০১৪ সালে এই কারখানা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়। গাড়ি তৈরি বন্ধ করে দেয় হিন্দমোটর। কাজ হারান কারখানার অসংখ্য শ্রমিক। ফলে কারখানার ৩৯৫ একর জমি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়েছিল। ২০২২ সালে রাজ্য সেই জমি অধিগ্রহণ করলে হিন্দমোটরের তরফে ল্যান্ড ট্রাইবুনালে মামলা করা হয়। যদিও ল্যান্ড ট্রাইবুনাল রায় দেয় রাজ্যের পক্ষে। এরপর মামলা করা হয় কলকাতা হাইকোর্টে। সেখানেও রাজ্যেরই জয় হয়। কলকাতা হাইকোর্টের রায়ের পর এই জমির ৪০ একর টিটাগড় ওয়াগনসকে লিজ দিয়েছিল রাজ্য।এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে সর্বোচ্চ আদালতে যায় হিন্দমোটর। সেখানেও রায় দেওয়া হয়েছে রাজ্যের পক্ষে।
সুপ্রিম কোর্টে এই মামলায় রাজ্যের পক্ষে সওয়াল করেন আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি ও রাকেশ দ্বিবেদী। হিন্দমোটরের পক্ষে সওয়াল করেন শ্যাম দেওয়ান। আদালতকে জানানো হয়, ওয়েস্ট বেঙ্গল এস্টেট অ্যাকুইজিশন অ্যাক্ট সেকশন ৬(৩) অনুযায়ী জমি অধিগ্রহণ করেছিল রাজ্য। ওই আইনে বলা আছে, কোনও সংস্থা শিল্প গড়বে বলে জমি নেওয়ার পর যদি শিল্প না করে দীর্ঘদিন ফেলে রাখে, তাহলে তা অধিগ্রহণের ক্ষমতা থাকবে রাজ্য সরকারের হাতে। অন্যদিকে হিন্দমোটরের আইনজীবী শ্যাম দেওয়ানের যুক্তি ছিল, রাজ্যের সিদ্ধান্ত সঠিক নয়। ওই জমি এখনও সংশ্লিষ্ট সংস্থার শিল্পতালুকের মধ্যে পড়ে। উভয় পক্ষের যুক্তি শোনার পর সুপ্রিম কোর্ট বলে, যে যুক্তিতে হাইকোর্ট রাজ্যের পক্ষে রায় দিয়েছে, তাতে কোনও ভুল নেই। ফলে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখার কথা জানিয়েছে শীর্ষ আদালত।
সম্প্রতি রাজ্য মন্ত্রিসভা এই জমি বন্দে ভারত ট্রেন এবং মেট্রো রেলের কোচ তৈরির কারখানার জন্য দীর্ঘমেয়াদি লিজে টিটাগড় রেলকে দেওয়ার সিন্ধান্ত নিয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট উল্লেখ করেছে, এই জমি এখন রেল কোচ কারখানা তৈরির জন্য বরাদ্দ হয়েছে। সরকারি জমি জনস্বার্থেই ব্যবহার হওয়া উচিত।