আত্মসমর্পণ তৃণমূল নেতা বাবলা খুনে অন্যতম অভিযুক্ত বাবলুর
বর্তমান | ১৯ জুলাই ২০২৫
সংবাদদাতা, মালদহ: মালদহের দাপুটে তৃণমূল নেতা বাবলা সরকার খুনে ধরা পড়েছে প্রায় সব চাঁইরাই। কিন্তু পুলিসের মাথাব্যথার একটি কারণ ছিল অন্যতম অভিযুক্ত বাবলু যাদবের পালিয়ে বেড়ানো। তাকে গ্রেপ্তার করার জন্য দু’লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেও লাভ হয়নি। শেষ পর্যন্ত শুক্রবার সকালে পুলিস সহ অনেকেরই চোখ কপালে তুলে দিয়ে মালদহ জেলা আদালতে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারকের (প্রথম কোর্ট) এজলাসে আত্মসমর্পণ করে বাবলা খুনের অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত। পরে বাবলুকে গ্রেপ্তার করে নিজেদের হেফাজতে নেয় ইংলিশবাজার থানার পুলিস। এনিয়ে বাবলা খুনে মোট গ্রেপ্তারির সংখ্যা দাঁড়াল ১০।
মালদহের পুলিস সুপার প্রদীপকুমার যাদব বলেন, বাবলু যাদবকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ছ’দিনের পুলিস হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। পুলিস আধিকারিকরা জানিয়েছেন, আত্মসমর্পণের নির্দিষ্ট কারণ জানার পাশাপাশি খুন নিয়ে তার বক্তব্য বিশদে জানবে পুলিস। অন্যান্য অভিযুক্তদের বয়ানের সঙ্গেও বাবলুর বক্তব্য মিলিয়ে দেখা হবে।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, বাবলা খুনের অন্যতম পান্ডা ছিল ইংলিশবাজার শহরের মহানন্দাপল্লির বাসিন্দা বাবলু। খুনের পরই গা ঢাকা দিয়েছিল সে। তার খোঁজে হন্যে হয়ে পড়েছিল ইংলিশবাজার থানার পুলিসও। শেষ পর্যন্ত সাড়ে ছয় মাস পরে আত্মসমর্পণ করে পুলিসের জালে ধরা পড়ে পারিবারিক সূত্রে এক সময় বিহারের এই বাসিন্দা।
এদিকে বাবলুর আত্মসমর্পণ নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। পুলিসের চোখ এড়িয়ে কীভাবে আদালতে এসে সে আত্মসমর্পণ করল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। পুলিসের তরফে এনিয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। তবে বাবলু ধরা দেওয়ায় তদন্তের শেষ গিঁটও খোলা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন পুলিস আধিকারিকরা।
কিন্তু যে বাবলুর খোঁজ এতদিন ধরে পেল না পুলিস, সে হঠাৎ আত্মসমর্পণ করল কেন? এনিয়ে সরাসরি মন্তব্য এড়ালেও পুলিস মহল থেকে বেশকিছু সূত্র পাওয়া গিয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা পুলিসের এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, পুলিস লাগাতার বাবলুর খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছিল। তাই গ্রেপ্তারি এড়াতে বারবার আত্মগোপনের স্থান বদল করতে হচ্ছিল তাকে। তাতে শেষ পর্যন্ত হাল ছেড়ে দেয় সে।
দ্বিতীয়ত, খুনে অভিযুক্ত এবং তার সঙ্গী বাকিরা ধরা পড়ে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত আর স্নায়ুর চাপ ধরে রাখতে পারেনি সে। তাই হয়তো এই সিদ্ধান্ত। পুলিসের তৃতীয় অনুমান, যেভাবে রাতদিন পুলিসের তাড়া খেয়ে বেড়াতে হচ্ছিল বাবলুকে তাতে তার মনে এই আশঙ্কাও তৈরি হয়ে থাকতে পারে যে এনকাউন্টারের ভয়ও কাজ করতে শুরু করেছিল তার মনে। সেই ভয়ই তার আত্মসমর্পণ করার কারণ হতে পারে।
এদিকে বাবলুর আত্মসমর্পণ ও গ্রেপ্তার নিয়ে বাবলা সরকারের স্ত্রী তথা জেলা তৃণমূলের চেয়ারপার্সন চৈতালি সরকার বলেন, অপরাধী ও ষড়যন্ত্রকারীদের প্রত্যেকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। পুলিস ভালো কাজ করছে। হয়তো পুলিসের ভয়েই শেষ পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করেছে ওই অপরাধী।