• ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’ মামলায় প্রথম শাস্তি! ভিন্‌রাজ্যের ৯ বাসিন্দার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড নদিয়ার কোর্টে
    আনন্দবাজার | ১৮ জুলাই ২০২৫
  • অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মীকে ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’ করে প্রায় কোটি টাকা প্রতারণা করা হয়েছিল। প্রায় ন’মাসের মধ্যে ওই মামলায় শাস্তি ঘোষণা করল নদিয়ার কল্যাণী আদালত। মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, গুজরাত এবং রাজস্থানের মোট ৯ বাসিন্দাকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিলেন কল্যাণীর অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় আদালতের বিচারক।

    পুলিশ সূত্রে খবর, অবসরপ্রাপ্ত কৃষিবিজ্ঞানী পার্থ মুখোপাধ্যায় ২০২৪ সালের ৬ নভেম্বর মাসে কল্যাণী সাইবার ক্রাইম থানায় একটি প্রতারণার মামলা দায়ের করেছিলেন। তিনি অভিযোগ করেছিলেন, আট দিন ধরে ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’ করে তাঁর কাছ থেকে এক কোটির বেশি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। তদন্তে নেমে বিভিন্ন রাজ্যে অভিযান চালায় পুলিশ। গ্রেফতার হন মোট ১৩ জন। অভিযুক্তদের মোবাইল, ব্যাঙ্কের পাসবই, প্যান কার্ড-সহ গুরুত্বপূর্ণ নথি বাজেয়াপ্ত করেন তদন্তকারীরা। ফ্রিজ় করা হয় মোট ১০০টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট।

    আদালত সূত্রে খবর, দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয় কল্যাণী আদালতে। সাক্ষীদের মধ্যে মোট ২৯ জন ছিলেন ভিন্‌রাজ্যের। যাঁদের মধ্যে ছিলেন বিভিন্ন রাজ্যের ব্যাঙ্কের আধিকারিকেরা। বিচারপ্রক্রিয়ায় তাঁরা প্রত্যেকে ‘সক্রিয় ভাবে সহযোগিতা’ করেছেন বলে জানান সরকারি আইনজীবীরা। মোট ন’টি ধারায় অভিযুক্ত করা হয়েছিল ধৃতদের। এ ছাড়াও তথ্যপ্রযুক্তি আইনের দু’টি ধারা যুক্ত করা হয়। ৩১৬, ৩১৭, ৩১৮ ধারায় অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ হয়। এ ছাড়াও ৪৬৭ , ৩৪০/২ ধারায় অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় ৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন বিচারক। সাজাপ্রাপ্তদের নাম মহম্মদ ইমতিয়াজ আনসারি, শহিদ আলি শেখ, শাহরুখ রফিক শেখ, যতীন অনুপ লাডোয়াল, রোহিত সিংহ, রূপেশ যাদব, সাহিল সিংহ, ফালডু অশোক এবং পাঠান সুমাইয়া বানু। সরকারি আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই রায় সারা দেশে নজির সৃষ্টি করল। বাড়তে থাকা সাইবার অপরাধের ক্ষেত্রে ডিজিটাল অ্যারেস্ট একটি অন্যতম অপরাধ মাধ্যম। এই রায়ের ফলে অপরাধীদের কাছে একটি বার্তা পৌঁছোবে।’’

    প্রাক্তন অধ্যাপক এই রায়ে খুশি। তিনি বলেন, ‘‘গত বছর লক্ষ্মীপুজোর পরের দিন থেকে কালীপুজো পর্যন্ত আমাকে মানসিক ভাবে অত্যাচার করা হয়। মুম্বাইয়ের পুলিশ অফিসার বলে পরিচয় দিয়ে ফোন করা হয়েছিল। প্রথমে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে অপরাধের কথা বলে ভয় দেখানো হয়। মুম্বই পুলিশের সাইবার অপরাধ বিভাগের নাম করে ডিজিটাল অ্যারেস্টের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেওয়া শুরু করে ওরা। প্রতি ঘণ্টায় সেলফি তুলে পাঠাতে বাধ্য করা হয়। আট দিন ডিজিটাল অ্যারেস্ট করে রেখেছিল আমাকে। প্রথমে ফিক্সড ডিপোজিট ভেঙে আরটিজিএস করে টাকা পাঠিয়েছিলাম। আমার স্ত্রীকে পর্যন্ত জানাতে দেয়নি। সেই টাকা ফেরত পাব কি না জানি না। তবে এই রায়ে অনেকটা মানসিক শান্তি পেলাম।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)