বাংলাদেশি জামাই ও নাতির বাবা একজনই! কাটোয়ায় ভুয়ো ভোটার খুঁজতে গিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য
প্রতিদিন | ১৮ জুলাই ২০২৫
অভিষেক চৌধুরী, কাটোয়া: শ্বশুরও বাবা, আবার দাদুও বাবা! বাবার বয়স ৬২, আর ছেলের বয়স ৫৭! এ কেমন ভোটার তালিকা! ভারতীয় পরিচয়পত্র পেতে বাংলাদেশি জামাইয়ের বাবা, আবার নাতিরও বাবা হয়েছেন পূর্ব বর্ধমান জেলার কেতুগ্রামের কালাচাঁদ মণ্ডল। ধরা পড়ল ভোটার তালিকায়। কেতুগ্রাম ২ ব্লকের সীতাহাটি পঞ্চায়েতের উদ্ধারণপুর গ্রামের এখন বাসিন্দা কালাচাঁদ মণ্ডল। তাঁর আদি বাড়ি বাংলাদেশে। পেশায় দিনমজুর। এক ছেলে ও এক মেয়ে। তাঁর ছেলে প্রকাশ বর্তমানে আন্দামানে একটি সংস্থায় কাজ করেন। কালাচাঁদ নিজেই জানিয়েছেন, বাংলাদেশে মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। ২০০০ সালে তিনি স্ত্রী ও পুত্রকে নিয়ে সীমান্ত টপকে চলে আসেন ভারতে। স্ত্রী, ছেলে এবং নিজের আধার, ভোটার কার্ড সবই ধীরে ধীরে হয়ে যায়। মেয়ে জামাইয়ের সঙ্গে ফোনে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। এরপর ‘বাংলাদেশি’ মেয়ে, জামাই ও নাতিকে এদেশে পাকাপাকিভাবে থাকার ব্যবস্থা করেন কালাচাঁদ মণ্ডল।
২০২২ সাল নাগাদ মেয়ে সীমারানি, জামাই দুলাল মণ্ডল ও নাতি দুর্জয় চলে আসেন কেতুগ্রামের উদ্ধারণপুর গ্রামে। সেই থেকেই তিনজন রয়েছেন এই দেশে। উদ্ধারণপুর গ্রামের মিশ্রপাড়ায় আলাদা সংসারে থাকেন সীমারাণি- দুলাল। তাঁদের ছেলে দুর্জয় এখন ব্যাঙ্গালোরে কাঠমিস্ত্রির কাজ করেন। মেয়ে, জামাই, নাতি এদেশে চলে আসার পর তাদের আধার, ভোটারকার্ড সবই ব্যবস্থা করেন কালাচাঁদ। সবই ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু ঝুলি থেকে বিড়াল বেরিয়ে পড়ে ভুয়ো ভোটার ধরতে অভিযানে।
ভোটার তালিকা ধরে স্থানীয় কয়েকজন তৃণমূল কর্মী নিরীক্ষণ করতে গিয়ে দেখেন, কালাচাঁদ মণ্ডলের (পিতা হীরালাল মণ্ডল) বয়স রয়েছে ৬২ বছর। আর ওই ভোটার তালিকায় ভোটার দুলাল মণ্ডলের বয়স ৫৭ বছর। দুলালের পিতার নাম কালাচাঁদ মণ্ডল বলে উল্লেখ রয়েছে। এখানেই শেষ নয়। একই তালিকায় ভোটার দুর্জয়। যার বয়স ২২ বছর। তাঁরও পিতার নাম কালাচাঁদ মণ্ডল! এছাড়া ওই ভোটার তালিকায় কালাচাঁদের স্ত্রী তিলোত্তমা মণ্ডল, মেয়ে সীমারানি মণ্ডল, ছেলে প্রকাশ মণ্ডলের (৩৫) নাম তো রয়েছেই।
ভোটার তালিকা নিরীক্ষণ করে ধরা পড়ে কালাচাঁদ মণ্ডলের ‘তিন’ ছেলে এক মেয়ে। যেখানে কালাচাঁদ মণ্ডলের নিজের বয়স ৬২ বছর। সেখানে ‘ছেলে’ দুলালের বয়স ৫৭ বছর। আর এক ছেলে দুর্জয়ের বয়স ২২ বছর। তখনই কালাচাঁদকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি নিজেই স্বীকার করেন দুলাল আসলে তাঁর জামাই। আর দুর্জয় নাতি। কালাচাঁদ মণ্ডলের আদি বাড়ি ছিল বাংলাদেশের সরিয়তপুর জেলের গোঁসাইগঞ্জ এলাকায়। ওই জেলারই বাদাইগঞ্জ এলাকায় মেয়ের বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু জামাই ও নাতির ‘বাবা’ সাজার কারণ কি? কালাচাঁদের কথায়, ‘‘এতে আর তেমন অন্যায় কিছু আছে বলে জানতাম না। জামাই তো ছেলেরই মতো। তাছাড়া ওদের আধার, ভোটারকার্ডের প্রয়োজন ছিল। তাই আমি বাবা বলে পরিচয় দিয়েছি।’’
দেখা যায় দুলাল, সীমারানি এবং দুর্জয়রা ২০২২ সালে ভারতে এলেও তাদের আধারকার্ড তৈরি হয়ে গিয়েছিল ২০১৫ সালেই। কালাচাঁদ জানিয়েছেন, দালালের মাধ্যমে তিনি আগেই বাংলাদেশি মেয়ে জামাই ও নাতির আধারকার্ড তৈরি করেন। তারপর ভোটার তালিকায় নাম তোলা হয়েছে। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর সুর চড়িয়েছে তৃণমূল। বিধায়ক শেখ সাহনাওয়াজের অভিযোগ, ‘‘কালাচাঁদ বিজেপি সমর্থক বলে খবর পেয়েছি। এই চক্রান্তের পিছনে বিজেপি। এভাবে ওরা নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে ভুয়ো ভোটার ঢুকিয়েছে।’’ যদিও বিজেপির সাংগঠনিক কাটোয়া জেলা সাধারণ সম্পাদক সীমা ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এটা তৃণমূলের কালচার। ওরাই ক্ষমতায় ছিল। এরাজ্যে আমরা কখনই ক্ষমতায় ছিলাম না। আমাদের ভোটে জেতার জন্য ভুয়ো ভোটারের প্রয়োজন নেই।’’