• গুগলে ৫৪ লাখের চাকরি জলপাইগুড়ির শ্রেয়ার
    বর্তমান | ১৯ জুলাই ২০২৫
  • ব্রতীন দাস, জলপাইগুড়ি: বাবা আসবাবপত্রের দোকানের সামান্য কর্মচারী। মা গৃহবধূ। খুবই কষ্ট করে পড়াশোনা করেছেন। পারিবারিক অবস্থার কথা ভেবে জলপাইগুড়ি গভর্নমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ তাঁর পড়াশোনার ফি মকুব করে দিয়েছিল। এ বছরই ওই কলেজ থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে গ্র্যাজুয়েট হয়েছেন শ্রেয়া সরকার। জলপাইগুড়ি শহরের অরবিন্দনগরের বাসিন্দা ওই তরুণী। আর তারপরই শুধুমাত্র মেধার জোরে তিনি পেয়ে গেলেন গুগলে সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের চাকরি। বছরে বেতন ৫৪ লক্ষ টাকা! ১৪ জুলাই যোগ দিয়েছেন গুগলের বেঙ্গালুরুর অফিসে। 

    শুক্রবার ফোনে শ্রেয়া বলেন, গুগলে চাকরি পাওয়া আমার কাছে স্বপ্ন ছিল। এর জন্য অনেক পরিশ্রম করেছি। কলেজে পড়তে পড়তে গুগলে ইন্টার্নশিপ করেছি। বারবার ইন্টারভিউ দিয়েছি। অবশেষে গুগল থেকে প্রি-প্লেসমেন্ট অফার লেটার আসতেই আনন্দে চোখের জল ধরে রাখতে পারিনি। তাঁর কথায়, গুগলের সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার পদে চাকরি পেয়েছি। মোটা টাকা বেতন। চাকরি করতে জলপাইগুড়ি থেকে বেঙ্গালুরুতে এসেছি। এটুকু বলতে পারি, নিজের সেরাটা উজাড় করে দিতে চাই। 

    শ্রেয়ার সাফল্যে উচ্ছ্বসিত জলপাইগুড়ি গভর্নমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের কম্পিউটার সায়েন্সের বিভাগীয় প্রধান সুভাষ বর্মন। বলেন, আমাদের কলেজের ছাত্রী হিসেবে ওর জন্য গর্ব তো হচ্ছেই। সবচেয়ে বড় কথা, জলপাইগুড়ি থেকে অতি সাধারণ পরিবারের একটি মেয়ে শুধুমাত্র মেধার জোরে গুগলের মতো সংস্থায় চাকরি পেল। শ্রেয়া আমাদের কলেজের পাশাপাশি জলপাইগুড়িরও মুখ উজ্জ্বল করল। 

    ওই ছাত্রীর বাবা আবির সরকার। শহরের বেগুনটারিতে একটি আসবাবপত্রের দোকানে কাজ করেন। মাসে মাত্র ১০ হাজার টাকা রোজগার। মা শিখা সরকার। শ্রেয়ার একটি বোন আছে। সে নবম শ্রেণির ছাত্রী। খুবই কম টাকা রোজগার হওয়া সত্ত্বেও দুই মেয়ের পড়াশোনায় যাতে ছেদ না পড়ে, সবসময় সেই চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন। বললেন, বড় মেয়ের ছোট থেকেই সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন ছিল। অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে শ্রেয়া। ওর অধ্যাবসায় দেখে আমরা জানতাম, নিশ্চয়ই মেয়ে একটা কিছু করে দেখাবে। ওর এই সাফল্যে আমরা খুবই খুশি। 

    জলপাইগুড়ি শহরের একটি ইংরেজিমাধ্যম স্কুলে পড়াশোনা শ্রেয়ার। উচ্চ মাধ্যমিকের পর জলপাইগুড়ি গভর্নমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তির সুযোগ মেলে। সেখানে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়ার পাশাপাশি গুগলের মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম, গুগল ডেভেলপার স্টুডেন্ট ক্লাব লিড, জেনারেশন গুগল স্কলারশিপ পেরিয়ে শ্রেয়া যখন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী, তখনই তাঁর কাছে গুগলে ১২ সপ্তাহের ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ আসে। ওই সুযোগ হাতছাড়া করেননি তিনি। ইন্টার্নশিপ শেষে স্কলারশিপ হিসেবে মেলে ১ লক্ষ ২৩ হাজার টাকা। কিন্তু ওই ইন্টার্নশিপের আড়ালেই যে লুকিয়ে রয়েছে গুগলের মতো সংস্থায় লোভনীয় চাকরি, তা ভাবতে পারেননি শ্রেয়া। এদিন তিনি ফোনে বলেন, সম্প্রতি গুগলের তরফে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তারপরই ইন্টারভিউ পর্ব পার করতেই হাতে আসে প্রি-প্লেসমেন্ট অফার। বেঙ্গালুরুতে গুগলের অফিসে বসে কাজ করার পরও কেমন যেন সবটা স্বপ্ন মনে হচ্ছে আমার কাছে!  শ্রেয়া সরকার।
  • Link to this news (বর্তমান)