• বাংলা বললেই বাংলাদেশি? কেন্দ্রকে তোপ মুখ্যমন্ত্রীর
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ১৮ জুলাই ২০২৫
  • অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর ও স্বল্পবিত্ত নাগরিকদের জন্য রাজ্যের আবাসন ক্ষেত্রে বড় পদক্ষেপ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার নিউটাউনের বুকে উদ্বোধন করলেন দু’টি বহুতল আবাসন— ‘নিজন্ন’ ও ‘সুজন্ন’। এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান থেকেই আবার বঞ্চনা এবং বাঙালি হেনস্থার ইস্যুতে কেন্দ্রকে তোপ দাগলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। স্পষ্ট জানালেন, বাড়ি তৈরির জন্য এক পয়সাও দেয় না কেন্দ্র। তবে বাংলা স্বনির্ভর, রাজ্য নিজের খরচেই আবাসন প্রকল্পের উদ্বোধন করল। বাংলার প্রতি কেন্দ্রের বঞ্চনার কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বুঝিয়ে দিতে চাইলেন, বাংলার উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রের দিকে চেয়ে বসে থাকার পাত্র নয় বাংলা। উল্লেখ্য, নিউটাউনে ‘নিজন্ন’ ও ‘সুজন্ন’ তৈরিতে বিনামূল্যে ৭ একর জমি দিয়েছে রাজ্য। আবাসনদুটি তৈরি করতে ব্যয় হয়েছে ২৯০ কোটি টাকা। দু’টি বহুতল আবাসন মিলিয়ে রয়েছে মোট ১২১০টি ফ্ল্যাট। মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানান, মূলত নিম্ন আয়ের মানুষের জন্যই এই প্রকল্প। ফলে বাজারদরের তুলনায় অনেক সস্তায় মিলবে এই ফ্ল্যাট, যা বিক্রি হবে লটারির মাধ্যমে স্বচ্ছতা বজায় রেখে। ‘নিজন্ন’-এর ফ্ল্যাটগুলি ৩০০ থেকে ৪১০ স্ক্যোয়ার ফিটের মধ্যে। এই আবাসনে সবই ১ বিএইচকে। তবে ‘সুজন্ন’-এর ফ্ল্যাট ২ বিএইচকে। এগুলো ৬২০ থেকে ৭৩০ স্কোয়ার ফিটের মধ্যে।

    এছাড়া রাজারহাটে বহুতল পার্কিং লট তৈরি হয়েছে, ‘সুসম্পন্ন’। আবাসনের ছোটদের পার্কের নাম দেওয়া হয়েছে ‘তরন্ন’। সেখানে রয়েছে ফুড কোর্ট, ক্যাফেটেরিয়া ও মর্নিং ওয়াকের জায়গাও। এদিনের অনুষ্ঠান থেকে আবাসনের খুঁটিনাটি তথ্য দেওয়ার মাঝেই ফের কেন্দ্রের বঞ্চনা নিয়ে সরব হলেন মমতা। কেন্দ্রের অসহযোগিতায় একাধিক প্রকল্প আটকে থাকা নিয়েও মুখ খুললেন তিনি। এরপরই মনে করিয়ে দিলেন, রাজ্য বাংলার বাড়ি প্রকল্পে ৪৫ লক্ষ বাড়ি তৈরি করেছে। তাঁর ভাষায়, ‘চারটে বড় প্রকল্পের উদ্বোধনে মোট খরচ চারশো পঞ্চান্ন কোটি পঞ্চাশ লক্ষ টাকা। আবাস থেকে একশো দিনের কাজ প্রকল্পে আমরা দেশে শীর্ষে ছিলাম। কিন্তু গত চার-পাঁচ বছর ধরে কেন্দ্রের বঞ্চনা চলছে। তা সত্ত্বেও ১২ লক্ষ পরিবারকে রাজ্য সরকার আবাসের অর্থ দিয়েছে, বাকি ১৬ লক্ষ পরিবারকে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে প্রথম কিস্তি দেওয়া হবে। সংখ্যালঘু মহিলাদের ২ লক্ষ ৬০ হাজার বাড়ি আলাদা করে তৈরি করা হয়েছে। ২৪ হাজার পরিবার চা-সুন্দরী প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছেন। রানিগঞ্জের ধসপ্রবণ জামুরিয়া, অণ্ডালের প্রায় ২৯ হাজার পরিবারের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা রাজ্য করেছে।’ তাঁর সংযোজন, ‘কাজের কেউ সুনাম করবে সেই আশা করি না। তবে কিছু আছে যারা সমালোচনার বিষয় না পেলেও এআই দিয়ে আর্টিফিশিয়াল ছবি তৈরি করবে, মিম তৈরি করবে! আমার কুৎসা রটাতে গিয়ে বাচ্চাদের ক্ষতি করবেন না।’

    এরপরই রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন মন্দির-মসজিদ উন্নয়নের খতিয়ান তুলে মমতা বলেন, ‘সব ধর্মচর্চার সুব্যবস্থা আমরা করেছি কারণ আমরা সর্বধর্ম সমন্বয়ে বিশ্বাসী। দিঘার জগন্নাথধামে লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম ঘটছে। বিগত ১৪ বছরে বাংলায় যা কাজ হয়েছে আমি সেই জন্য গর্বিত। মানুষের আসল পরিচয় মনুষ্যত্ব, মানবিক প্রাণ। আর এই মানবিক প্রাণ যেন দানবিক না হয়। আমি সব ভাষা এবং ধর্মকে শ্রদ্ধা করি।’ ঠিক এই সময়েই ফের বাঙালি হেনস্থার ইস্যুতে সরব হয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, ‘কেন একটি বিজ্ঞপ্তি করে বলা হবে যে বাংলাভাষীদের একঘরে করা হোক? ওরা জানে না বাংলা ভাষা বলা মানুষ সংখ্যার নিরিখে এশিয়ায় দ্বিতীয় এবং পৃথিবীতে পঞ্চম। কেন বলবে ১৭ লক্ষ লোকের নাম বাদ দিয়ে দাও! কে তুমি হরিদাস?’ মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘শেষবার যাঁরা বাংলাদেশ থেকে শরণার্থী হিসেবে ভারতে এসেছিলেন, তা ছিল ১৯৭১ সালের মার্চ— তাঁরা তো প্রকৃত ভারতীয় নাগরিক। তবু রাজনৈতিক কারণে যেহেতু ভারত সরকার তাদের থাকতে দিয়েছে, আমরা কোনও দিন তার বিরোধিতা করিনি। তাহলে এখন কেন সব বাংলাভাষাভাষী মানুষকে বাংলাদেশি বলে অপমান করা হচ্ছে? যাঁরা এক সময় বাংলাদেশে জন্মেছিলেন, সেটা তো এক সময়ের অবিভক্ত ভারত ছিল। বাংলাভাষার নানা উপভাষা আছে, উচ্চারণের পার্থক্য আছে— সেটা তাঁদের অভ্যাস। তাই বলে তাঁরা বাংলাদেশি নন।’ এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর প্রধান উপদেষ্টা আলাপন বন্দোপাধ্যায়, রাজ্যের দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু, রাজারহাট নিউটাউনের বিধায়ক তাপস চ্যাটার্জী, বিধাননগরের মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী, বিধাননগর পৌরনিগমের চেয়ারম্যান সব্যসাচী দত্ত, পূর্ত দফতরের সচিব অন্তরা আচার্য।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)